বিদ্বেষ রুখতে পুলিশকে কড়া হাতে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যে বিদ্বেষ রুখতে পুলিশের সর্ব স্তরকে কড়া হতে নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশকে নির্দেশ দিচ্ছি, একেবারে আইসি স্তর থেকে ডিজি পর্যন্ত, সব কিছু দেখেও চুপচাপ থাকা যাবে না। এ সব বরদাস্ত করা হবে না। পুলিশকে কড়া হাতে ব্যবস্থা নিতে বলছি। প্রশাসনের পাশাপাশি সব শুভবুদ্ধিসম্পন্ন দলগুলিকেও নজর রাখতে অনুরোধ করব।’’ বাংলার সম্প্রীতির কথাও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
পুলওয়ামার জঙ্গি হানার পর থেকে কাশ্মীরিদের উদ্দেশে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। অভিযোগ, যাঁরা তার প্রতিবাদ করছেন বা বিরুদ্ধ মত প্রকাশ করছেন, তাঁদের বাড়িতে চড়াও হয়ে হামলা করছেন এক দল উগ্র ‘দেশপ্রেমিক’। সোশ্যাল মিডিয়ায় খুন, ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, ছড়ানো হচ্ছে নানান গুজব। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিদ্বেষমূলক প্রচার, গুজব ছড়ানো রুখতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি।’’
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘অনেক জায়গায় জাতীয় পতাকা নিয়ে বেরিয়ে অনেকে ভারতমাতা কি জয় বলছে। অনেককে দেশপ্রেমী নও বলে হেনস্থা করা হচ্ছে। অনেকের বাড়িতে ঢুকে হুমকি দিচ্ছে, আতঙ্ক তৈরি করছে। বেহালা, বনগাঁয় এমন ঘটেছে।’’ এই ধরনের ঘটনার পিছনে বিজেপি রয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘‘আরএসএস প্রচারকেরা বহিরাগত। বিজেপি, আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নানান গুজব ছড়াচ্ছে। উত্তেজনা তৈরি করতে চাইছে। এই সুযোগে ওরা হিন্দু-মুসলমান, শিখ-খ্রিস্টানের মধ্যে দাঙ্গা বাধাতে চাইছে।’’ তাঁর আর্জি, ‘‘প্ররোচনায় পা দেবেন না। শান্তি বজায় রাখুন।’’
কলকাতা-সহ রাজ্যের অনেক জায়গায় বিদ্বেষ রুখতে পুলিশ সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে। বেশ কিছু ফেসবুক প্রোফাইলকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। তাদের কয়েকটিকে বন্ধও করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের প্রতিনিধির করমর্দন ফিরিয়ে শুধুই নমস্কার, বার্তা দিল দিল্লি
ভারতে জঙ্গি হামলা নিয়ে এই বিষয়গুলো জানেন?
ভিন্ন ছবিও মিলেছে। নিমতা, হাবরায় আক্রান্তকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বনগাঁয় চিত্রদীপ সোম নামে এক জনের বাড়িতে ভাঙচুর হয়েছে। ওই তিন ঘটনায় কাউকেই গ্রেফতার করেনি পুলিশ।
দেশ জুড়ে বিদ্বেষের আবহে রাজ্য প্রশাসন কেন সক্রিয় হচ্ছে না, সেই প্রশ্নও উঠেছিল। মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের নির্দেশ সেই সংশয়ের অবসান ঘটাল বলে মনে করছেন অনেকেই।
এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মাও পরে বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনায় কড়া ব্যবস্থা নেব। সব জেলার এসপি, আইসি এবং কমিশনারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ এই ধরনের হাঙ্গামার খবর পেলেই স্থানীয় থানা কিংবা ‘১০০’ নম্বরে ডায়াল করে জানাতে বলেছেন তিনি। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, আক্রান্তদের পুলিশি নিরাপত্তাও দেওয়া হবে।
রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিভিন্ন ঘটনার ভিডিয়ো জোগাড় করেছি। কয়েক জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁদের গ্রেফতারও করা হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যাঁরা বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন তাঁদের প্রোফাইল ধরে-ধরে চিহ্নিত করা হচ্ছে।’’
সক্রিয়তার নজির রেখে তিলজলা থানা এক কাশ্মীরি চিকিৎসককে নিরাপত্তা দিয়েছে। পুলিশের ভূমিকায় খুশি ওই চিকিৎসক। লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘সব থানাকে সতর্ক করা হয়েছে। কোনও রকম অবাঞ্ছিত ঘটনা যাতে না-হয় তা নিশ্চিত করতে বলেছি।’’
প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে নিমতা ও হাবরায় দু’জন আক্রান্তকে গ্রেফতার করা হল কেন? ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তাদের দাবি, ওই ঘটনায় নির্দিষ্ট অভিযোগ জমা পড়েছিল বলেই গ্রেফতার করা হয়েছে। কিশোরীর পরিবারের তরফে পাল্টা কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।
উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, ‘‘হাবরা ও বনগাঁয় গোলমালের খবর পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ গিয়েছিল। ফলে ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। হাবরায় হামলা নিয়ে আক্রান্ত বা তাঁর পরিবার কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি।’’ সূত্রের খবর, বনগাঁয় বাড়িতে হামলা নিয়ে আক্রান্ত চিত্রদীপ সোম পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন। কোচবিহারে এক যুবককে নিগ্রহের ঘটনায় পুলিশ গিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে বলে দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy