Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Residential complex

‘নিরাপদ আশ্রয়’ বলেই কি এখানে লুকোয় অপরাধীরা

রাজ্য পুলিশের এক অফিসারের বক্তব্য, এ শহরে বড় বড় তিনটি স্টেশন রয়েছে। যেগুলির সঙ্গে ভিন্ রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব ভাল।

আগ্রহ: আশপাশের আবাসনের ছাদে দাঁড়িয়ে দেখছে উৎসুক জনতা। বুধবার, নিউটাউনে।

আগ্রহ: আশপাশের আবাসনের ছাদে দাঁড়িয়ে দেখছে উৎসুক জনতা। বুধবার, নিউটাউনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২১ ০৬:০১
Share: Save:

আপাত ভাবে শান্ত শহরতলির একটি এলাকা। তার চেয়েও বেশি শান্ত ও নিরিবিলি এক আবাসন। সেখানে রুটি-রুজির খোঁজে ভিন্ রাজ্য থেকে আসা মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়।

গোয়েন্দাদের মতে, এই সব কারণেই শহর ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকা বেছে নিচ্ছে অপরাধীরা। অপরাধ করার জন্য নয়, অন্যত্র অপরাধ করে এসে লুকিয়ে থাকার জন্য। প্রমাণ হিসেবে গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছরে শুধু কলকাতা থেকেই তাঁদের জালে ধরা পড়েছে প্রায় দু’ডজন সন্ত্রাসবাদী। যাদের কেউ জেএমবি-র জঙ্গি, তো কেউ আল-কায়দার।

রাজ্য পুলিশের এক অফিসারের বক্তব্য, এ শহরে বড় বড় তিনটি স্টেশন রয়েছে। যেগুলির সঙ্গে ভিন্ রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব ভাল। শহর থেকে মাত্র তিন ঘণ্টার দূরত্বেই আন্তর্জাতিক সীমান্ত। ফলে খুব সহজেই সীমান্ত পারাপার করা যায়। এখানে লাখো মানুষের ভিড়ে বাড়ি ভাড়া নিয়ে গা-ঢাকা দেওয়াও তুলনায় সহজ। কিন্তু, এ ভাবে শহরের বুকে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে পুলিশের গুলির লড়াইয়ের ঘটনা ঘটেছে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি।

উত্তরপ্রদেশের কুখ্যাত ডন বাবলু শ্রীবাস্তবের ‘ডান হাত’ মনজিৎ সিংহ মাঙ্গে দলবল নিয়ে এ শহরে এসেছিল ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে। কলকাতার এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করাই ছিল উদ্দেশ্য। তাকে ধরতে পঞ্জাব পুলিশের একটি দল আসে কলকাতায়। শীতের সকালে পঞ্জাব পুলিশ তাড়া করে পিছন থেকে গুলি করে মেরেছিল মনজিতের সঙ্গীকে। আহত হয় মনজিৎ।

ওই বছরই কলকাতা পুলিশের সঙ্গে রোমহর্ষক গুলির লড়াই হয়েছিল ব্যাঙ্ক ডাকাতির পাণ্ডা ওয়াজেদ অকুঞ্জির। লেক টাউনের একটি ফ্ল্যাটে সে লুকিয়ে ছিল। জানতে পেরে পুলিশ অফিসারেরা সেখানে হানা দেন। ঠিক যেমন বুধবার নিউ টাউনে হানা দেওয়া হয়েছিল। তাতে গুলিবিদ্ধ হন পুলিশ অফিসার মনোজ দাস। কিন্তু অকুঞ্জিকে ছাড়েননি তিনি।

৩০ বছর আগে, ১৯৯১ সালে খলিস্তানি সংগঠনের সদস্য এক দম্পতি লুকিয়ে ছিল তিলজলায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে। আবার সেই পঞ্জাব পুলিশ। সে দিনও গুলির লড়াইয়ে ওই দম্পতির মৃত্যু হয়। ১৯৯৩ সালে বব্বর খালসা গোষ্ঠীর এক সদস্য ভবানীপুরে বলরাম ঘোষ স্ট্রিটে লুকিয়ে ছিল। পুলিশ নয়, সে বার তার বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকেরা পঞ্জাব থেকে এসে গুলি করে তাকে খুন করে পালিয়ে যায়।

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, এ ছাড়াও আরও এমন বহু ঘটনা আছে, যেখানে গুলির লড়াই না-হলেও এ শহরে দুষ্কৃতীদের লুকিয়ে থাকার খবর মিলেছে। ২০০১ সালে তিলজলায় খাদিম-কর্তা অপহরণের ঘটনা ঘটে। তখনই জানা যায়, হুজি জঙ্গি গোষ্ঠীর আফতাব আনসারিরা কলকাতাকে জঙ্গিদের আশ্রয়ের জন্য ‘নিরাপদ’ শহর হিসেবে বেছে নিয়েছে।

পরের বছর জানুয়ারি মাসে আমেরিকান সেন্টারে হামলার ঘটনায় যুক্ত দুষ্কৃতীরা তিলজলা ও তপসিয়ায় লুকিয়ে ছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, ২০০৭ সালে বেঙ্গালুরুতে একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার অফিসে হামলা চালায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আল বদর। পরে লালবাজারের গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ওই ঘটনায় তিন ধৃতের এক জন মহম্মদ ফৈয়াজের পাসপোর্ট তৈরি হয়েছিল কলকাতায়, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের একটি ভুয়ো ঠিকানা দিয়ে।

২০০৯ সালে পাকিস্তান রেঞ্জারের সদস্য শাহবাজ ইসমাইলকে ফেয়ারলি প্লেস থেকে ধরেছিল কলকাতা পুলিশ। কলকাতা জঙ্গিদের জন্য কতটা নিরাপদ জায়গা, তা জানা গিয়েছিল ২০১৫ সালে জোড়াসাঁকো থেকে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থার সদস্য আখতার খান নামে এক জঙ্গিকে গ্রেফতার করার পরে। তাকে জেরা করে গার্ডেনরিচ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল আরও দু’জনকে। যারা পাকিস্তান ঘুরে এসে সেখানে লুকিয়ে ছিল।

এক গোয়েন্দা-কর্তা জানান, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য ইয়াসিন ভাটকল এক সময়ে কলকাতায় লুকিয়ে ছিল নাম ভাঁড়িয়ে। মামুলি চুরির ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে জামিন পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার কয়েক বছর পরে জানা যায়, ওই দুষ্কৃতী আসলে ইয়াসিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Miscreants criminals Residential complex
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE