Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
স্বাস্থ্যবিধি শিকেয়, দুই লকডাউনের মধ্যে সেই লাগামহীন ভিড় 
West Bengal Lockdown

নিয়ম ভাঙার পর লকডাউনে কি আজ নিয়ম মানার দিন?

সপ্তাহে দু’দিন লকডাউন করে লাভ কী হবে? যদি লকডাউনের আগের দিন লাগামছাড়া ভিড়ে যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি উড়ে যায়?

লকডাউনের আগে শুক্রবার বারাসতের পাইকারি আনাজের বাজারে মানুষের ঢল। ছবি: সুদীপ ঘোষ

লকডাউনের আগে শুক্রবার বারাসতের পাইকারি আনাজের বাজারে মানুষের ঢল। ছবি: সুদীপ ঘোষ

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২০ ০৪:২৮
Share: Save:


করোনা-সংক্রমণ রুখতে বৃহস্পতিবার পূর্ণাঙ্গ লকডাউন দেখেছে রাজ্য। আনলক পর্বে পথেঘাটে বেরোনো, কর্মস্থলে যেতে গণপরিবহণ ব্যবহার করার যে অভ্যাস তৈরি হয়েছিল, তাতে আচমকাই দাঁড়ি পড়েছিল বৃহস্পতিবার। ভিড়ের চেনা ছবিটা অবশ্য ফিরল ২৪ ঘণ্টা পরেই!

শুক্রবার সকাল থেকে বাজারে উপচে পড়া ভিড়, গা ঘেঁষাঘেঁষি করে আলু-পটল-মাছ নিজের হাতে বেছে কেনা, রাস্তায় গিজগিজে লোক, ব্যস্ত পথে যানজট— সব মিলিয়ে আক্ষরিক অর্থেই এ দিন ‘আনলক-পর্ব’ পালন করেছেন রাজ্যবাসী । কলকাতা তো বটেই, জেলা শহরগুলির ব্যস্ত রাস্তাও ফের রুদ্ধ হয়েছে যানজটে। আজ, শনিবার ফের পূর্ণাঙ্গ লকডাউন রাজ্যে। দুই লকডাউনের মধ্যবর্তী দিন বলেই এমন ভিড়— দাবি ব্যবসায়ী থেকে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের।

তবে সপ্তাহে দু’দিন লকডাউন করে লাভ কী হবে? যদি লকডাউনের আগের দিন লাগামছাড়া ভিড়ে যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি উড়ে যায়?

আরও পড়ুন: রাজ্যে তুলনায় কমল করোনা রোগীর সংখ্যা

২৩ মার্চ থেকে ১৮ জুন দেশে করোনা-সংক্রমণ বিশ্লেষণ করে আইআইএসসি-র ডেটা সায়েন্স বিভাগের গবেষক-অধ্যাপক শশীকুমার গণেশন ও দীপক সুব্রমণির গাণিতিক মডেলে সপ্তাহান্তে এক দিন এবং সপ্তাহের মধ্যে এক দিন লকডাউনের কথা বলা হয়েছিল। অনেক রাজ্যই এই মডেল মেনে সাপ্তাহিক লকডাউন করছে। পশ্চিমবঙ্গেও তা সবে শুরু হয়েছে। এ প্রসঙ্গে দীপক সুব্রমণি বলেন, ‘‘সপ্তাহে দু’দিন একসঙ্গে এবং সপ্তাহে আলাদা দু’দিন লকডাউন পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সংক্রমণ বেশি কমছে। কেন তা আমরাও বোঝার চেষ্টা করছি। তবে যা মনে করা হচ্ছে, যে-হেতু সংক্রমণের ‘কমপাউন্ড গ্রোথ’ হয়, তাই দু’দিন একসঙ্গে লকডাউন হলে সংক্রমণের বৃদ্ধির হার কমে তুলনামূলক ভাবে কম। সেখানে দু’টি আলাদা দিনে লকডাউন করলে সংক্রমণ অনেক বেশি হারে কমে।’’

আরও পড়ুন: ডাক্তারি পড়তে চান কৃষক-কন্যা, খরচই বাধা

যেমন মডেলই হোক, লকডাউনের সুফল আছে বলে মনে করেন ইএসআই জোকার কমিউনিটি মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বিশ্বে নানা রকম মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে। সবটাই ফলিত বিদ্যা। সপ্তাহে দু’দিন লকডাউনের নীতিও তাই। প্রথম দিন যে রকম কড়া হাতে লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে তাতে প্রাপ্তিযোগ একেবারেই শূন্য হবে না। কিন্তু প্রাপ্তির পরিমাণ কতটা, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়।’’

লকডাউন বিধি মানার পরে শুক্রবার সকাল থেকেই জেলায় -জেলায় ছিল বিধি ভাঙার ছবি। সকাল ৯টায় বীরভূমের রামপুরহাট শহরের ভাঁড়শালাপাড়ার বাজারে থিকথিক করছে ভিড়। তার মধ্যে দিয়েই চলছে অসংখ্য টোটো, রিকশা, সাইকেল, বাইক। অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই, থাকলেও থুতনিতে নামানো। কেউ কেউ দাঁড়িয়ে সিগারেট-বিড়িতে টান দিচ্ছেন। মুর্শিদাবাদের বাজার, শপিং মলে এ দিন পা রাখা ছিল দায়। থিকথিকে ভিড় ছিল মালদহ ও দুই দিনাজপুরের শহর থেকে গ্রামে। শিলিগুড়ির ছবি দেখে মনে হয়নি যে, করোনা-সংক্রমণ নিয়ে কোনও আতঙ্ক মানুষের রয়েছে। আসানসোল ও দুর্গাপুর মহকুমার বিভিন্ন বাজারেও ভিড় ছিল অন্য দিনের চেয়ে বেশি। বর্ধমান শহরে সাত দিনের লকডাউন চলছে। তার মধ্যেও কেনাকাটার ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

তমলুক শহরে স্থানীয় প্রশাসনের লকডাউনের নিয়ম মেনে এ দিন সকাল ৭ টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সব দোকান খোলা থাকার কথা ছিল। ওই সময়ে কেনাকাটার জন্য ভিড় উপচে পড়ে। কাঁথি শহরে আনাজ এবং মাছ বাজারেও ভিড় জমে যায়। চন্দ্রকোনা রোডে প্রায় সর্বত্র ভিড়ে ঠাসাঠাসি করে বেচাকেনা চলেছে। উত্তর ২৪ পরগনায় করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হলেও বনগাঁ থেকে ডায়মন্ড হারবার, হাবড়া-অশোকনগর থেকে ভাঙড়, বহু বাজারেই শুক্রবার সকালে উপচে পড়েছিল ভিড়। ব্যতিক্রম ছিল না কলকাতার বাজারও।

তবু শনিবার মানুষকে লকডাউন মানতে বাধ্য করার ব্যাপারে আশাবাদী লালবাজার ও রাজ্য পুলিশ। বৃহস্পতিবারের মতোই লকডাউন সফল করতে সকাল ৬টা থেকে রাস্তায় নামবে কলকাতা পুলিশ। সকাল থেকে দুপুর এবং দুপুর থেকে রাত, এই দু’টি শিফটে পুলিশ মোতায়েন করছে লালবাজার। আজ, শনিবার তিন জায়গা থেকে একসঙ্গে ড্রোন উড়িয়ে দেখা হবে, কোন কোন এলাকার বাসিন্দারা বিধি ভেঙে রাস্তায় ঘুরছেন।

লালবাজার সূত্রের খবর, শহরের ২৮টি জায়গায় নাকা তল্লাশি চলবে। পুলিশ সূত্রের খবর, এ বারের লকডাউনে ছাড় পায়নি দুধ। তাই দুধ বিক্রির নামে কেউ দোকান খুললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ, মূল লকডাউনের সময়ে দুধের দোকানের সামনের জটলা চোখে পড়েছে বার বার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE