ডিম বিক্রি করছে অয়ন সেন। নিজস্ব চিত্র
মুখে মাস্ক থাকায় পরিচিত মানুষকেও চিনতে একটু সময় লাগছে। তবুও তার মধ্যে অনেকেই মালবাজারের ঘড়িমোড়ের আপৎকালীন আনাজ বাজারে ডিম বেচতে বসা অয়নকে চিনে ফেলছিলেন। আর চিনতে পেরে অস্ফুটে বলছিলেন, অয়ন এখানে কেন? ওর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা তো এখনও শেষ হয়নি! ও যে মালবাজার আদর্শ বিদ্যাভবনের ‘ফার্স্ট বয়’।
করোনার জেরে উচ্চ মাধ্যমিকের বাকি পরীক্ষা জুনে হবে বলেও শিক্ষা দফতর জানিয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগের পদার্থবিদ্যা, রসায়নের মতো পরীক্ষা এখনও বাকি। কিন্তু তত দিন তো সংসারটা টানতে হবে। তাই বাবা দীনেশ সেন আনাজ নিয়ে বাজারে বসছেন, তাঁর থেকে একটু দূরে ডিম বেচতে বসছে অয়ন সেন। দিনরাত বইখাতায় মুখ গুঁজে বসে থাকা যে সম্ভব নয় এখন, নিজেই স্বীকার করছে।
অভাবের সঙ্গে অয়নের লড়াই নতুন নয়। সেই যুদ্ধ করতে করতেই দু’বছর আগে মাধ্যমিকে সাতশোর মধ্যে ৬১৩ পেয়ে পাশ করে সে। প্রথম হয়েছিল স্কুলে। এই অভাবী মেধাবী ছাত্রটিকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন মালবাজারের অনেকে। অয়নের বাবা দীনেশবাবু দর্জির কাজ করে সংসার চালান। কিন্তু লকডাউনের জেরে এক সপ্তাহের মধ্যেই বন্ধ তাঁর সেলাই মেশিন। সংসার সামলাতে তাই তিনি আনাজ নিয়ে বসতে শুরু করেছেন মালবাজারের আপৎকালীন বাজারগুলিতে।
আরও পড়ুন: অতিমারি শেষ হলে আবার দেখা হবে আমাদের, তখন নতুন পৃথিবীর মুখ দেখব?
আরও পড়ুন: করোনাযুদ্ধ: ভিডিয়ো ছেড়ে ডেরেকের জবাব বিরোধীদের, নাম না করে খোঁচা বিজেপি-কে
‘‘নতুন করে আনাজের দোকান বাড়তে থাকায় স্থায়ী ব্যবসায়ীরা একটু মনক্ষুণ্ণ হচ্ছিল বোধ হয়,’’ বলেন দীনেশবাবু। তাঁর কথায়, এই নিয়ে চাপ বাড়ছিল। বাড়িতেও সেই কথা আলোচনা করেছেন তিনি। তার পরেই অয়ন মালবাজারের বড় ঘড়ির নীচে বস্তা পেতে ডিম নিয়ে বসতে শুরু করে। ত্রাণ পাননি? দীনেশ বলেন, ‘‘পেয়েছি। তা দিয়ে এক-দু’দিন যায়।’’ আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, “ছেলে রাস্তায় বসে ডিম বেচবে, এটা কোনও দিনই চাইনি।” অয়ন ক্রেতাদের মুখের দিকে তাকাতে ইতস্তত বোধ করে, পাছে যদি কেউ ওকে চিনে ফেলে। “বাড়িতে বসে পড়লে ভাল ফল করতে পারতাম,” এর বেশি আর কিছুই তাই বলতে পারে না সে।
আদর্শ বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষক উৎপল পাল বলেন, ‘‘অয়নের মতো ছাত্রকে অভাবের তাড়নায় দোকান দিতে হচ্ছে, এটা শোনাও দুর্ভাগ্যের। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy