এই গাড়িতে যাতায়াত কচিকঁচাদের। ডান দিকে, স্কুলের বিজ্ঞপ্তি। নিজস্ব চিত্র
দুর্ঘটনা এড়াতে স্কুলগাড়ির কাগজপত্র, চালকের পরিচয়পত্র-সহ প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দেওয়ার আবেদন করে নোটিস দিল বসিরহাট শহরের একটি স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রশাসনের পক্ষে অবৈধ গাড়ি বন্ধে কড়া পদক্ষেপ করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
বসিরহাট সাঁইপালা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেওয়ালে লাগানো নোটিসে স্কুলগাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট গাড়ির সামনের কাচে লাগানোর কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে আছে আরও কিছু নির্দেশ, পরামর্শ। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সৈকত রায় বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে আনার জন্য ৪টি পায়ে টানা ভ্যান রিকশা থাকলেও আমাদের কোনও স্কুলগাড়ি নেই। তবে কোনও কোনও অভিভাবক নিজেদের মতো করে গাড়ির ব্যবস্থা করেন। তাঁদের বলা হয়েছে, গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট, চালকের লাইসেন্সের ফটোকপি যেন তাঁরা নিজেদের কাছে রাখেন। এক কপি স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছেও জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।’’
সাঁইপালা প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০৩৪। শিক্ষিক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মী ১৮ জন। বুধবার দেখা গেল, এক একটি স্কুলগাড়িতে ১৫-২০ জন শিশুকে গাদাগাদি করে তোলা হয়েছে। সময়ের পাননি বলে পরিবহণ দফতরে যাওয়া হয়ে ওঠেনি, লাইসেন্সও রিনিউ করা হয়নি বলে জানালেন একটি গাড়ির চালক। তাঁর কথায়, ‘‘মালিকের গাড়ি চালাই। গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট আছে কিনা আমার জানা নেই।’’ তাঁর ছোট গাড়িতে ১৭ জন শিশুকে স্কুলে আনা-নেওয়া করেন ওই চালক।
ওই গাড়িতে দেখা গেল, আসন সংখ্যা বাড়াতে সিট খুলে অবৈধ ভাবে লাগানো গ্যাস সিলিন্ডারের উপরে তোয়ালে পেতে শিশুদের বসার জায়গা করা হয়েছে। এই সিলিন্টার ব্যবহার করে গাড়ি চালানোও বেআইনি। এ সব দেখতে অভিভাবকদের সচেতনতা জরুরি বলে মনে করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। একটি স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি অসিত মজুমদার বলেন, ‘‘অতিরিক্ত জোরে গাড়ি চালানোর জন্য শহরে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। জোরে গাড়ি চালানোর জন্য চালকদের বিরুদ্ধ কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি পুলিশ ও প্রশাসনের উচিত, অতিরিক্ত শিশুকে বহন করলে গাড়ি আটক করা। চালকদের লাইসেন্সও বাতিল করা দরকার সে ক্ষেত্রে।’’ বেআইনি এই সব গাড়িতে বাচ্চাদের যাতায়াত বন্ধ করতে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে, সে জন্য প্রচার দরকার বলেও তাঁর মত।
বসিরহাট মহকুমায় কয়েকশো ছোট গাড়িতে এ ভাবেই বাচ্চাদের স্কুলে দেওয়া-নেওয়া করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পরিবহণ দফতর। এ বিষয়ে বসিরহাট মহকুমা পরিবহণ আধিকারিক রথীন মজুমদার বলেন, ‘‘প্রতিদিনই অবৈধ গাড়ি এবং চালকদের ধরপাকড় চলছে। চালকের লাইসেন্স এবং গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট না থাকায় স্কুলগাড়ির বিরুদ্ধে দফতর কড়া পদক্ষেপ শুরু করেছে।’’ তাঁর দাবি, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং মাদ্রাসা পরীক্ষার পরে মহকুমার সব স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক করা হবে। অবৈধ স্কুলগাড়ি পুরোপুরি বন্ধের চেষ্টা করা হবে।
বসিরহাট পুলিশ জেলার সুপার কঙ্করপ্রসাদ বাড়ুই বলেন, ‘‘সব পক্ষকে নিয়ে সচেতনতা শিবির করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। গাড়ি রাস্তায় বের করার বৈধ নথি আছে কিনা, তা জানতে সর্বত্র নজরদারি চলছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় গাড়ির মালিক এবং চালকদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy