এ জায়গাকে লোকে চেনে বাঘের ডেরা হিসাবেই। অসংখ্য বন্যপ্রাণের নিশ্চিন্ত আশ্রয় যে গহীন অরণ্য, সেখানেই ইতিহাসের স্মারক হয়ে দাঁড়িয়ে প্রাচীন সুবিশাল দুর্গ। কোনও একটি জায়গায় নয়, ভারতের নানা প্রান্তেই রয়েছে এমন ইতিহাসের খোঁজ, অরণ্যের গভীরে।
বয়ে গিয়েছে সময়, বদলেছে অরণ্যের রূপ। এক সময় যে অরণ্য ছিল রাজরাজড়াদের শিকার ক্ষেত্র, এখন তা-ই হয়ে উঠেছে জাতীয় উদ্যান। যার উদ্দেশ্যই হল, বন্যপ্রাণকে নিশ্চিন্তে বাঁচার পরিবেশ গড়ে দেওয়া। এমনই তিন ঠিকানা রয়েছে ভারতে, যেখানে রয়েছে পুরনো দুর্গও।

বান্ধবগড় দুর্গ। ছবি: সংগৃহীত।
বান্ধবগড় দুর্গ: মধ্যপ্রদেশের এ অরণ্যের খ্যাতি বাঘের জন্য। উমারিয়া জেলায় বান্ধবগড় জাতীয় উদ্যান লেপার্ড, চিতল, স্পটেড ডিয়ার, ঢোল, গউর, সম্বর, নীলগাই, হায়না, ফোর হর্ন অ্যান্টিলোপ-সহ অজস্র বন্যপ্রাণী এবং কয়েকশো প্রজাতির পাখির আবাস্থল। এই জঙ্গলেই রয়েছে প্রাচীন দুর্গ। ঠিক কবে তা তৈরি হয়েছিল তা স্পষ্ট নয়। তবে শোনা যায়, খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতকে তা নির্মিত। বান্ধবগড় জাতীয় উদ্যানের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ৫৮২ একর জায়গার উপর তার বিস্তৃতি। বকাটক, কলচুরি, সোলাঙ্কি, কুরুবংশী, বাঘেলরা এখানে রাজত্ব করেছে। ১৯১৭ সালে বাঘেলরা রাজধানীর স্থান বদল করে রেওয়া নিয়ে যায়। কেউ কেউ বলেন, কালচুরি এবং প্রতিহার গুর্জরের রাজত্বকালে তা তৈরি হয়েছিল। বান্ধবগড় জাতীয় উদ্যানের কেন্দ্রস্থলে অবস্থান দুর্গের। এই দুর্গ ঘিরে প্রচলিত রয়েছে নানা লোককথা। স্থানটি জাতীয় উদ্যানের টালা জ়োন থেকে কাছে হয়। তবে এই দুর্গে পৌঁছতে বন দফতরের বিশেষ অনুমতি লাগে। বিশেষ উৎসবের দিনে সেখানে জনসাধারণের যাওয়ার ছাড়পত্র মেলে।

রণথম্ভোর দুর্গ। ছবি: সংগৃহীত।
রণথম্ভোর দুর্গ: রাজস্থানের সওয়াই মাধোপুর জেলার রণথম্ভোর জাতীয় উদ্যান উত্তর ভারতের অন্যতম বৃহৎ অভয়ারণ্য। সেখানেই রয়েছে প্রাচীন রাজাদের গড়। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতি পেয়ছে সেই দুর্গ। খ্রিস্টীয় দশম শতকে চৌহান রাজাদের আমলে সুবিশাল দুর্গটি নির্মিত হয়েছিল বলে জানা যায়। খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকে দিল্লির সুলতানরা দখল নেন এই দুর্গের। এক সময় যে অরণ্য ছিল রাজাদের শিকারক্ষেত্র এখন সেটাই বন্যপ্রাণের নির্ভয় বিচরণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। পর্যটকদের দুর্গে প্রবেশের জন্য সাতটি প্রবেশদ্বার রয়েছে। রাজপুত এবং মোগল স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত প্রাসাদোপম দুর্গ আজও পর্যটকদের মুগ্ধ করে। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই দুর্গ খোলা থাকে। অক্টোবর থেকে মার্চ দুর্গে ঘোরার আদর্শ সময়।

কুম্ভলগড়ের দুর্গ। ছবি: সংগৃহীত।
কুম্ভলগড়ের দুর্গ: রাজস্থানের রাজসমন্দ জেলায় কুম্ভলগড় অভয়ারণ্য। জঙ্গল সন্নিহিত অঞ্চলেই রয়েছে কুম্ভলগড় দুর্গ। গুরুত্বের বিচারে মেবারের চিতোরের দুর্গের পরেই স্থান এটির। এই দুর্গের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে আরাবল্লি পর্বতমালা। খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকে রানা কুম্ভ এই দুর্গ নির্মাণ করান। কুম্ভলগড়ের অন্যতম আকর্ষণ এর সুবিশাল প্রাকার, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৬ মিটার। মেবারের রানা প্রতাপের জন্মস্থলও এটি। পর্যটকদের কাছে এই দুর্গ কম আকর্ষক নয়। এর স্থাপত্যশৈলী আজও বিস্ময় উদ্রেক করে। কুম্ভলগড়ে রয়েছে হিন্দু, জৈন মিলিয়ে ৩৬০টি মন্দির।