Advertisement
E-Paper

রেণুপদর জমিতে দু’কোটির স্কুল

এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে কুলতলিতে রেণুপদর দান করা জমিতে তৈরি হচ্ছে আধুনিক মানের প্রাথমিক স্কুল ও ‘স্কিল ডেভলেপমেন্ট সেন্টার’। যার অর্থসাহায্য আসছে সুদূর তাইওয়ান থেকে।

সমীরণ দাস

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:২০

তাইওয়ান নামে যে একটা দেশ আছে, ক’দিন আগেও সে কথা জানতেনই না কুলতলির বামনমোল্লার চক গ্রামের বাসিন্দা রেণুপদ বৈদ্য। অথচ সেই দেশের সঙ্গেই নাম জড়িয়ে গিয়েছে অশীতিপর এই কৃষকের।

এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে কুলতলিতে রেণুপদর দান করা জমিতে তৈরি হচ্ছে আধুনিক মানের প্রাথমিক স্কুল ও ‘স্কিল ডেভলেপমেন্ট সেন্টার’। যার অর্থসাহায্য আসছে সুদূর তাইওয়ান থেকে।

রেণুপদর বহুদিনের সাধ ছিল, গ্রামে স্কুল হোক। গ্রামের ছেলেমেয়েরা সেখানে পড়াশোনা করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হোক। কিন্তু সামান্য জমিতে ফসল ফলিয়ে কোনও রকমে দিনগুজরান তাঁর। ক্ষমতা কতটুকু! মনের ইচ্ছা তাই মনেই থেকে গিয়েছিল।

হঠাৎ করেই একদিন স্বপ্নপূরণের সুযোগ চলে এল রেণুপদর সামনে। বছর কয়েক আগে থেকেই গ্রামে যাতায়াত ছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার। উন্নয়নের নানা কাজ শুরু করে তারা। গ্রামেরই কিছু যুবককে নিয়ে গড়ে তোলে এক সংগঠন। সেটিই সব কাজ পরিচালনা করে। জনস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে তৈরি করে দেওয়া হয় শৌচালয়। কৃষিকাজের সুবিধার জন্য গ্রামেই বানানো হয় ছোটখাটো একটি ‘ফার্ম হাউস’। যেখানে বীজ সংরক্ষণ, চারা তৈরি করার মতো কাজ হয়। গ্রামের শিশুদের নিয়ে পড়াশোনার ব্যবস্থাও শুরু করেছিল সংস্থাটি। এই সূত্রেই সংস্থার লোকজনের কাছে একদিন মনের কথা পেড়ে ফেলেন রেণুপদ। বোঝান, প্রত্যন্ত এই গ্রামে একটি ভাল স্কুল তৈরি কত জরুরি। শিক্ষাক্ষেত্রে কাজ করার পরিকল্পনা ছিলই সংস্থাটির। রেণুপদর কথায় তা গতি পায়।

যদিও সমস্যা অনেক। প্রথম সমস্যা জমি। সেই সমস্যা সমাধান করতে অবশ্য মুশকিল আসান হয়ে এগিয়ে আসেন রেণুপদই। নিজের দশ কাঠা জমি দান করে দেন স্কুলের জন্য। দ্বিতীয় সমস্যা ছিল টাকার। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি টাকার জন্য দেশবিদেশে ছড়িয়ে থাকা তাদেরই বিভিন্ন শাখার সঙ্গে কথা বলে। তাইওয়ানের শাখা কুলতলিতে এসে প্রকল্প দেখে টাকা দিতে সম্মত হয়। বরাদ্দ ২ কোটি টাকার সিংহভাগই আসছে সে দেশ থেকে। চলতি মাসেই উদ্বোধন স্কুলের।

স্কুলের পাশে একচালার মাটির ঘরে পরিবার নিয়ে থাকেন রেণুপদ। উদ্বোধনের দিন যত এগিয়ে আসছে, ততই উত্তেজনা বাড়ছে আশি ছুঁইছুঁই বৃদ্ধের। জানান, গ্রামের ছেলেমেয়েরা ভাল স্কুলে পড়বে, বড় হয়ে চাকরিবাকরি করবে— এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে! স্থানীয় গ্রামবাসী সুভাষ হালদার বলেন, ‘‘এ রকম একটা স্কুল আমাদের এলাকায় হলে খুব ভাল হয়। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে অনেক নিশ্চিন্ত হওয়া যায়।’’ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য সুকমল চৌধুরী বলেন, ‘‘রেণুপদ যা করেছেন, খুব কম মানুষই তা করতে পারেন।’’

বেহাল পথঘাটের জন্য স্কুলের কাজে প্রাথমিক ভাবে অসুবিধা হচ্ছিল। তবে রাস্তা সারাইয়ের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। উদ্বোধনের আগে কাজ শেষ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্রশাসন। স্থানীয় জালাবেড়িয়া ১ পঞ্চায়েতের প্রধান অসীম হালদার বলেন, ‘‘স্কুলের কথা মাথায় রেখেই প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তার সংস্কার হচ্ছে। রাস্তা কংক্রিটের করার প্রস্তাবও পেশ করা হয়েছে।’’ স্কুলের ব্যাপারে তাঁর মত, ‘‘খুবই ভাল উদ্যোগ। এলাকায় এ রকম স্কুল ছিল না। স্থানীয় ছেলেমেয়েরা ভাল স্কুলে পড়বে, এর থেকে ভাল আর কী হতে পারে!’’

School Land NGO Taiwan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy