Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কারা মারল? রামুয়া খুনে জটিল হচ্ছে রহস্য

হাওড়ার দাগি দুষ্কৃতী রামমূর্তি দেওয়ার ওরফে রামুয়াকে খুনের ঘটনায় ধোঁয়াশা আরও বাড়ছে। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি।

রামমূর্তি দেওয়ার ওরফে রামুয়া।

রামমূর্তি দেওয়ার ওরফে রামুয়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:১৭
Share: Save:

হাওড়ার দাগি দুষ্কৃতী রামমূর্তি দেওয়ার ওরফে রামুয়াকে খুনের ঘটনায় ধোঁয়াশা আরও বাড়ছে। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। কে বা কারা রামুয়ার মতো কুখ্যাত দুষ্কৃতীকে স্রেফ একটা গুলি চালিয়ে মেরে দিল, তা-ও এখনও স্পষ্ট নয় তদন্তকারীদের কাছে। তবে রহস্যের জট খোলার সূত্র ঘটনাস্থলে রয়েছে বলেই প্রাথমিক ভাবে অনুমান তদন্তকারীদের।

সেই জট খুলতে এ দিন সোদপুরের অমরাবতী এলাকার যে আবাসনে রামুয়া থাকত, সেখানে যান খড়দহ থানার ওসি। বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি আবাসনের পিছনে আগাছায় ভরা ফাঁকা জমিও দেখেন তদন্তকারীরা। আবাসনের বাসিন্দারা এ দিন পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনতলার বাসিন্দা রামুয়াদের সম্পর্কে কেউই বিশদে কিছু জানতেন না। আবাসনের মিটিংয়েও উপস্থিত থাকত না ওই পরিবার। রামুয়ার ছেলে সমীর কবে ওই আবাসনে এসেছিলেন, তা-ও কারও জানা নেই। বাসিন্দারা জানান, আবাসনের প্রবেশপথের কোল্যাপসিবল গেটটি সব সময়েই তালা দেওয়া থাকে। সেটির চাবি থাকে প্রত্যেক বাসিন্দার কাছে। ওই কোল্যাপসিবল গেটের ভিতরে রয়েছে আর একটি লোহার দরজা। সেটি অবশ্য তালা দেওয়া থাকে না। এ দিন কোল্যাপসিবল গেটের তালাও বদলে ফেলেছেন বাসিন্দারা।

পুলি‌শ সূত্রের খবর, রামুয়ার স্ত্রী কাজল ও ছেলেকে বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও এখনও তাঁরা তেমন ভাবে সহযোগিতা করছেন না। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ওই রাতে ঘটনার পরে একটি গাড়িতে চাপিয়ে রামুয়াকে পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন তার স্ত্রী, ছেলে এবং শ্বশুরবাড়ির কয়েক জন। তবে ১১ জন দুষ্কৃতীর মোটরবাইকে চেপে আসা এবং বেরিয়ে যাওয়ার যে বিবরণ সমীর ও কাজল দিচ্ছেন, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। অমরাবতীর ওই এলাকায় রাস্তায় থাকা বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করেও রবিবার রাত পৌনে একটার আশপাশে দল বেঁধে কোনও বাইক-বাহিনীর যাওয়া-আসার প্রমাণ পায়নি পুলিশ।

আরও পড়ুন: ‘জলে’ গেল দিলীপের ‘পুণ্য-ডুব’

পুলিশ সূত্রের খবর, রামুয়ার মাথার ক্ষত পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা যা জানিয়েছেন, তা থেকে তদন্তকারীদের অনুমান, সেটি ৭.৬২ মিলিমিটার মাপের বুলেটের ক্ষত হতে পারে। কিন্তু আশ্চর্যজনক ও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রামুয়ার ঘর থেকে কোনও গুলির খোল উদ্ধার হয়নি। মেঝেতে যে বালিশে সে শুয়েছিল, সেটি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। তবে একটি গুলি চালিয়েই কী ভাবে রামুয়ার মৃত্যু নিশ্চিত করল দুষ্কৃতীরা, তা-ও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সমীর তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, রবিবার রাতে কলিং বেল বাজার পরে রামুয়াই তাঁকে নীচে পাঠিয়েছিল দরজা খুলে দিতে। তা থেকে পুলিশের অনুমান, পরিচিত কেউ যে আসবে বা এসেছে, সে বিষয়ে সজাগ ছিল রামুয়া। আর যদি ধরে নেওয়া হয়, অপরিচিত কেউ এসেছিল, তা হলে ওই দলে এমন কেউ ছিল, যে বা যারা মাঝেমধ্যেই ওই ফ্ল্যাটে আসত। না হলে অত রাতে অপরিচিত কারও পক্ষে নির্দিষ্ট কলিং বেল চেনা সম্ভব ছিল না।

রামুয়াকে আগে গ্রেফতার করেছেন কিংবা জেরা করেছেন, রাজ্য পুলিশের এমন কয়েক জন অফিসারের মতে, ওই দুষ্কৃতীকে খুন করতে হলে পেশাদার তো বটেই, এমনকি, তার মতো সমান ক্ষমতাবান লোকের প্রয়োজন। সাধারণ কোনও খুনি রামুয়ার সামনে পিস্তল তুলতে হলেও কয়েক বার চিন্তা করবে। আর রামুয়া যে ধরনের দুষ্কৃতী, তাতে পরিচিত বা অপরিচিত যে-ই আসুক না কেন, আত্মরক্ষার জন্য তার পুরোমাত্রায় প্রস্তুত থাকার কথা।

হাওড়া পুলিশের পুরনো রেকর্ড বলছে, ২০১৫ সালে খড়দহের বাড়ি থেকে যখন রামুয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তখন তার বিছানার তলায় একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫০ রাউন্ডের বেশি গুলি মজুত ছিল। সেখানে সোদপুরের এই ফ্ল্যাট থেকে একটিও আগ্নেয়াস্ত্র পায়নি পুলিশ। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, হাওড়ার পাশাপাশি উত্তর কলকাতারও এক কুখ্যাত দুষ্কৃতীর সঙ্গে ওঠাবসা ছিল রামুয়ার। সে যখন জেলে ছিল, তার হয়ে তোলাবাজির টাকা আদায়ের অভিযোগে স্ত্রী কাজলের নামেও একটি মামলা রয়েছে হাওড়া সিটি পুলিশের কাছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Crime Murder Howrah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE