Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Durga Puja 2022

নররক্ত ছাড়া পুজো সম্পূর্ণ হয় না আজও! কোলাহল এড়িয়ে ঘুরে আসতে পারেন উত্তরবাংলার বনেদি বাড়ি

যাঁরা পুজো পরিক্রমায় কিছুটা স্বাদ বদল করতে চান, তাঁরা পুজোর মধ্যেই ঘুরে আসতে পারেন উত্তরবঙ্গের দুই বনেদিবাড়িতে। বনেদিবাড়ির পুজোর দ্বিতীয় পর্বে এমনই পুজোর হদিস দিচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন।

গ্রামবাংলার বেশ কিছু রাজবাড়িতে এখনও পুজো হয় শতাব্দীপ্রাচীন সব রীতিনীতি মেনে।

গ্রামবাংলার বেশ কিছু রাজবাড়িতে এখনও পুজো হয় শতাব্দীপ্রাচীন সব রীতিনীতি মেনে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৪:০২
Share: Save:

‘থিম’ পুজোর রমরমার মধ্যে স্বাদবদল করতে চান পুজো পরিক্রমায়? ঘুরে দেখতে পারেন বাংলার আনাচেকানাচে ছড়িয়ে থাকা বেশ কিছু বনেদি বাড়ির পুজো। বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে এমন কিছু পুজো যা মনে করিয়ে দেয় কয়েকশো বছরের ঐতিহ্যের কথা। কালের নিয়মে জৌলুস কমলেও গ্রাম বাংলার বেশ কিছু রাজবাড়িতে এখনও পুজো হয় শতাব্দীপ্রাচীন সব রীতিনীতি মেনে। প্রথম পর্বে দক্ষিণবঙ্গের তেমনই তিনটি পুজোর হদিস দিয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইন। এই পর্বে রইল উত্তরবঙ্গের দুই জমিদার বাড়ির কথা।

কোচবিহার রাজবাড়ি

কোচবিহার রাজবাড়ির থেকে মিনিট পাঁচেকের দূরত্বে রয়েছে দেবীবাড়ি। সেখানেই পুজো হয়। প্রায় ৫০০ বছর আগে কোচবিহারের রাজা নর নারায়ণের আমলে এই পুজোর সূচনা হয়। আরাধ্য দেবীর নাম বড়দেবী। সাধারণত দুর্গাপ্রতিমা বলতে যে ছবি মাথায় আসে, তার থেকে এই দেবী কিছুটা আলাদা। দুর্গার সঙ্গে লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ ও কার্তিককে দেখতেই অভ্যস্ত বাঙালি। কিন্তু বড়দেবীর প্রতিমায় আরাধ্য দেবীর সঙ্গে থাকে জয়া এবং বিজয়ার মূর্তি। বাহন হিসাবে সিংহের বদলে থাকে বাঘ।

প্রায় ৫০০ বছর আগে কোচবিহারের রাজা নর নারায়ণের আমলে এখানে পুজোর সূচনা হয়।

প্রায় ৫০০ বছর আগে কোচবিহারের রাজা নর নারায়ণের আমলে এখানে পুজোর সূচনা হয়। নিজস্ব চিত্র

পুজোর রীতিতেও রয়েছে বেশ কিছু মৌলিকত্ব। ময়না গাছের কাঠের উপর তৈরি হয় প্রতিমা। অষ্টমীর দিন মহিষ বলি হয়। এমনকি, পুজোতে লাগে নররক্তও! রাজপুরোহিত হরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “এখনও বড়দেবীর পুজোয় নররক্ত দেওয়ার প্রথা রয়েছে। অষ্টমীর রাতে গুপ্ত পুজো হয়। সেখানেই মানুষের রক্ত দেওয়া হয়। আগে কচ্ছপ বলির প্রচলন ছিল, এখন তার বদলে মাগুর মাছ বলি দেওয়া হয়।’’

বড়দেবীর প্রতিমায় আরাধ্য দেবীর সঙ্গে থাকে জয়া এবং বিজয়ার মূর্তি।

বড়দেবীর প্রতিমায় আরাধ্য দেবীর সঙ্গে থাকে জয়া এবং বিজয়ার মূর্তি। নিজস্ব চিত্র

প্রসাদ পাবেন কী ভাবে?

পুজো সবার জন্যই উন্মুক্ত। ভক্তরা নিজেরাই বিভিন্ন ধরনের ভোগ কিনে পুজোয় দেন। সেই প্রসাদই পাওয়া যায়। ট্রাস্টের পক্ষ থেকে আলাদা করে ভোগপ্রসাদ খাওয়ানোর ব্যবস্থা নেই।

আর কী দেখবেন

গোটা কোচবিহার শহর জুড়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এখানকার রাজাদের প্রচুর নিদর্শন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোচবিহারের রাজপ্রাসাদ ও মদনমোহন দেবের মন্দির। লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসের আদলে ১৮৮৭ সালে রাজপ্রাসাদটি তৈরি করেন কোচবিহারের তৎকালীন রাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ। প্রথমে তিন তলা থাকলেও ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পের ফলে প্রাসাদটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সংস্কারের পর প্রাসাদটি দোতলা হয়েছে।

লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসের আদলে রাজপ্রাসাদটি তৈরি করেন কোচবিহারের তৎকালীন রাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ।

লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসের আদলে রাজপ্রাসাদটি তৈরি করেন কোচবিহারের তৎকালীন রাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ। নিজস্ব চিত্র

রাজবাড়ির ভিতরেই রয়েছে একটি জাদুঘর। সেখানে রাজপরিবারের নানা ঐতিহ্যপূর্ণ জিনিস তুলে ধরা হয়েছে পর্যটকদের জন্য। দেখতে পাবেন যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্রও। রয়েছে বিভিন্ন জনজাতির ব্যবহৃত আসবাবপত্র ও পোশাক-পরিচ্ছেদ। দেখতে পারেন প্রাচীন মদনমোহন মন্দিরও।

রাজবাড়ির পাশাপাশি ঘুরে দেখতে পারেন প্রাচীন মদনমোহন মন্দিরও।

রাজবাড়ির পাশাপাশি ঘুরে দেখতে পারেন প্রাচীন মদনমোহন মন্দিরও। নিজস্ব চিত্র

বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ি, জলপাইগুড়ি

কথিত আছে ৫১৩ বছর আগে শিশু সিংহ ও বিশু সিংহ নামের দুই ভাই খেলার ছলে মাটির মূর্তি গড়ে প্রথম এই দুর্গাপুজোর সূচনা করেন। পরবর্তী কালে এই শিশু সিংহ জলপাইগুড়ি বৈকুণ্ঠপুর রাজ এস্টেটের রাজা হন। সেই রাজ্যপাট না থাকলেও পুজো বন্ধ হয়নি এখনও। দেবী এখানে তপ্ত কাঞ্চনবর্ণা। অর্থাৎ সোনা গলালে যে রং হয় প্রতিমার গায়ের রং তেমনই।

সোনা গলালে যে রং হয় বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির প্রতিমার গায়ের রং তেমনই।

সোনা গলালে যে রং হয় বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির প্রতিমার গায়ের রং তেমনই। নিজস্ব চিত্র

মহালয়ায় সোনার একটি দুর্গামূর্তিতে চক্ষুদান হয়। প্রতিপদে বসে ঘট। অষ্টমীতে মধ্যরাতে এখানে বিশেষ অর্ধরাত্রি পুজোর প্রচলন রয়েছে। শোনা যায় এই পুজোতে আগে নরবলির প্রচলন ছিল। এখন তার বদলে শোলা ও খড় দিয়ে মানুষ তৈরি করে তা বলি দেওয়া হয়। সঙ্গে বলি দেওয়া হয় শোলমাছ।

প্রসাদের কী বন্দোবস্ত?

পুজোয় ইলিশ, কাতলা ও চিতলের মতো পাঁচ রকমের মাছ, হাঁসের ডিম ও পাঁঠার মাংস দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়। বাইরের কেউ ভোগ দিতে পারেন না। রাজবাড়ির সদস্যরাই ভোগ দেন। তবে ঠাকুর দেখতে যেতে পারেন সকলেই।

আর কী দেখবেন?

রাজবাড়ির পাশেই রয়েছে জলাশয় ও বনদফতরের তৈরি বিনোদন পার্ক। তবে যদি হাতে সময় নিয়ে যান, তবে ঘুরে দেখে নিতে পারেন গজলডোবা ও লাটাগুড়ি অরণ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2022
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE