Advertisement
E-Paper

নববর্ষে ঘুরে আসুন দেওঘর থেকে! এককালে বাঙালির স্বাস্থ্যোদ্ধারের ঠিকানা নানা গল্পেরও শহর

৭-৮ ঘণ্টার ট্রেন যাত্রায় পৌঁছে যাওয়া যায়। পুরী কিংবা দার্জিলিঙের থেকেও কাছে এই জায়গাটিতে ইদানীং আর আগের মতো বাঙালিদের বোলবোলাও হয়তো নেই। তবে পড়ে রয়েছে অনেক গৌরবময় স্মৃতি।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:০১
দু’দিনের জন্য চোখের আরাম, মনের আরামের ঠিকানা হতে পারে দেওঘর।

দু’দিনের জন্য চোখের আরাম, মনের আরামের ঠিকানা হতে পারে দেওঘর। ছবি : শাটারস্টক।

এক কালে বাঙালিদের স্বাস্থ্যোদ্ধারের জায়গা ছিল দেওঘর। বলা হত, সেখানকার জলও স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। তা নাকি খিদে বাড়িয়ে দিতে পারে। বহু সম্পন্ন গেরস্তের বছরে এক বার মাসখানেকের জন্য দেওঘর ঘুরে আসা ছিল বাঁধাধরা। যাঁরা ধনী, তাঁরা নিজেদের বাড়িও বানিয়ে রাখতেন। সারা বছর সেই বাড়ির যত্ন-আত্তি করতেন বেতনভূক কর্মচারীরা। বাবু সপরিবার এলে হত এলাহি আয়োজন। আবার নিজেরা না যেতে পারলে বন্ধু-বান্ধবকেও বাড়িতে পাঠানোর চল ছিল। পড়শি রাজ্যে সবুজালি আর পাহাড়ে ঘেরা ছবির মতো জায়গাটি কাশী বা বেনারসের মতোই ছিল বাঙালির ‘সেকেন্ড হোম’। ৭-৮ ঘণ্টার ট্রেন যাত্রায় পৌঁছে যাওয়া যায়। পুরী কিংবা দার্জিলিঙের থেকেও কাছে এই জায়গাটিতে ইদানীং আর আগের মতো বাঙালিদের বোলবোলাও হয়তো নেই। তবে পড়ে রয়েছে অনেক গৌরবময় স্মৃতি, যা দেখে আসা যায় হাতে দু’-তিন দিন সময় থাকলে। দেওঘরের নানা ইতিহাস আর পৌরাণিক কাহিনি শুনতে শুনতে সময় কেটে যাবে। আর শহরের বাইরে বেরোলেই মন ভোলাবে ছোট-বড় পাহাড় আর সবুজালি। ধার্মিক হোন বা না হোন এক বার বৈদ্যনাথের মন্দির দর্শন না করলে দেওঘর ভ্রমণ বৃথা।

কী কী দেখবেন দেওঘরে?

বৈদ্যনাথের মন্দির

দেওঘরের বৈদ্যনাথ ধাম।

দেওঘরের বৈদ্যনাথ ধাম।

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের একটি হল বৈদ্যনাথ ধাম। পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, স্বয়ং রাবণের হাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই মন্দির। কারণ, তিনিই কৈলাস পর্বতে শিবের উপাসনা করে ওই জ্যোতির্লিঙ্গ পেয়েছিলেন। কথা ছিল সেই জ্যোতির্লিঙ্গ তিনি প্রতিষ্ঠা করবেন লঙ্কায়। শর্ত ছিল মাঝে কোথাও ওই জ্যোতির্লিঙ্গ রাখা যাবে না। সে ক্ষেত্রে রাবণ যেখানে সেটি রাখবেন, সেখানেই ওই জ্যোতির্লিঙ্গ চিরতরে প্রতিষ্ঠিত হবে। রাবণ সেই শর্ত পূরণ করতে পারেননি। কথিত আছে দেবতারাই চাননি, ওই শর্ত রাবণ পূরণ করুন। বরুণ দেব এবং বিষ্ণুর মিলিত চেষ্টায় রাবণ মর্ত্যে অবতীর্ণ হয়ে দেওঘরেই ভুলবশত ওই জ্যোতির্লিঙ্গ রাখেন, আর সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হন শিব। লোকশ্রুতি বলছে, রাবণ হাল ছাড়েননি। লঙ্কা থেকে নিয়মিত তিনি ওই জ্যোতির্লিঙ্গ পুজো করতে আসতেন। সেই থেকেই এখানে পূজিত হচ্ছেন শিব। ইতিহাস বলছে বৈদ্যনাথের মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৫৯৬ খ্রিষ্টাব্দে। মন্দির চত্বরে বৈদ্যনাথ শিবের পাশাপাশি আরও বহু দেবদেবীর মন্দির রয়েছে। তার মধ্যে একটি শক্তিপীঠও। নাম জয়দুর্গা শক্তিপীঠ। পুরাণের কাহিনী অনুযায়ী শিবের তাণ্ডব চলাকালীন সতীর হৃৎপিণ্ড পড়েছিল বৈদ্যনাথ ধামে।

নওলাখা মন্দির

পাথুরিয়াঘাটার রানির বানানো মন্দির।

পাথুরিয়াঘাটার রানির বানানো মন্দির।

দেওঘরে ওই মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন বাংলার পাথুরিয়াঘাটার রাজ পরিবারের রানী চারুশীলা। তিনি তাঁর স্বামী অক্ষয় ঘোষ এবং পুত্র যতীন্দ্র ঘোষকে অকালে হারিয়ে যখন মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত, তখন দেওঘরে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন সন্ন্যাসী বালানন্দ ব্রহ্মচারীর আশ্রমে। সন্ন্যাসীর পরামর্শেই তিনি বৈদ্যনাথের মন্দির থেকে দেড় কিলোমিটারের দূরত্বে রাধাকৃষ্ণের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ১৪৬ ফুট উচ্চতার ওই মন্দিরটির স্থাপত্য দেখার মতো। গ্রানাইট এবং মার্বেল পাথরে ওই মন্দিরটি তৈরি করতে সে যুগে নয় লক্ষ টাকা খরচ করেছিলেন রানি। সেই থেকেই মন্দিরের নাম নওলাখা মন্দির।

ত্রিকূট পাহাড়

ত্রিকূট পাহাড়ের নৈসর্গিক দৃশ্যও নজরকাড়া।

ত্রিকূট পাহাড়ের নৈসর্গিক দৃশ্যও নজরকাড়া।

ত্রিকূট পাহাড়ের তিনটি চূড়া। তিনটি চূড়ার নাম হিন্দুদের তিন দেবতা ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের নামে। পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, জ্যোতির্লিঙ্গ লাভের পরে দেবতাদের চক্রান্তে রাবণ যেখানে অবতরণ করেছিলেন, সেটি ছিল ত্রিকূট পাহাড়। তবে ত্রিকূটের বিশেষত্ব শুধু পৌরাণিক গল্পে নয়। এখানকার নৈসর্গিক দৃশ্য নজরকাড়া। গোটা দেওঘর শহরটিকেই ছবির মতো দেখা যায় পাহাড় থেকে। এখান থেকেই উৎপত্তি ময়ূরাক্ষী নদীর। অনেকেই ত্রিকূটে ট্রেক করেন। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়। আগে রোপওয়ে ছিল। কিন্তু একটি দুর্ঘটনার পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

কুণ্ডেশ্বরী মাতার মন্দির

কুণ্ডেশ্বরী মন্দির সংলগ্ন দালান।

কুণ্ডেশ্বরী মন্দির সংলগ্ন দালান।

নওলাখা মন্দির থেকে দেওঘর বিমানবন্দরের দিকে দু’কিলোমিটির গেলে পড়বে কুণ্ডেশ্বরী মাতার মন্দির। নির্জন এলাকার মধ্যে মন্দিরটি। খুব বেশি দেখাশোনা যে হয় না, তা বোঝা যায়। কুন্ডেশ্বরী মাতার মন্দিরে রয়েছেন অষ্টধাতুর সিংহবাহিনী মা জগদ্ধাত্রী। সাথে পাশেই রয়েছে শিব, পার্বতী, গণেশ, লক্ষ্মী-নারায়ণ ও নবগ্রহের মন্দির। এর এক পাশে একটি দোতলা বাড়ি। নাম রামকৃষ্ণ পাদুকাভবন। শোনা যায়, রামকৃষ্ণদেব তাঁর মামার বাড়ি বেড়াতে এসে এখানে এসেছিলেন। থেকেও ছিলেন কিছু দিন। সেই স্মৃতিই জড়িয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাড়িটি। সেখান থেকে আরও কিছু দূর গেলে পাঁচিল ঘেঁষা জীর্ণ নহবতখানা। বোঝা যায়, এক কালে জমজমাট ছিল এলাকা। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে করুণ দশা।

তপোবন

তপোবন পাহাড়।

তপোবন পাহাড়।

কুণ্ডেশ্বরী মন্দির থেকে কিছু দূরেই রয়েছে তপোবন। সবুজে ঘেরা পাথুরে পাহাড়টিতে উঠতে আধঘণ্টা লাগবে। পথে পড়বে বহু মন্দির, গুহা। পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছলে মন ভাল হয়ে যাবে। চার পাশে নীল সবুজের ছড়াছড়ি। নীচে দেখা যাবে শহরের প্যানোরামিক ভিউ।

এ ছাড়াও আরও অনেক কিছু দেখার আছে দেওঘরে। তবে উপরের জায়গাগুলি না দেখলেই নয়। দেওঘর শহরের কেন্দ্রস্থল হল টাওয়ার চক। সেখানে গেলে ঘড়ির বড় টাওয়ারটি চোখ এড়াবে না। এ ছাড়াও দেখে নিতে পারেন বালানন্দ আশ্রম, ফুলঝুরি পাহাড়, নন্দন পাহাড়, প্রভু জগদবন্ধু আশ্রম, সৎসঙ্গ আশ্রম ইত্যাদি।

কী খাবেন?

ছাতু আর আলুর পুর দেওয়া পরোটা।

ছাতু আর আলুর পুর দেওয়া পরোটা।

দেওঘরে গেলে পেঁড়া না খেয়ে আসা ‘অপরাধ’-সমান। বৈদ্যনাথের মন্দিরের আশপাশেই বহু দোকানে পেঁড়া পাবেন। এ ছাড়া চেখে দেখতে ভুলবেন না দেওঘরের রাবড়ি, দেশি ঘি, আলু এবং ছাতুর পুর দিয়ে দিয়ে তৈরি পরোটা, বেলের মোরব্বা এবং তিলকূট। বাঙালি খাবারের বহু রেস্তরাঁ পাওয়া যাবে টাওয়ারচক এলাকায়। তবে চাইলে ঝাড়খণ্ডের প্রাদেশিক থালিও চেখে দেখতে পারেন।

কী ভাবে যাবেন?

দেওঘরের রেল স্টেশন জসিডি। হাওড়া, শিয়ালদহ বা সাঁতরাগাছি থেকে জসিডি যাওয়ার বহু দূরপাল্লার ট্রেন পাবেন। সময় লাগবে সাড়ে ৬ থেকে সাড়ে ৮ ঘণ্টা। এ ছাড়া সড়কপথেও দেওঘরে যাওয়া যায়। গাড়িতে ১০ ঘণ্টা মতো সময় লাগতে পারে।

Deoghar Weekend Trip Poila Baisakh 2025
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy