জুরিখ বিমানবন্দরে প্লেন নামতেই মনটা নেচে উঠল। দূরে দেখা যাচ্ছে বরফছোয়া আল্প্স পর্বতমালা। তা হলে সত্যিই চলে এলাম পাহাড়ের দেশ সুইজারল্যান্ডে! জানুয়ারির শীতে সুইজারল্যান্ড যাচ্ছি শুনে বন্ধুরা অবাক হয়েছিলেন। তবু চলেই এলাম। সুযোগ আর বেরিয়ে পড়ার নেশার এক সমন্বয়ের সদ্ব্যবহার আর কি!
সুইজারল্যান্ড আমার কাছে চিরকালের এক স্বপ্নের দেশ। যে দেশে আছে বরফ ঘেরা উঁচু উচুঁ পাহাড়, সবুজ ঢালু আলপাইন উপত্যকা। আর সেই উপত্যকায় দাঁড়িয়ে ‘সাউন্ড অফ মিউজিক’-এর মারিয়া গান গেয়ে ওঠে ‘পাহাড়গুলো আজ যেন জীবন্ত- সঙ্গীতের মূর্ছনায়’। যদিও মারিয়া গান গেয়েছিলেন পাশের দেশ অস্ট্রিয়াতে দাঁড়িয়ে। তবু সেও তো এই পাহাড়ি অ্যালপাইন অঞ্চলেই।
শুনেছিলাম সুইজারল্যান্ডে ট্রেন দেখে লোকে নাকি ঘড়ি মেলায়। এ বার সেটা আমি নিজেও পরীক্ষা করে নিলাম। টাইমটেবলের সময় ধরে ঠিক কাঁটায় কাঁটায় ৩ ঘণ্টা ১২ মিনিটে জুরিখ এইচবি স্টেশন থেকে পৌঁছে গেলাম পাহাড়ি শহর সেন্ট মর্টিজে। ছোট্ট পাহাড়ি শহর সেন্ট মর্টিজ এ দেশের স্কি রিসর্টের অন্যতম। ১৯২৮ এবং ১৯৪৮ সালে এই শহরে শীতকালের অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের অবশ্য এই শহরে আসার একটাই কারণ, এই শহর থেকেই আমরা পরের দিন রওনা হব ‘গ্লেসিয়ার্স এক্সপ্রেস’ ট্রেনে চেপে। জানুয়ারি মাসের দুপুরে সেন্ট মর্টিজ শহর কেমন যেন ঘুমন্ত। উঁচু-নিচু প্রধান সড়ক। দূরে দেখা যাচ্ছে পিজ বার্নিনা পাহাড়। হোটেলে পৌঁছে মেজাজও একটু নড়েচড়ে উঠল। পাঁচতারকা হোটেলের থেকেও বেশি ঘরের ভাড়া, অথচ না আছে ঘরে কফি মেকার, না আছে রুম সার্ভিস। লাগোয়া রেস্তোরাঁ তো দূরের কথা। অবশ্য মন ভরে গেল পরের দিন ভোরের সকালে যখন জানলা দিয়ে দেখতে পেলাম সেন্ট মর্টিজের নৈসর্গিক সৌন্দর্য। লেকের পাশে বরফে ঢাকা পাহাড়ের কোলে সূর্যোদয়ের পূর্বাভাসের লাল আলো। ব্রেকফাস্টের সময় হোটেল মালকিন নিজে এসে সঙ্গে বসলেন। অনেক ক্ষণ ধরে আন্তরিক ভাবে গল্প করলেন।