Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আত্মহত্যাই! বলতে জরুরি ভিসেরা রিপোর্টও

আত্মহত্যাই করেছেন পুরুলিয়ার বলরামপুরের বিজেপি কর্মী দুলাল কুমার। রবিবার ময়না-তদন্তের রিপোর্ট দেখিয়ে একই কথা বলেছেন নতুন পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া।

ডাভা গ্রামে বিজেপি কর্মী দুলাল কুমারের ঝুলন্ত দেহ। ফাইল চিত্র।

ডাভা গ্রামে বিজেপি কর্মী দুলাল কুমারের ঝুলন্ত দেহ। ফাইল চিত্র।

সোমা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৮ ০৩:৪৫
Share: Save:

ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার আগে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস দাবি করেছিলেন, আত্মহত্যাই করেছেন পুরুলিয়ার বলরামপুরের বিজেপি কর্মী দুলাল কুমার। রবিবার ময়না-তদন্তের রিপোর্ট দেখিয়ে একই কথা বলেছেন নতুন পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া। তা শুনে রাজ্যের ফরেন্সিক চিকিৎসকদের বড় অংশের প্রশ্ন, ভিসেরা রিপোর্ট আসার আগে এত নিঃসংশয় হয়ে আত্মহত্যা বলা হল কী ভাবে?

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ঝুলন্ত অবস্থায় মৃতদেহ উদ্ধার হলে সাধারণ ভাবে আত্মহত্যাই মনে করা হয়। তবে তা নিশ্চিত করার জন্য ভিসেরা রিপোর্ট হাতে আসা খুবই জরুরি। রাজ্যের এক মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক বিভাগের প্রধান চিকিৎসক বলেন, ‘‘মৃতের শরীরে ‘ডিফেন্স উন্ড’ রয়েছে কি না, তা যাচাই করা দরকার। অর্থাৎ যদি কেউ মেরে ঝুলিয়ে দিয়ে থাকে, সেই ব্যক্তি নিজেকে বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা করবেন। ধস্তাধস্তির চিহ্ন থাকবে। যদি ওই ব্যক্তিকে কেউ নেশার ওষুধ বা মদ খাইয়ে অচৈতন্য করে মেরে ঝুলিয়ে দিয়ে থাকে, সেই চিহ্ন থাকবে না। কিন্তু ওষুধ বা মাদকের প্রভাব ছিল কি না, বোঝার জন্য ভিসেরা রিপোর্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করা দরকার। তা আসতে সময় লাগে। আর তার আগে নিশ্চিত ভাবে আত্মহত্যা বলা যায় না।’’

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, তাঁদের বইয়ে লেখা থাকে, ‘হ্যাংগিং ইজ অলওয়েজ সুইসাইডাল আনলেস প্রুভড আদারওয়াইস’ অর্থাৎ অন্য কিছু প্রমাণ না হলে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলন্ত দেহ মিললে তা আত্মহত্যা বলেই ধরে নেওয়া হয়। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘‘এই অন্য কিছুটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ ক্ষেত্রে সামান্য অসতর্ক হলেই রিপোর্ট ভুল হতে পারে। তার জেরে ভুল হতে পারে বহু সিদ্ধান্ত।’’

আরও পড়ুন: বিজেপির নিশানায় অভিষেক, পাল্টা চ্যালেঞ্জ তৃণমূলেরও

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, দেহ উদ্ধারের পরে খুন না আত্মহত্যা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে ১৭-১৮টি বিষয় মিলিয়ে দেখতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে স্থির সিদ্ধান্তে (কনক্লুসিভ) পৌঁছনো যায়। আবার জলে ডোবা, পোড়া, উপর থেকে নীচে পড়ে মৃত্যুর ক্ষেত্রে নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছনো (‘ইনকনক্লুসিভ’) বহু সময়েই সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে ওই বিষয়গুলি দেখা হয়েছে কি না, তা জানতে আগ্রহী তাঁরা।

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে ‘ডিফেন্স উন্ড’ এবং ‘হেজ়িটেশন উন্ড’-এর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খুন করলে সাধারণ ভাবে ডিফেন্স উন্ড থাকে। আত্মহত্যার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কিছু দ্বিধা থাকায় এলোমেলো চেষ্টা (হেজ়িটেশন উন্ড) নজরে আসে। যেমন, কেউ হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যা করলে প্রথমে দু’একবার এলোমেলো চেষ্টা করে, থাকে অগভীর ক্ষত।

কিন্তু ঝুলন্ত অবস্থায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে এই দ্বিধার জায়গা কম বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। সাধারণ ভাবে ঝুলন্ত অবস্থায় মৃত্যু ঘটলে তার কারণ নিশ্চিত করতে গলায় ফাঁসের কতটা চাপ পড়েছে, পা মাটি স্পর্শ করেছে কি না, মুখ দিয়ে ফেনা বেরিয়েছে কি না, শরীরে অন্য আঘাত যেমন আঁচড়ের চিহ্ন ইত্যাদি রয়েছে কি না দেখা হয়। দেখা হয় অন্যান্য অঙ্গের অবস্থাও। পা কী ভাবে ঝুলে রয়েছে, পায়ের পাতা ভেঙে গিয়েছে কি না, সে সব দেখেও বোঝা যায়, খুন না আত্মহত্যা। তবে যেখানে অভিযোগ, সন্দেহের জায়গা থাকে, সেখানে ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার আগে কোনও ভাবেই ‘শেষ কথা’ বলা যায় না বলেই মত চিকিৎসক মহলের একাংশের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE