Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Job

রাজ্যে কৃতীদের কাজের অভাব হবে না: মমতা

মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, জয়েন্ট এন্ট্রান্স, হাইমাদ্রাসা-সহ বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতীদের সোমবার ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দিল রাজ্য সরকার।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি পিটিআই।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২০ ০৪:০৫
Share: Save:

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কৃতী ছাত্রছাত্রীদের কাজের আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে কৃতীদের কর্মসংস্থানের অভাব হবে না। আমি তো ট্যালেন্টেড ছেলেমেয়ে খুঁজে বেড়াই। প্রতি বছর অন্তত ৫০০ জন ছেলেমেয়ে নিতে চাই, যারা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, থেকে পাশ করে আমাদের সরকারের সঙ্গে কাজে করবে।’’ তিনি জানান, দু’-তিন বছর ইন্টার্নশিপ করলে চাকরি পাকা হবে।

মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, জয়েন্ট এন্ট্রান্স, হাইমাদ্রাসা-সহ বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতীদের সোমবার ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দিল রাজ্য সরকার। শিক্ষামন্ত্রী ও আধিকারিকদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নবান্ন সভাঘরে। সেখান থেকেই পড়ুয়াদের আশ্বাসে, আপ্যায়নে ভরিয়ে দিলেন মমতা। কোনও পড়ুয়াকে বললেন, ‘‘তোমার গলাটা খুব মিষ্টি। তুমি গান গাও?’’ কাউকে পরামর্শ দিলেন ‘‘ডেটা সায়েন্স নিয়ে পড়ো।’’ কাউকে বলেন, ‘‘আইপিএস বা আইএএস হও।’’ এক পড়ুয়ার মহাকাশবিজ্ঞানী হওয়ার ইচ্ছে শুনে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে দুই পড়ুয়ার বাবা-মায়ের বদলির আবেদনও দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন মমতা।

কৃতীরা ছিলেন নিজেদের জেলায়। সেখানেই প্রশাসনের তরফে শংসাপত্র ও উপহার দেওয়া হয় তাঁদের হাতে। কৃতীদের সঙ্গে কথোপকথনে অন্য মেজাজে পাওয়া গেল মুখ্যমন্ত্রীকে। মন দিয়ে শুনলেন সকলের কথা। উচ্চ মাধ্যমিকে দশম, পশ্চিম মেদিনীপুরের শমিতা সামন্ত মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, তাঁর বাবা পুলিশকর্মী, পুরুলিয়ায় আছেন। তাই তাঁর পড়াশোনার বিষয়ে বাবা কিছুই দেখতে পারেন না। বাবাকে যেন পুরুলিয়া থেকে বাড়ির কাছে বদলির বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী দেখেন। মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত আধিকারিকদের বিষয়টি দেখতে বললেন। পূর্ব মেদিনীপুরের প্রমিতা সামন্ত উচ্চ মাধ্যমিকে অষ্টম হয়েছেন। প্রমিতা মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, তাঁর মায়ের স্কুল পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে। তাঁকে রোজ পাঁচ ঘণ্টা বাসে যাতায়াত করতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষামন্ত্রীকে জানান, প্রমিতার মায়ের বদলির বিষয়টি যেন আগে দেখা হয়।

আরও পড়ুন: নারদ-তদন্ত শেষ, অনুমতি না থাকায় পেশ হচ্ছে না চার্জশিট

উচ্চ মাধ্যমিকে নবম ঈশিতা ত্রিপাঠী জানান, তাঁর বাবা পুরোহিত। সেই রোজগার থেকেই তিনি মেয়েকে এত দূর পড়িয়েছেন। কিন্তু ভবিষ্যতের পড়াশোনার জন্য ঈশিতার দরকার স্কলারশিপ। মুখ্যমন্ত্রী তখনই নির্দেশ দিলেন, ঈশিতা যেন তাড়াতাড়ি স্কলারশিপ পান। হাইমাদ্রাসা পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থানাধিকারিণী তমান্না ইয়াসমিন জানান, তিনি স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হতে চান। তাঁকে উচ্ছ্বসিত উৎসাহ দিলেন মমতা। আরও বেশ কয়েক জন পড়ুয়ার ডাক্তার হওয়ার সঙ্কল্পের কথা শুনে তিনি জানান, রাজ্যে আরও অনেক ডাক্তার দরকার। বিশেষ করে খুবই প্রয়োজন স্নায়ুরোগ আর হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞের।

আরও পড়ুন: গোর্খাল্যান্ড শুধরে জিটিএ, বৈঠকে নতুন বিজ্ঞপ্তি

গণিত বা রসায়ন নিয়ে গবেষণার ইচ্ছা প্রকাশ করল মাধ্যমিকে প্রথম স্থানাধিকারী অরিত্র পাল। মুখ্যমন্ত্রী জানান, এখন ছোঁয়াচে রোগ নিয়ে গবেষণার খুব প্রয়োজন। প্রায় কেরিয়ার কাউন্সেলরের ভূমিকা নিয়ে তিনি পরামর্শ দিলেন, ‘‘ডেটা সায়েন্স পড়ো। আইএএস বা আইপিএস হও। ইঞ্জিনিয়ার হও।’’ উচ্চ মাধ্যমিকে অন্যতম প্রথম ঐক্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামটির খুব প্রশংসা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। ঐক্য জানান, বিজ্ঞান-সাধনাই তাঁর লক্ষ্য। মাধ্যমিকে অষ্টম, মালদহের নাজনিন আজাদ জানায়, মহাকাশবিজ্ঞানী হতে চায় সে। উচ্ছ্বসিত মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাহ্‌, খুব ভাল! কল্পনা চাওলা হতে চায়।’’ মাধ্যমিকে ষষ্ঠ, শিলিগুড়ির রিঙ্কিনি ঘটকের কাছে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চাইলেন, সে গান শেখে কি না। রিঙ্কিনি জানায়, সে অল্প অল্প গান গায়। মমতা বলেন, ‘‘গান গাও। ভাল গলা। মিষ্টি গলা।’’

রিঙ্কিনির স্কলারশিপ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আধিকারিকদের নির্দেশ দেন, প্রত্যেকে যাতে দ্রুত স্কলারশিপ পান, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। কোনও পরিস্থিতিতেই যেন ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় কোনও অসুবিধা না-হয়। কারও পারিবারিক অসুবিধা থাকতে পারে, কারও বই কেনার ক্ষমতা না-ও থাকতে পারে। তাঁদের বই কিনে দিতে হবে। সমস্যা মেটাতে হবে। সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক যেন এ দিনই তাঁদের আবেদন গ্রহণ করেন। ‘‘শিক্ষা দফতর যেন এগুলো দেখে। যদি মনে হয় যে, নিয়মের মধ্যে থেকে সাহায্য করা যাচ্ছে না, সে-ক্ষেত্রে বিষয়টিকে যেন বিশেষ কেস হিসেবে দেখা হয়,’’ বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর আশ্বাস, মুখ্যমন্ত্রীর ‘গ্রিভান্স সেল’ আছে। সেখান থেকেও সাহায্য করা হবে।

পড়ুয়াদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মানবিক মানুষ হও।’’ করোনা পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের সতর্ক থাকতে এবং অন্যদের সতর্ক রাখতে বলেন তিনি। অনেক পড়ুয়ার আক্ষেপ, সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হল, কিন্তু তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে সামনাসামনি দেখতে পেলেন না। মুখ্যমন্ত্রীও এই নিয়ে আক্ষেপ করেন। জানিয়ে দেন, করোনা পরিস্থিতি কেটে গেলে তিনি আবার এই কৃতীদের ডাকবেন। সেই সঙ্গে মমতা জানান, এই ধরনের অনুষ্ঠানে অনেকেই তাঁর কাছে অটোগ্রাফ চান। তাই তাঁর স্বাক্ষর-সহ একটি ডায়েরি যেন কৃতীদের দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Job West Bengal Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE