Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Durgapur

স্থানীয়দের ‘আপত্তি’তে কোভিড পজিটিভ বৃদ্ধের দেহ পড়ে রইল ১১ ঘণ্টা

গত রবিবার ওই পরিবারটির সব সদস্যের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২০ ০৪:৫৩
Share: Save:

বড় ছেলে এবং পুত্রবধূ কোভিড-হাসপাতালে ভর্তি। এই পরিস্থিতিতে ‘চেয়েও’ মেলেনি চিকিৎসা। কার্যত ‘বিনা চিকিৎসায়’ মারা গিয়েছেন অশীতিপর বৃদ্ধ— শুক্রবার পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর-ফরিদপুর এলাকার বাসিন্দা ওই বৃদ্ধের ছোট ছেলে সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে এমনই অভিযোগ করেছেন। এর পরে স্থানীয় কিছু লোকের ‘আপত্তিতে’ মৃতদেহ প্রায় ১১ ঘণ্টা বাড়িতেই পড়েছিল। এ দিন বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ ‘কোভিড-পজ়িটিভ’ বৃদ্ধের দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করে প্রশাসন।

বৃদ্ধের পরিবার ১০ জনের। তাঁর বড় ছেলে এবং তাঁর স্ত্রী গত সপ্তাহের শুক্রবার থেকে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে কাঁকসার কোভিড-হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বৃদ্ধের ছোট ছেলে দাবি করেন, গত সোমবার থেকে তাঁর ৮২ বছরের বাবার জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে গত বুধবার প্রশাসনকে জানাই। প্রশাসন থেকে ব্যাপারটা দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু লাভ হল না। পড়শিরা স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্কের কারণে এগিয়ে আসেননি। প্রায় বিনা চিকিৎসায় বাবা শুক্রবার সকালে সাড়ে ৬টায় মারা যান।’’ তবে প্রশাসনের কোন স্তরে, কী ভাবে সাহায্য চেয়েছিলেন, তা তিনি ভেঙে বলেননি। জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্স তৈরি আছে। দরকার পড়লেই পাঠানো হচ্ছে। ওই ব্যক্তি কোথায় সমস্যার কথা জানিয়েছেন সেটা নির্দিষ্ট করে না জানাতে পারলে, কী ঘটেছে বলা মুশকিল।’’

গত রবিবার ওই পরিবারটির সব সদস্যের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। এ দিন কোভিড-রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত বৃদ্ধের দেহ নিয়ে যেতে দেওয়া হবে না বলে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে দাবি করেন এলাকাবাসীর একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, যদি করোনা সংক্রমণে বৃদ্ধের মৃত্যু হয়ে থাকে, উপযুক্ত ব্যবস্থা ছাড়া, তাঁর দেহ সৎকারে নিয়ে যাওয়া হলে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকবে। রিপোর্ট পেতে কেন দেরি হচ্ছে, দুর্গাপুর পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) রাখি তিওয়ারির কাছে এ প্রশ্নও তোলেন কিছু স্থানীয় বাসিন্দা। রাখিদেবী জানান, মৃতের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট ‘কোভিড পজ়িটিভ’ এসেছে। এলাকা জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। রিপোর্ট দেরিতে আসার অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলাশাসক বলেন, ‘‘রিপোর্ট পেতে নির্দিষ্ট কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে। এ দিন খবর পাওয়ার পরেই দ্রুত পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’

আরও পড়ুন: সংক্রমিতদের নাম ছড়াচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপে, উঠছে প্রশ্ন

দুর্গাপুর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার ইন্দ্রজিৎ মাজি বলেন, ‘‘কোভিড পজ়িটিভ বা কোভিড সাসপেক্ট—দু’ক্ষেত্রেই মৃতের সরকারি বিধি মেনে সৎকার হয়। দেহ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সৎকার করা উচিত। তা হলে এলাকা জীবাণুমুক্ত করা-সহ পরবর্তী পদক্ষেপগুলি দ্রুত করা সম্ভব। দেহ আটকে রাখলে সব দিক দিয়েই ক্ষতি। মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে।’’ রাখিদেবী বলেন, ‘‘এ দিন যা হয়েছে, তা মানবিক হয়নি। সবার বিষয়টি ভাবা উচিত।’’

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে সর্বোচ্চ সংক্রমণ, ফের মৃত্যু ডাক্তারের

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE