Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
cutmoney

মুখ্যমন্ত্রীর কাটমানি নির্দেশ থেকে গ্রিভান্স সেল, পিছনে কি প্রশান্ত কিশোরের কৌশল?

আপাত ভাবে সেই বিক্ষোভ শাসক দলের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ালেও, নবান্নের শীর্ষ আমলাদের একাংশ মনে করছেন, পরিকল্পিত ভাবেই এই বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। আমলাদের একাংশ ইঙ্গিত দিয়েছেন, নজরুল মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী কাটমানি ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার কয়েক দিন আগেই ১০ জুন নবান্নে তৈরি করা হয়েছিল ‘গ্রিভান্স সেল’ বা অভিযোগ গ্রহণ কেন্দ্র।

ফাইল ছবি।

ফাইল ছবি।

সিজার মন্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৯ ১৮:০২
Share: Save:

কাটমানি ক্যাশব্যাক পলিসি’! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলীয় নেতাদের উদ্দেশে কাটমানি ফেরত দেওয়ার নির্দেশ এখন এই নামেই বেশি জনপ্রিয়। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকেই জেলায় জেলায় শুরু হয়ে গিয়েছে শাসক দলের বিভিন্ন মাপের নেতাকে ঘিরে বিক্ষোভ।

আপাত ভাবে সেই বিক্ষোভ শাসক দলের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ালেও, নবান্নের শীর্ষ আমলাদের একাংশ মনে করছেন, পরিকল্পিত ভাবেই এই বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। আমলাদের একাংশ ইঙ্গিত দিয়েছেন, নজরুল মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী কাটমানি ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার কয়েক দিন আগেই ১০ জুন নবান্নে তৈরি করা হয়েছিল ‘গ্রিভান্স সেল’ বা অভিযোগ গ্রহণ কেন্দ্র। যার মূল উদ্দেশ্য— কন্যাশ্রী, রূপশ্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প নিয়ে কোনও দুর্নীতি হলে যাতে সাধারণ মানুষ সরাসরি ওই সেলে অভিযোগ জানাতে পারেন। এর মাথায় মুখ্যসচিব থাকলেও, শাসক দলের সঙ্গে যুক্ত অবসর প্রাপ্ত কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরীও ওই সেলে রয়েছেন।

নবান্ন সূত্রে খবর, ওই গ্রিভান্স সেলের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে, প্রতি জেলায় জেলাশাসক থেকে শুরু করে মহকুমা শাসক এবং ব্লক উন্নয়ন আধিকারীকদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে— সপ্তাহের একটা দিন অন্তত সাধারণ মানুষের অভাব অভিযোগ শুনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার। খাতায় কলমে না হলেও, অলিখিত ভাবে সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন সোমবারকে ‘গ্রিভান্স ডে’-র তকমা দেওয়া হয়েছে।

নবান্নের আমলাদের একটা বড় অংশই কিন্তু গোটা প্রক্রিয়াতে ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের প্রচ্ছন্ন যোগাযোগ দেখতে পাচ্ছেন। জুন মাসের ছ’তারিখে নবান্নে বৈঠক করেছিলেন প্রশান্ত কিশোর। তার পর থেকেই একের পর এক পদক্ষেপের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমলাদের ইঙ্গিত, এর পিছনে অনেক বড় পরিকল্পনা কাজ করছে।

আরও পড়ুন- খেয়েছেন যারা কাটমানি, দাদারা অথবা দিদিমণি... এ বার গান ধরলেন নচিকেতা​

আরও পড়ুন- কয়েক দফায় ৪২ লাখ টাকা তোলা দিয়েছেন শান্তনু সেনকে, অভিযোগ প্রোমোটারের​

বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং পুরুলিয়ার জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, সেখানে ইতিমধ্যেই কিছু অরাজনৈতিক পেশাদার তরুণ তরুণী একদম তৃণমূল স্তরে নেমে সমীক্ষার কাজ শুরু করে দিয়েছেন— ওই সমস্ত জায়গায় উন্নয়ন সত্ত্বেও মানুষের শাসক দলের প্রতি এত ক্ষোভ কেন, এটা জানতেই এই সমীক্ষা।

প্রশান্ত কিশোর সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানেন?

সূত্রের খবর, দু’দিন আগেই বিহারের ওই বিখ্যাত ভোট কৌশলী বৈঠক করেছেন শাসক দলের একাধিক জয়ী এবং পরাজিত সাংসদ এবং জনপ্রতিনিধির সঙ্গে। সেখানে তিনি জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করেছেন, কোন কোন ইস্যুতে মানুষের ক্ষোভ।

মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে যুক্ত এক আমলার কথায়, সংবাদ মাধ্যমকে সরকার এবং দল ঠিক কী ভাবে ব্যবহার করবে তা নিয়েও পরামর্শ দেবেন প্রশান্ত এবং তাঁর পেশাদার দলবল। এক আমলার কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিকতম টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে সংবাদ মাধ্যম নির্বাচন থেকে শুরু করে তাঁর গোটা সাক্ষাৎকারে সেই পরামর্শর প্রভাব যথেষ্ট প্রতিফলিত।’’

নবান্নের কর্তাদের একটা অংশকে রীতিমত অবাক করেছে রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের মতো শাখায় পাঁচ হাজারের বেশি সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগের সিদ্ধান্ত। এক শীর্ষ পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘আইবি-র মতো জায়গায় যেখানে গোপনীয়তাই সবচেয়ে জরুরি, সেখানে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ কার্যত নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত।” পুলিশ কর্তাদের বড় অংশই স্বীকার করেন যে, সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হয় মূলত শাসক দলের স্থানীয় নেতৃত্বের সুপারিশেই। কিন্তু গোয়েন্দা বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে সিভিক ভলান্টিয়ার কারা হবেন, তা নিয়ে এখনও স্পষ্ট কোনও ইঙ্গিত পাননি গোয়েন্দা কর্তারা।

রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর থেকে যে ভাবে পুলিশ কর্তাদের বদলি করা হয়েছে তা থেকে স্পষ্ট, মুখ্যমন্ত্রী আগের মতো আর পুলিশের উপর ভরসা রাখতে পারছেন না। তেমনই নিশ্চিত হতে পারছেন না রাজ্য প্রশাসনের অন্দরের খবর বাইরে ‘লিক’ হয়ে যাচ্ছে না তা নিয়েও।

এ মাসের শুরু থেকে মুখ্যমন্ত্রীর একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে তাই আমলা এবং পুলিশ কর্তাদের একাংশ বেশ আশঙ্কিত। তাঁরা মনে করছেন, রাজ্যের প্রান্তে প্রান্তে মানুষের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভের বহিপ্রকাশ দেখে ‘রোগ’ নির্ণয় করতে চাইছেন প্রশান্ত এবং তাঁর পেশাদার টিম। আর সেই কারণেই দলীয় নেতৃত্ব এবং প্রশাসনকে এড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে একটি সমান্তরাল ‘খবরের চ্যানেল’ যা সরাসরি পৌঁছবে মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রশান্তের পেশাদার দলের কাছে। সেই ‘অসম্পাদিত গ্রাউন্ড রিপোর্ট’-এর উপর ভিত্তি করেই ভোটের অঙ্ক কষা হবে বলে ধারণা আমলাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

prashant kishore mamata bannerjee cutmoney
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE