Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

স্ত্রীর সামনে স্বামীকে টেনে নিয়ে গেল বাঘ

সুন্দরবনের জি-প্লটের প্রান্তিক আদিবাসী পরিবারগুলির কাছে না আছে জমি, না আছে স্থায়ী উপার্জনের রাস্তা। শক্ত-সমর্থ, জোয়ান পুরুষ ও মহিলারা ঠিকাদারের নৌকা চেপে চলে যান ব্যাঘ্র প্রকল্পের একেবারে ভিতরে, বাঘের ডেরায়।

 বাসুদেব ভুঁইয়ার মা। নিজস্ব চিত্র

বাসুদেব ভুঁইয়ার মা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৪৭
Share: Save:

বাঘে নিয়ে গিয়েছে বাসুদেবকে। বিধবা মা, স্ত্রী সরস্বতী, ৮ বছরের মেয়ে ও তিন ছোট ছোট ছেলের সংসারে ৩২ বছরের বাসুদেব ভুঁইয়া ও সরস্বতীই ছিলেন উপার্জনক্ষম। এ বার ৮ বছরের মেয়ে রোতনিকেও যেতে হবে কাঁকড়া আর গেঁড়ি-গুগলি কুড়োতে।

সুন্দরবনের জি-প্লটের প্রান্তিক আদিবাসী পরিবারগুলির কাছে না আছে জমি, না আছে স্থায়ী উপার্জনের রাস্তা। শক্ত-সমর্থ, জোয়ান পুরুষ ও মহিলারা ঠিকাদারের নৌকা চেপে চলে যান ব্যাঘ্র প্রকল্পের একেবারে ভিতরে, বাঘের ডেরায়। জীবন বাজি রেখে চলে কাঁকড়া তোলা। জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ। আর আছে বন দফতরের ভয়।

বাসুদেব যে গ্রামে থাকতেন, সেই সত্যদাসপুর থেকে নৌকায় প্রায় আড়াই তিন ঘণ্টা জল ভেঙে, নৌকায় গিয়েছিলেন বাঘের ডেরায়। মধু তোলা এখন বন্ধ। সেটা ভাল হয় ফেব্রুয়ারি, মার্চ-এপ্রিল নাগাদ। বাকি সময়টুকু কাঁকড়াই ভরসা। যত কাঁকড়া ওঠে, তা নিয়ে নেয় ঠিকাদারেরাই। পরিবর্তে বাসুদেবদের হাতে কয়েকটা টাকা গুঁজে দেওয়াই রেওয়াজ।

শুক্রবার সকালে দুর্ঘটনার প্রায় দিন ছয়েক আগে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বাসুদেব চলে যান জঙ্গলে। সঙ্গে আরও কয়েক জন সঙ্গী-সাথী। এই সময়ে তাঁরা সারা দিন নদীর পাড়ে পাড়ে কাঁকড়া তোলেন। অন্ধকার নামলে নৌকায় এসে রাতযাপন করেন। পর দিন কাকভোর থেকে আবার একই রুটিন। টানা এ ভাবে কয়েক দিন কাটিয়ে, কিছু টাকা নিয়ে ফিরে আসেন গ্রামে। চাল-আলু কিনে চলে পরিবার প্রতিপালন।

গত শুক্রবার সকালে শৌচকর্ম করতে পাড় থেকে উঠে একটু জঙ্গলের ভিতরে গিয়েছিলেন তাঁরা। সরস্বতীর বর্ণনা অনুযায়ী, সে এক বড় বাঘ। লুকিয়ে ছিল ঘাস-জঙ্গলে। আচমকাই বাসুদেবের ঘাড়ের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে টেনে জঙ্গলে নিয়ে যায়। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না সরস্বতীদের।

মাঝেমধ্যেই জি-প্লটের এই আদিবাসীদের সংখ্যা কমছে বাঘের হানায়। বাঘে বা কুমিরে টেনে নিয়ে গেলে খুঁজে পাওয়া যায় না তাঁদের। তখন খড় দিয়ে একটি মানুষের কুশপুতুল মতো বানিয়ে তা পুড়িয়ে শেষকৃত্য সারা হয়। বাসুদেবের ক্ষেত্রেও রবিবার তাই হয়েছে। ওই এলাকায় কাজ করা সমাজসেবী শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বনের আইন ভেঙে এঁরা যান বলে সরকারি ক্ষতিপুরণও পান না। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনই তাঁদের ভরসা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tiger Sundarbans
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE