Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
মোয়াজ্জেম অধরাই

খণ্ডঘোষের খুনে ধৃত ১৮

কুপিয়ে, গুলি করে মারা হয়েছে তিন জনকে। অথচ গোটা দিন পেরিয়ে গেলেও ঘটনাস্থলে কয়েকটা বাঁশ ছাড়া কিছুই পুলিশ খুঁজে পায়নি। পুলিশ ও নিহতদের পরিবারের দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়েছে, বর্ধমানের খণ্ডঘোষ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা প্রাক্তন ব্লক তৃণমূল সভাপতি মোল্লা মোয়াজ্জেম ওরফে মণির নেতৃত্বেই এই খুন।

খণ্ডঘোষে তিন তৃণমূল কর্মী খুনে ধৃতদের আদালতে তোলা হচ্ছে। ছবি: উদিত সিংহ

খণ্ডঘোষে তিন তৃণমূল কর্মী খুনে ধৃতদের আদালতে তোলা হচ্ছে। ছবি: উদিত সিংহ

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৫ ০৩:২৯
Share: Save:

কুপিয়ে, গুলি করে মারা হয়েছে তিন জনকে। অথচ গোটা দিন পেরিয়ে গেলেও ঘটনাস্থলে কয়েকটা বাঁশ ছাড়া কিছুই পুলিশ খুঁজে পায়নি।

পুলিশ ও নিহতদের পরিবারের দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়েছে, বর্ধমানের খণ্ডঘোষ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা প্রাক্তন ব্লক তৃণমূল সভাপতি মোল্লা মোয়াজ্জেম ওরফে মণির নেতৃত্বেই এই খুন। কিন্তু মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তিনি অধরাই।

পুলিশের দাবি, রবিরার রাতে লাঠি, টাঙ্গি, বাঁশ, লোহার রড নিয়ে পরস্পরের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তৃণমূলের দুই পক্ষ। তাতেই তিন জনের প্রাণ যায়। সোমবার রাতে ৪৩ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করে তার ভিত্তিতে ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

অথচ, নিহতদের পরিবারের দাবি, সংঘর্ষের কথা পুলিশের বানানো। গোষ্ঠী বিদ্বেষের জেরে ফোন করে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে খুন করা হয় তিন জনকে। এ দিন বর্ধমান আদালতে ধৃতদের আইনজীবীরাও দাবি করেন, নিরীহ গ্রামবাসীদের ধরে আনা হয়েছে। ওই ১৮ জনের মধ্যে ১২ জন এ দিন সকালে খেতে কাজ করছিলেন। সিভিক ভলান্টিয়ার্সদের একটি দল মাঠ থেকেই তাঁদের আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। বাকিদের মধ্যে চার জন জামালউদ্দিনের এবং দু’জন মোয়াজ্জেমের অনুগামী বলে এলাকায় পরিচিত। সব মিলিয়ে, খণ্ডঘোষে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে তিন কর্মী খুনের ঘটনায় জেলা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

রবিবার গভীর রাতে খণ্ডঘোষের ওঁয়ারি গ্রামে মহম্মদ জামালউদ্দিন-সহ যে তিন জন খুন হন, সকলেই খণ্ডঘোষ ব্লক তৃণমূল সভাপতি অলোক মাজির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। স্থানীয় সূত্রের খবর, অলোকবাবুর সঙ্গে মোয়াজ্জেম হোসেনের দ্বন্দ্বে গত এক বছর ধরে বারবার উত্তপ্ত হয়েছে এলাকা। তার পিছনে দক্ষিণ দামোদরে বালি খাদানের দখলদারির অঙ্ক যেমন আছে, তিনশোর বেশি চালকল থেকে টাকা তোলার হিসেবও রয়েছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় পঞ্চায়েত যাঁর কব্জায় থাকবে, কারবারের নিয়ন্ত্রণও তাঁর হাতেই থাকবে। তাই প্রতিপত্তি বজায় রাখার লড়াই দুই পক্ষই চালিয়ে গিয়েছে। খণ্ডঘোষ পঞ্চায়েত কোন গোষ্ঠীর দখলে থাকবে তা নিয়েই এই সংঘর্ষ বলে পুলিশের দায়ের করা অভিযোগে জানানো হয়েছে।

খণ্ডঘোষের ওসি সুদীপ ঘোষের দায়ের করা ওই অভিযোগ অনুযায়ী, রবিবার রাতে ওঁয়ারিতে মোয়াজ্জেম হোসেনের নেতৃত্বে ৩২ জন এবং মহম্মদ জামালউদ্দিনের (অলোক-ঘনিষ্ঠ) নেতৃত্বে ১৫ জনের মধ্যে লাঠি, টাঙ্গি, বাঁশ, লোহার রড নিয়ে সংঘর্ষ হয়। বোমাবাজিও হয়েছে। এত ‘বড়’ ঘটনা সত্ত্বেও ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ চার ফুটের ন’টা বাঁশ ছাড়া কিছু পেল না কেন, অভিযুক্তদের আইনজীবীরা আদালতে এই প্রশ্ন তুলেছেন।

নিহতদের পরিজনেরা অবশ্য দাবি করছেন, আদৌ কোনও সংঘর্ষ হয়নি। তাঁদের যুক্তি, এক দিকে তিন জন খুন হয়ে গেল, আর এক দিকে কারও গায়ে আঁচড়টুকুও লাগল না, এটা আদৌ বিশ্বাস্য নয়। এ দিন সকালে জামালউদ্দিনের ভাই ফিরোজ শেখ মোয়াজ্জেম-সহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে পৃথক অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ জানায়, তাদের মামলার সঙ্গে ওই অভিযোগও যুক্ত করে নেওয়া হয়েছে। বর্ধমানের সিজেএম সালিম আহমেদ আনসারি ধৃতদের মধ্যে পাঁচ জনকে চার দিন পুলিশ হেফাজতে, বাকিদের ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

এ দিন বারবার চেষ্টা করেও অলোক মাজির সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তৃণমূল সূত্রের খবর, এলাকায় যাতে আর কোনও গোলমাল না হয়, তার জন্য দলের নির্দেশেই তিনি ফোন বন্ধ করে রেখেছেন এবং কারও সঙ্গে দেখা করছেন না। কিন্তু মোয়াজ্জেমের ব্যাপারে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন এড়ানো যাচ্ছে না। বছর দেড়েক আগে এক তৃণমূল কর্মী খুনেও তাঁর নাম জড়িয়েছিল। ওই মামলায় তিনি এখন জামিনে রয়েছেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, গত শুক্রবার তাঁর ডেরায় বোমা মেলায় পুলিশ তাঁকে আটক করেও এক মন্ত্রীর কথায় ছেড়ে দেয়। জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল অবশ্য বলেন, “সব অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার জন্য তল্লাশি চালানো হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

khandaghosh burdwan soumen dutta trinamool tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE