Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Social Distancing

প্রথম দিনেই দূরত্ব-বিধি শিকেয়, বাড়াতে হল ট্রেন

খড়্গপুর ডিভিশনের অধিকাংশ স্টেশনে সকালে যাত্রীদের থার্মাল স্ক্যানিং ও জীবাণুমুক্তির কাজ হয়নি।

নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২০ ০৪:৪৩
Share: Save:

প্রায় আট মাস পরে ফের শোনা গেল যাত্রিবাহী লোকাল ট্রেনের ভোঁ! আগের মতো বাদুড়ঝোলা ভিড় বুধবার চোখে পড়েনি। তবে বহু ক্ষেত্রেই দূরত্ব-বিধি শিকেয় তুলে যাতায়াত করতে দেখা গিয়েছে লোকজনকে। যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় হাওড়া ডিভিশনে নির্ধারিত ২০২টি ট্রেনের পরিবর্তে সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৫০টিরও বেশি ট্রেন চালানো হয়েছে বলে রেল সূত্রের খবর। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বুধবার নবান্ন থেকে রেলকে আরও বেশি ট্রেন চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন একদা রেলমন্ত্রী ও বর্তমানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এ দিন রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, “অতিমারির কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল বলে সাধারণ মানুষ যাতায়াত করতে পারেননি। তাঁদের রোজগার মার খেয়েছে। রেলকে আবারও বলব, বেশি করে ট্রেন চালান। যাতে গাদাগাদি করে মানুষ ট্রেনে না ওঠেন। জীবাণুনাশের কাজটাও যেন ভাল ভাবে হয়। সবাই মাস্ক পরে ট্রেনে উঠুন।” সূত্রের খবর, আজ, বৃহস্পতিবার রেলের সঙ্গে রাজ্যের বৈঠক রয়েছে। সেখানে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ভবিষ্যতের রূপরেখা স্থির হবে। রাজ্যের তরফে ট্রেনের সংখ্যা, কামরার সংখ্যা এবং বুকিং কাউন্টারের সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে।

এ দিন সকালে শিয়ালদহ ডিভিশনের ক্যানিং, ডায়মন্ড হারবার, সোনারপুর শাখায় যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়েছে। করোনা পরিস্থিতির নিরিখে বনগাঁ, গেদে, বারাসত বা হাসনাবাদ শাখায় যথেষ্ট ভিড় ছিল। তবে তা প্রাক্-করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনীয় নয়। তুলনায় ভিড় কম ছিল দক্ষিণ-পূর্ব রেলে। গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোতে রেল পুলিশ, আরপিএফ, সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিভিন্ন স্টেশনে ভিড় নিয়ন্ত্রণ, থার্মাল স্ক্যানিং বা মাইকে প্রচার করতে দেখা গিয়েছে।

আরও পডুন: ‘ক্যানসার তো কী? তিন জনের আসনে চার জন চেপে বসুন!’

পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের ডিআরএম শীলেন্দ্রপ্রতাপ সিংহ জানান, আগামী দু’-এক দিনের মধ্যে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। রেলের খবর, এ দিন হাওড়া এবং শিয়ালদহ ডিভিশনে ব্যস্ত সময়ে ৮৪ শতাংশ ট্রেন চালানো হয়। দু’-এক দিনের মধ্যে তা ৯৫ শতাংশ হতে পারে। এ দিন সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রায় ৭ লক্ষ যাত্রী পূর্ব রেলে যাতায়াত করেছেন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলে খড়্গপুর ডিভিশনে প্রায় ১৭ হাজার ৬০০টি টিকিট বিক্রি হয়েছে।

যাত্রীদের সচেতনতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বহু জায়গায় দূরত্ব-বিধি অগ্রাহ্য করেই যাত্রীরা বসেছেন। শিয়ালদহমুখী বনগাঁ লোকালে কার্যত মারপিট করেও উঠতে পারেননি অনেকে। হাওড়ায় যাত্রীদের হুড়োহুড়ি দেখে আরপিএফ জওয়ানদের বলতে শোনা যায়, ‘‘প্রথম দিনে এই অবস্থা হলে করোনা ঠেকায় কার সাধ্য?’’

ভোরের রানাঘাট লোকালে ক্যানসার আক্রান্ত স্ত্রীকে নিয়ে কলকাতায় ডাক্তার দেখাতে আসছিলেন সত্যনারায়ণ পণ্ডিত। টিকিট কাউন্টারে এসে দেখেন, একে অন্যের প্রায় ঘাড়ে উঠে টিকিট কাটছেন। নৈহাটির পরে গা ঘেঁষাঘেষি ভিড়ে অনেকেই মাস্ক খুলে রেখেছিলেন! ভোর ৩টে নাগাদ হাওড়ামুখী প্রথম লোকাল বর্ধমান ছাড়ার সময় থার্মাল গানের পরীক্ষা হয়েছিল। মাস্ক না-পরায় কয়েক জনকে ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। সকালে মেমারি স্টেশনের পর থেকে সব আসন ভর্তি। হুগলির বিভিন্ন স্টেশনেও কড়াকড়ি দেখা গিয়েছে। বহরমপুর স্টেশনেও ছিল কড়া নজরদারি। প্রতিটি ট্রেন চলে যাওয়ার পরে স্টেশন চত্বর জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে।

খড়্গপুর ডিভিশনের অধিকাংশ স্টেশনে সকালে যাত্রীদের থার্মাল স্ক্যানিং ও জীবাণুমুক্তির কাজ হয়নি। বেলা বাড়লে শুধু থার্মাল স্ক্যানিং করেই দায় সেরেছে রেল। উলুবেড়িয়া, ফুলেশ্বর, বাউড়িয়ার মতো বহু স্টেশনে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে লোকজনকে। খড়্গপুরের ডিআরএম মনোরঞ্জন প্রধানকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “সিনিয়র ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।” সিনিয়র ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার আদিত্য চৌধুরী ফোন ধরেননি। আদ্রা ডিভিশনে লোকাল, এক্সপ্রেস ট্রেন চালানোর দাবিতে বিষ্ণুপুর স্টেশনে বিক্ষোভ দেখান গাড়িচালক ও ব্যবসায়ীরা। বাঁকুড়া স্টেশনে তৃণমূল।

ট্রেন চালু হওয়ায় প্রায় আট মাস পরে কাজে যোগ দিতে পেরেছেন বসিরহাট, বামনগাছি, দত্তপুকুর থেকে শহরে আসা পরিচারিকারা। তবে ট্রেনে হকারদের ওঠা নিষিদ্ধ। দুপুরে বর্ধমান স্টেশনের বাইরে এ নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় আইএনটিটিইউসি। পূর্ব রেলের এক কর্তা বলেন, ‘‘ট্রেনে আপাতত হকারদের উঠতে দেওয়া হবে না। প্ল্যাটফর্মের দোকানও খুলতে দেওয়া হবে না। তবে রেলের অনুমোদিত বিক্রেতারা ছাড়া সব হকারই অবৈধ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE