শুক্রবার দোল। শনি-রবিও ছুটির দিন। হিসাব দাঁড়াল তিন। টানা তিন দিনের ছুটিতে পায়ের তলায় সর্ষে যাঁদের, তাঁরা যে বেরিয়ে পড়বেন এ আর নতুন কথা কী!
কিন্তু যাবেন কোথায়? শান্তিনিকেতন, পুরী, পুরুলিয়া, না কি দিঘা মন্দারমণি? এই বছর কলকাতাবাসীর পর্যটনের তালিকায় এগিয়ে কোন স্থান, খোঁজ নিল আনন্দবাজার ডট কম।
বসন্ত উৎসব, দোলের উদ্যাপন এক এক জনের কাছে এক এক রকম। কেউ রঙেই মাতোয়ারা হতে চান, কেউ চান প্রিয় মানুষ, পরিজনদের নিয়ে বেরিয়ে পড়তে।
সেই তালিকায় বরাবরই নাম জুড়ে যায় শান্তিনিকেতনের। বসন্ত উৎসবের সঙ্গে শান্তিনিকেতনের নিবিড় যোগ। প্রতি বছরই সেখানে যাওয়ার হিড়িক থাকে। তবে গত কয়েক বছরে শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসব উদ্যাপন নিয়ে একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এখন দোলের দিনের আগে থেকে ঘরোয়া ভাবে নিয়ম মেনে উৎসব পালন করে বিশ্বভারতী। সে ভাবে বৃহত্তর জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে না।
সে কারণেই কি না জানা নেই, তবে কলকাতা এবং শহরতলির অন্তত চার থেকে পাঁচটি ভ্রমণ সংস্থাই জানাচ্ছে, আলাদা ভাবে শান্তিনিকেতন নিয়ে প্রশ্ন, জিজ্ঞাসা বা আগ্রহ আর তেমন দেখা যাচ্ছে না। একেবারেই যে কেউ যেতে চাইছেন তা নয়, তবে উৎসাহ খানিক কম।
বরং শান্তিনিকেতন, দিঘা, মন্দারমণি, দার্জিলিং বাদ দিয়ে দোলের ভ্রমণের তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে পুরুলিয়া। ‘কুন্ডু স্পেশ্যাল’ থেকে ‘ব্যানার্জি ট্যুর স্পেশ্যাল’, শহরতলির ভ্রমণ সংস্থা ‘ভ্রমর’, ‘ডে ড্রিমার্স’, ‘ট্রিপ উথ উইমেন’— ভ্রমণ ব্যবস্থাপকেরা বলছেন, এই বছর সবচেয়ে বেশি উৎসাহ পুরুলিয়া নিয়েই। গড়পঞ্চকোট, বড়ন্তি, অযোধ্যা পাহাড় যেতে চাইছেন অনেকে। তালিকায় আছে পুরী, ঝাড়গ্রামও।
বসন্ত মানেই রঙিন ক্যানভাস। সেজে ওঠা প্রকৃতি। কিন্তু শহরের আকাশছোঁয়া বহুতলে সেই শিমুল-পলাশের রূপ উপভোগের সুযোগ কই! তাই এই মরসুমে শিমুল-পলাশের সৌন্দর্যের প্রতি টান পর্যটকদের। পুরুলিয়ার গড়পঞ্চকোট, বড়ন্তি এমন মরসুমে ‘আগুন’ রূপে ধরা দেয়।
কুন্ডু স্পেশ্যালের সৌমিত্র কুন্ডু বললেন, ‘‘এই সময়ে কাশ্মীর, বৃন্দাবন, ভুটান অনেক ধরনের ট্যুর থাকছে। এই সব জায়গাতেও লোকে যাচ্ছেন। তবে দোলের মরসুমে পুরুলিয়া, পুরী, ডুয়ার্স নিয়ে আলাদা ভাবে আগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেকেই।’’
আরও পড়ুন:
পুরুলিয়ার পাশাপাশি এই বছর ঝাড়গ্রাম নিয়ে লোকজনের উৎসাহের কথা বলছেন ব্যানার্জি ট্যুর স্পেশ্যালের অংশীদার রণজিৎ অধিকারী। তিনি বলছেন, ‘‘গন্তব্য হিসাবে এক নম্বরে পুরুলিয়া। তার পরেই রয়েছে ঝাড়গ্রাম। রাঁচি, নেতারহাটও বেছেছেন অনেকে। পুরী নিয়ে উৎসাহ কম নেই। কেউ কেউ সুন্দরবনেরও খোঁজ করছেন। সকলেই দিন তিনেকের মধ্যে বেরিয়ে ফিরে আসতে চাইছেন।’’
বসন্তে শিমুল-পলাশে রঙিন হয়ে থাকে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশার অনেক জায়গাই। দিঘা, মন্দারমণি বা দার্জিলিং নয়, বরং একটু অফবিট, কোলাহল-বর্জিত গন্তব্যও বেছে নিচ্ছেন কেউ কেউ। ‘ভ্রমর’ ভ্রমণ সংস্থার ব্যবস্থাপক ঝুমকি বিশ্বাস জানালেন, এই বছর তাঁরা পর্যটকদের নিয়ে গিরিডি, মধুপুর, শিমুলতলা যাচ্ছেন। অনেকেই এই জায়গাটির কথা বলেছিলেন বলে দোল উদ্যাপনে শিমুলতলা বেছে নিয়েছিলেন। এ ছাড়া পুরুলিয়া, পুরী তো আছেই।
পুরী নিয়ে বছরভরই উৎসাহ থাকে বঙ্গবাসীর। এ বছর দোলেও সেই চল রয়েছে পুরোদমে। প্রতিটি ভ্রমণ সংস্থায় মানছেন সে কথা। কেউ চান পলাশের টানে ছুটে যেতে। কেউ আবার দুটো দিন শহুরে কোলাহলের বাইরে একটু অন্য রকম ভাবে ছুটি কাটনোই মনস্থ করেন। ফলে, কারও কারও ভ্রমণের তালিকায় থাকছে সিমলিপালের অরণ্যও। সবুজ বনানী আলো করে থাকা রঙিন পলাশের টানই এ ক্ষেত্রে মুখ্য।
আরও পড়ুন:
‘নাড়ির টানে নারীর ভ্রমণ’-এর অন্বেষা ঘোষ আবার বলছেন, তাঁদের সিমলিপালের ট্রিপ কয়েক মাস আগেই বুক হয়ে গিয়েছে। এ ছাড়া, তাঁর কাছে অনেকে বাঁকুড়াও গন্তব্য হিসাবে বেছে নিতে চাইছেন কেউ কেউ। ‘ট্রিপ উইথ উইমেন’-এর চুয়া ভট্টাচার্য জানালেন, শুশুনিয়া পাহাড়, মুকুটমণিপুর নিয়েও উৎসাহ রয়েছে বহু পর্যটকের।
দোলের সময়ে কেউ কেউ যে লম্বা ভ্রমণে উৎসাহী নয়, তা কিন্তু নয়। অনেকেই শ্রীলঙ্কা, কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ বেছে নিচ্ছেন। আবার যাঁদের ছুটি নিয়ে টানাটানি বা বাজেট নিয়ে ভাবনা রয়েছে, তাঁরা চাইছেন পুরুলিয়া কিংবা ঝাড়গ্রাম। সুযোগ হলে পুরী।