Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
NIA

জামাত জঙ্গিকে জেরা করে উদ্ধার প্রচুর আইইডি, হামলার লক্ষ্য এ রাজ্যই, সন্দেহ গোয়েন্দাদের

খাগড়াগড়ে যে হ্যান্ডগ্রেনেড পাওয়া গিয়েছিল, সেগুলি অনেকটাই সকেট বোমার উন্নত সংস্করণ। কিন্তু বেঙ্গালুরুতে পাওয়া গ্রেনেডগুলি আরও উন্নত মানের। এর সঙ্গে মাওবাদীদের তৈরি আইইডির অনেক মিল রয়েছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা। তবে মাওবাদীরা যে কায়দায় ডিটোনেট বা আইইডিকে সক্রিয় করে তার সঙ্গে এর পার্থক্য রয়েছে। হবিবুরকে জেরা করে পাওয়া গ্রেনেডগুলিতে পিন রয়েছে, তার সঙ্গে লাগানো রয়েছে আংটা। অর্থাৎ আংটা চেনে পিনটি খুলে নিলেই সক্রিয় হত আইইডিগুলি।

স্টিলের ক্যান দিয়ে তৈরি হ্যান্ড গ্রেনেড। হবিবুরকে জেরা করে উদ্ধার। — এনআইএ-র সৌজন্যে।

স্টিলের ক্যান দিয়ে তৈরি হ্যান্ড গ্রেনেড। হবিবুরকে জেরা করে উদ্ধার। — এনআইএ-র সৌজন্যে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৯ ১৬:০১
Share: Save:

বেঙ্গালুরু থেকে ধৃত খাগড়াগড় বিস্ফোরণের অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) জঙ্গি হবিবুর রহমানকে জেরা করে হদিশ মিলল ৫টি শক্তিশালী ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি)। সঙ্গে পাওয়া গেল একটি টাইমার ডিভাইস, ইলেক্ট্রিক সার্কিট, বিস্ফোরক এবং দেশীয় কায়দায় রকেট তৈরির যন্ত্রপাতি।

এ সমস্ত জিনিসই উদ্ধার হয়েছে বেঙ্গালুরুর উত্তরে সোলাদেবেনাহাল্লি থানা এলাকার একটি বাড়ি থেকে। বীরভূমের বাসিন্দা হবিবুরকে জেরা করে গোয়েন্দাদের আশঙ্কা এ রাজ্যেই বড়সড় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সালাউদ্দিন সালেহিনের নেতৃত্বাধীন জেএমবির-র নয়া সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন হিন্দ। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র এক গোয়েন্দা ইঙ্গিত দেন, এ রাজ্যের কয়েকটি ধর্মীয় স্থানে হামলার পরিকল্পনা করছিল হবিবুর। তার ভূমিকা ছিল, হামলায় প্রয়োজনীয় আইইডি এবং অন্যান্য জিনিস তৈরি করে মজুত রাখা। ধুলিয়ান এবং মালদহ মডিউলের বাকি সদস্যরা সেই হামলার জিনিসপত্র নিয়ে গিয়ে অপারেশন করত।

হবিবুরকে গ্রেফতার করার পরেই তাকে জেরা করে আরও দু’টি আইইডি-র হদিশ পেয়েছিলেন গোয়েন্দারা। হবিবুরের ডেরা থেকে কিছু দূরে রেললাইনের ধারে একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, স্টিলের লম্বা ক্যানকে আইইডি-র কন্টেনার হিসাবে ব্যবহার করে হবিবুর শক্তিশালী হ্যান্ড গ্রেনেড তৈরি করেছিল। ওই হ্যান্ড গ্রেনেডের নির্মাণ কৌশল খাগড়াগড়ে পাওয়া হ্যান্ড গ্রেনেডের থেকে আলাদা। খাগড়াগড়ে যে হ্যান্ডগ্রেনেড পাওয়া গিয়েছিল, সেগুলি অনেকটাই সকেট বোমার উন্নত সংস্করণ। কিন্তু বেঙ্গালুরুতে পাওয়া গ্রেনেডগুলি আরও উন্নত মানের। এর সঙ্গে মাওবাদীদের তৈরি আইইডির অনেক মিল রয়েছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা। তবে মাওবাদীরা যে কায়দায় ডিটোনেট বা আইইডিকে সক্রিয় করে তার সঙ্গে এর পার্থক্য রয়েছে। হবিবুরকে জেরা করে পাওয়া গ্রেনেডগুলিতে পিন রয়েছে, তার সঙ্গে লাগানো রয়েছে আংটা। অর্থাৎ আংটা চেনে পিনটি খুলে নিলেই সক্রিয় হত আইইডিগুলি।

আরও পড়ুন: ‘সম্পর্ক’ চায় না বোন! রাগে গলা টিপে খুন করল তুতো দাদা

আরও পড়ুন: ছুটির হোমওয়ার্ক দেখতে চেয়ে একাদশ শ্রেণির ছাত্রের হাতে ছুরিকাহত শিক্ষিকা!

এ ছাড়াও পাওয়া গিয়েছে আরপিজি বা রকেট প্রপেলড গান তৈরির সরঞ্জাম। এর আগে খাগড়গড় বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় হাতকাটা নাসিরুল্লার ডেরা বোরখা ঘরে হানা দিয়ে গোয়েন্দারা দেশীয় পদ্ধতিতে রকেট তৈরির নকশা এবং সরঞ্জাম পেয়েছিলেন। সেই নকশাকে আরও উন্নত করা হয়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।

উদ্ধার হওয়া গ্রেনেড, টাইমার ডিভাইস। হদিশ এয়ার পিস্তলের। — নিজস্ব চিত্র।

গোয়েন্দাদের ইঙ্গিত, ধৃত হবিবুর জেরায় এখনও তাদের হামলার লক্ষ্য সম্পর্কে স্পষ্ট করে কোনও তথ্য দেয়নি। তবে সে জেরার মুখে বারে বারে এ রাজ্যে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু ঘটনা এবং রাজনৈতিক সমীকরণ বদলের কথা বলেছে। তাকে জেরা করে আল কায়দার বাংলা ভাষায় প্রচারের কিছু নমুনা পাওয়া গিয়েছে। সেই সমস্ত দেখে গোয়েন্দাদের সন্দেহ, এ রাজ্যে কোনও ধর্মীয়স্থানে হামলা করে জামাতুল মুজাহিদিন হিন্দকে সামনে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

অন্য দিকে, গোয়েন্দাদের দাবি, বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত জামাতুল মুজাহিদিন হিন্দের ধুলিয়ান মডিউলের অধিকাংশ সদস্যই গ্রেফতার হয়েছে কলকাতা পুলিশের এসটিএফের হাতে। তা হলে নতুন হামলা কাদের দিয়ে করানোর পরিকল্পনা করেছিল হবিবুর? সে ক্ষেত্রে তাঁদের সন্দেহ, ধুলিয়ান মডিউল প্রকাশ্যে চলে আসায় নতুন একটি মডিউল তৈরি করেছে সালাউদ্দিন। সেই মডিউলের সদস্য কারা সেটাই জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE