কামাখ্যা দর্শনে যান বা মেঘালয়-শিলং ভ্রমণে, অসমের গুয়াহাটি হয়েই যান লোকজন। কেউ শুধু গুয়াহাটিও ঘুরতে যান। এমনিতে এখানে বেড়ানোর জায়গা যথেষ্টই। নীলাচল পাহাড়ের কোলে কামাখ্যা ‘পীঠনির্ণয় তন্ত্র’ অনুযায়ী, ৫১ শক্তিপীঠের একটি। ব্রহ্মপুত্র নদের মধ্যে একটি ছোট্ট দ্বীপে রয়েছে উমানন্দ মন্দির। সেখান যেতে হয় জলপথে। এখন রয়েছে রোপওয়ে-ও। সূর্যাস্ত দেখতে ব্রহ্মুপুত্রের বুকে ভেসে পড়া যায় ক্রুজ়ে। বশিষ্ঠ মন্দির, ওয়ার মেমোরিয়াল-সহ আশপাশের ছোটখাটো দ্রষ্টব্য অনেক আছে। তবে চেনা ছকের বাইরে গুয়াহাটি বেড়াতে চাইলে কী কী দেখবেন?
হাজো
গুয়াহাটির অদূরে হাজোর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে ইতিহাস। এই স্থান কী ভাবে ভ্রমণ করবেন? ছবি:সংগৃহীত।
গুয়াহাটি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হাজোর কথা স্থানীয় লোকজন জানলেও পর্যটকেরা বিশেষ জানেন না। এখানে একাধিক পাহাড়ের মাথায় তৈরি হয়েছে এক এক ধর্মের তীর্থস্থান। মণিকূট পর্বতের উপরে রয়েছে বহু পুরনো হয়গ্রীব মাধব মন্দির। ১৫৮৩ সালে বর্তমান মন্দির তৈরি করিয়েছিলেন রাজা রঘুদেব নারায়ণ। তবে তার আগেও সেখান মন্দির ছিল। পুরনো ধ্বংসাবশেষ থেকে ঐতিহাসিকদের অনুমান সেটি পাল আমলের। এই চত্বরেই রয়েছে বিশাল মনোলিথিক স্তম্ভ। ভূমিকম্পের ফলে তা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখনও সমহিমায় দণ্ডায়মান। এই স্থান যেমন হিন্দুদের তীর্থক্ষেত্র, তেমনই বৌদ্ধদেরও। বৌদ্ধরা এই স্থানকে পবিত্র মানেন। মন্দির চত্বর শান্ত এবং গাছগাছালিতে ভরা। অদূরে রয়েছে জলাশয়, যেখান ছোট-বড় নানা আকারের কচ্ছপের দেখা মিলবে। এখান থেকে ঘুরে নেওয়া যায় কেদারেশ্বর মন্দির। মদনাচল পাহাড়ের মাথায় বেশ পুরনো মন্দিরটি। উপাস্য শিব। দীর্ঘ সিঁড়ি বেয়ে সেখানে পৌঁছতে হয়। এ ছাড়া রয়েছে কমলেশ্বর মন্দিরও। এখানে গারুড়াচল পাহাড়ে রয়েছে মুসলিমদের তীর্থক্ষেত্র পোয়া মাখ্খা।
চান্দুবি হ্রদ
চান্দুবি গুয়াহাটির অদূরে আর এক সুন্দর স্থান। সাধারণত পর্যটকেরা এই জায়গায় যান না। ছবি: সংগৃহীত।
গুয়াহাটি শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে চান্দুবি হ্রদ লোকচক্ষুর আড়ালে রয়ে যাওয়া আর এক স্থান। পক্ষী পর্যবেক্ষকদের কাছে এই স্থান বিশেষ আকর্ষণের। ঘন অরণ্য এবং গারো পাহাড় ঘিরে রয়েছে এই স্থানকে। নৌ-বিহার করা যায়। চারপাশের সৌন্দর্য মনোরম। জলে শালুক, পদ্ম ফোটে। উড়ে বেড়ায় পক্ষীরা। প্রকৃতির রূপ উপভোগের এ এক আদর্শ স্থান। শীতের মরসুমে এখানে পরিযায়ী পাখি উড়ে আসে। জানা যায়, অসমে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পের ফলে এই হ্রদের সৃষ্টি।
আরও পড়ুন:
পবিতোরা অভয়ারণ্য
পবিতোরা অভয়ারণ্য। ছবি: সংগৃহীত।
অসমের পরিচয় কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের জন্য। কয়েকশো প্রজাতির বন্যপ্রাণের আবাসস্থল এই স্থান। বিস্তীর্ণ এলাকা জু়ড়ে তার বিস্তার। তবে সেই বিশালত্বের কাছে একেবারে ফিকে হয়ে যায় না পবিতোরা অভয়ারণ্য। গুয়াহাটি থেকে কম-বেশি ৫৫ কিলোমিটার। কাজিরাঙার পরিচয় যেমন একশৃঙ্গ গন্ডারের জন্য, পবিতোরারও তাই। বিস্তীর্ণ তৃণজমি গন্ডারের আদর্শ বাসস্থান।২২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২৭ রকম সরীসৃপ এবং ৩৭৫ রকম প্রজাতির পাখি রয়েছে এখানে। জিপ সাফারির বন্দোবস্ত রয়েছে এখানে। চিতাবাঘ, বুনো শুয়োর-সহ হরেক বন্য জন্তু রয়েছে এখানে। তবে বর্ষার মরসুমে যে কোনও অরণ্যের মতোই পর্যটকদের জন্য বন্ধ থাকে পবিতোরা। বর্ষা অনুযায়ী নির্ভর করে খোলার সময়। মোটামুটি অক্টোবর হয়েই যায়। তবে অরণ্যে না ঘুরতে পারলেও ব্রহ্মপুত্রে নৌ বিহার করতে পারবেন যে কোনও মরসুমেই। এখান থেকে শুশুক দেখার সুযোগ মেলে। পবিতোরার আরণ্যক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য পুজোর পর থেকে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত ভাল সময়।