দৈনন্দিন কাজে যাচ্ছিলেন ডেলিভারি বয়। তখনই রাস্তার ধারে দেখতে পেলেন অদ্ভুত এক বালিশ। সেই বালিশের উপর লেখা একটি সংখ্যা। ছাপানো নয়, রক্ত দিয়ে লেখা। সেই ডেলিভারি বয়ের তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণের কারণে সমাধান হল এক রহস্যের। প্রাণ বাঁচল ৩০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নিজের বাড়িতেই আটকে পড়া এক মহিলার। গত ১২ অগস্ট অদ্ভুত সেই ঘটনাটি ঘটেছে চিনের সিচুয়ান প্রদেশে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর হইচই পড়েছে সে দেশ জুড়ে।
আরও পড়ুন:
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডেলিভারি বয় হিসাবে কর্মরত ওই তরুণের নাম ঝাং। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। গ্রীষ্মের ছুটিতে হাতখরচের জন্য ডেলিভারি বয় হিসাবে কাজ করছিলেন তিনি। জানা গিয়েছে, গত ১২ অগস্ট একটি পার্সেল পৌঁছোতে যাওয়ার সময় রাস্তার ধারে একটি পরিত্যক্ত বালিশ দেখতে পান ঝাং। পথচারীরা বালিশটি এড়িয়ে গেলেও ঝাং কৌতূহলবশত বালিশটি তুলে দেখেন। তার পরেই চমকে যান তিনি। ঝাং দেখেন, বালিশের উপর রক্ত দিয়ে লেখা ‘১১০৬২৫’। প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও দ্রুত নিজেকে সামলে নেন তরুণ। পুরো বিষয়টি পুলিশকে জানান। এর পরেই ঘটে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা।
আরও পড়ুন:
পুলিশ জানিয়েছে, ঘর পরিষ্কারের সময় দুর্ঘটনাবশত দরজা বন্ধ হয়ে নিজের বাড়িরই একটি কামরায় আটকে পড়েন সিচুয়ান প্রদেশের বাসিন্দা এক মহিলা। বহুতলের ২৫ তলার ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন ওই মহিলা। তাঁর মোবাইল অন্য ঘরে ছিল। ফলে সাহায্যের জন্য কাউকে ডাকার কোনও উপায় তাঁর কাছে ছিল না। মহিলা যে ঘরে আটকে পড়েছিলেন, সেখানে কোনও শৌচাগারও ছিল না। ফলে তাঁর পরিস্থিতি আরও অসহনীয় হয়ে ওঠে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকার পর পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য জানলায় একটি লাল রঙের পোশাক ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। শেষমেশ বাধ্য হয়ে আঙুল কেটে ওই কামরায় থাকা একটি বালিশের উপর রক্ত দিয়ে ১১০৬২৫ সংখ্যাটি লেখেন তিনি। তার পর সেটি রাস্তায় ছুড়ে দেন। সেই বালিশই ঝাংয়ের নজরে পড়ে। বহু ক্ষণের চেষ্টায় উদ্ধার করা হয় মহিলাকে।
আরও পড়ুন:
পুলিশ জানিয়েছে ৩০ ঘণ্টার উপর নিজের ঘরে আটকে ছিলেন ওই মহিলা। পুলিশের তরফে এ-ও জানানো হয়েছে, ১১০ চিনের জরুরি ‘হেল্পলাইন নম্বর’ এবং ৬২৫ মহিলার অ্যাপার্টমেন্টের নম্বর। সে কারণেই বালিশ ওই দু’টি সংখ্যা লিখে রাস্তায় ছুড়ে দিয়েছিলেন মহিলা। আর সেটাই হয়ে ওঠে তাঁর উদ্ধারের চাবিকাঠি। দ্রুত পদক্ষেপ করে পুলিশ ওই বাড়ির ২৫ তলায় গিয়ে মহিলাকে উদ্ধার করে। মহিলাকে যখন উদ্ধার করা হয়, তখন তিনি অচৈতন্য অবস্থায় ছিলেন বলেও পুলিশ জানিয়েছে।
জানা গিয়েছে, জ্ঞান ফেরার পর পুলিশকে দেখে স্বস্তির কান্নায় ভেঙে পড়েন মহিলা। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ঝাংকে টাকা দেওয়ার চেষ্টাও করেন। কিন্তু তরুণ টাকা নিতে রাজি হননি। পুলিশের তরফেও ধন্যবাদ জানানো হয়েছে ঝাংকে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ডেলিভারি বয়ের সময়োপযোগী ফোনের কারণেই মহিলাকে বিপদের হাত থেকে উদ্ধার করা গিয়েছে।