ঘুম থেকে উঠে এক কাপ চায়ে চুমুক না দিলে চলে না? কিন্তু কোনও এক ঘুমভাঙা ভোরে যদি দেখেন, রয়েছেন চা-বাগানে আর সামনে স্বচ্ছ কাপে ধূমায়িত চা, তবে কেমন হয়?
পাহাড়ের ঢাল বেয়ে বিস্তৃত চা-বাগানের সৌন্দর্য কিছু কম নয়। আবার অনেকেরই আগ্রহ থাকে চা নিয়েও। বাগান থেকে কী ভাবে পাতা তোলা হয়, প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে চা-তৈরি হয়, সেই সবও দেখতে চান অনেকেই। সেই আগ্রহ থেকেই ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে ‘চা-পর্যটন’।
বিশ্বজোড়া কদর দার্জিলিং চায়ের। সেখানে রয়েছে অসংখ্য চা-বাগান। ব্রিটিশ আমলে তৈরি চা-বাগানের ভিতরকার পুরনো বাংলোগুলির কয়েকটিতে এখন থাকার সুযোগ মেলে। সকাল থেকে রাত কিচ্ছুটি না করে যদি চা-বাগানের মধ্যে অলস দিন কাটাতে চান, কিংবা খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করতে চান চা-বাগান কেন্দ্রিক জীবনযাপন, তবে তালিকায় রাখতে পারেন কয়েকটি ঠিকানা।
দার্জিলিং থেকে সিকিম— একাধিক জনপ্রিয় চা-বাগান রয়েছে। তার অনেকগুলিতেই ভিতরে থাকার ব্যবস্থা আছে। তবে এখানে রইল তারই মধ্যে তিন জায়গার হদিস।

চা-বাগানের ভিতরে বাংলোতেও থাকা যায়। ছবি: সংগৃহীত।
গ্লেনবার্ন টি এস্টেট: চা-বাগান আর শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ যদি একই সঙ্গে উপভোগ করতে চান, ঘুরে আসতে পারেন গ্লেনবার্ন টি-এস্টেট। দার্জিলিঙের রঙলি রঙলিয়ত ব্লকেই রয়েছে চা-বাগানটি। ১৮৫৯ সালে স্কটিশ চা-কোম্পানির হাত ধরে গড়ে উঠেছিল বাগানটি। এখন সেটি চা-পর্যটনের অন্যতম কেন্দ্র। সিমবং নামে ঘন অরণ্য ঘিরে রেখেছে এই অঞ্চলকে।
চা-বাগানে এলে বাগান ঘোরা যায় একেবারে নিজের মতো করে। আর বাগানের ভিতরেই যদি থাকেন, সে অভিজ্ঞতা হবে একেবারেই আলাদা। অলস দিনযাপনেও যেমন সময় কাটতে পারে, তেমন হেঁটে ঘোরা যায় বাগান। কারখানায় কী ভাবে চা তৈরি হয়, সেই সবও দেখার সুযোগ পেতে পারেন অনুমতি নিয়ে। চাইলে পায়ে হেঁটে ঘুরে নিতে পারেন আশপাশের গ্রাম। আবার এখান থেকে যাওয়া যায় দার্জিলিং শহরেও। বাতাসিয়া লুপ, ম্যাল, বৌদ্ধ মঠ-সহ দ্রষ্টব্য কম নেই। শহরে রয়েছে একাধিক ক্যাফে। ইংলিশ ব্রেকফাস্ট খেতে পারেন সেখানে।
গ্লেনবার্গ চা-বাগানের মধ্যেই রয়েছে আধুনিক পরিষেবাযুক্ত সুবিশাল, সুন্দর বাংলো। চাইলে সেখানে থাকতে পারেন। তবে সেখানে না থাকতে চাইলে হোটেলেরও অভাব নেই। চা-বাগান থেকে ১০-১২ কিলোমিটারের মধ্যে বেশ কয়েকটি হোটেল পেয়ে যাবেন।
মিম চা-বাগান: কাঞ্চনজঙ্ঘা, চা-বাগান, অরণ্য, খরস্রোতা নদী— এই সমস্ত কিছু নিয়েই মিম চা-বাগান। উত্তরবঙ্গের এই চা-বাগান ঘিরেই তৈরি হয়েছে পর্যটনকেন্দ্র। কোলাহলবর্জিত এ স্থান দার্জিলিং থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে। লেপচাজগৎ ও সুখিয়াপোখরির মাঝামাঝি স্থানে মিমের চা-বাগান। যেখানে এখন খানিক নির্জনতার খোঁজে আসছেন পর্যটকেরা।
মিম চা-বাগান তৈরি হয়েছিল ১৫০ বছর আগে। বাগানে রয়েছে পুরনো একটি বাংলো, যা ব্রিটিশ আমলের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। পুরনো বাংলোটি এখন পর্যটকদের থাকার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও থাকার জন্য বাগানের ভিতরেই পেয়ে যাবেন হোম স্টে। যেখানে বসে অরণ্য, চা-বাগান, কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। মিমের অদূরেই রয়েছে বৌদ্ধ মঠ। কাছ দিয়ে বয়ে গিয়েছে খরস্রোতা নদী। চাইলে মিম থেকে ঘুরে নেওয়া যায় মিরিক, কার্শিয়াং, লেপচাজগৎ।
আরও পড়ুন:
টেমি টি গার্ডেন: দক্ষিণ সিকিমের টেমি চা-বাগান এখন জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। নামচির অদূরেই এই চা-বাগান। অলস দিনযাপনের জন্য একটি স্থানই যথেষ্ট। ৪৪০ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত বাগানটি তৈরি হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। তারই ভিতরেই রয়েছে বহু পুরনো টেমি বাংলো। সেখানে এখন থাকার সুযোগ রয়েছে। একাধিক হোটেল রয়েছে টেমি টি গার্ডেনের অদূরেও। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে চা-বাগান একরকম। বর্ষার সময় বদলে যায় রূপ। চাইলে বাগান থেকে ঘুরে নিতে পারেন নামচি চার ধাম, সামদ্রুপ্ৎসে মনাস্ট্রি। ঘুরে আসা যায় রাবাংলাও। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে টেমি টি গার্ডেনের দূরত্ব ১২০ কিলোমিটারের কাছাকাছি। নামচির দূরত্ব ৮ কিলোমিটার। টেমি টি গার্ডেনেই সঙ্গে রয়েছে বিপণি। সেখানে চেখে দেখে চা কিনতে পারেন।