বচসা থেকে গোলমাল গড়িয়েছিল ধস্তাধস্তিতে। সেই সময়েই এক রেলযাত্রী ধাক্কা মারেন অপর যাত্রীকে। সেই ধাক্কায় প্ল্যাটফর্ম থেকে সোজা রেললাইনে গিয়ে পড়েন অন্য যাত্রী। সেই ঘটনার দু’দিন পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে সেই রেলযাত্রীর।
গত শনিবার রাতে বিরাটি স্টেশনের ওই ঘটনায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল আহত যাত্রীকে। সোমবার দুপুরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম গোপাল দাস (৩৭)। তাঁর বাড়ি নিমতার ফতুল্লাপুরে। ওই ঘটনায় তাঁর পরিবারের তরফে বারাসত জিআরপিতে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যার ভিত্তিতে অনুপ চক্রবর্তী নামের এক রেলযাত্রীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁকে এ দিন বারাসত এসিজেএম আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
ঘটনার রাতে ৮টা ৩৯ মিনিট নাগাদ ডাউন বারাসত লোকালে বাড়ি ফিরছিলেন পেশায় বেসরকারি সংস্থার কর্মী গোপাল। স্থানীয় সূত্রের খবর, তীব্র গরমে উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যে দরজায় হাওয়া আটকে দাঁড়ানো নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে বচসা শুরু হয়েছিল। অভিযুক্ত রেলযাত্রী অনুপ ট্রেনের দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাই নিয়ে গোপাল-সহ কয়েক জনের সঙ্গে বচসা শুরু হয়। এর মধ্যে গোপালের সঙ্গে বিবাদ চরমে ওঠে।
মৃতের পরিবারের অভিযোগ, বিরাটি স্টেশনে ট্রেন থামলেও গোলমাল থামেনি। উল্টে ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেন থেকে নেমে বিবাদ আরও চরমে ওঠে। অভিযোগ, অনুপ গোপালকে বেধড়ক মারধর করতে করতে আচমকা ধাক্কা দেন। তার জেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে রেললাইনের উপরে গিয়ে পড়েন গোপাল। তাঁর মাথা ফেটে যায়। ছুটে আসেন প্ল্যাটফর্মেথাকা অন্য রেলযাত্রী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তাঁদের কয়েক জন অনুপকে ধরে ফেলেন। পাশাপাশি, গুরুতর জখম গোপালকে উদ্ধার করে রাতেই উত্তর দমদম পুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, গোপালের স্ত্রী মণিকা বসাক দাস অভিযোগে জানিয়েছেন যে, প্রথমে তিনি স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। পরে এক ব্যক্তি স্বামীর ফোন ধরে জানান যে, তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালে গেলে বলা হয়, আরও বড় কোনও হাসপাতালে নিয়ে যেতে। এর পরে জিআরপির এক আধিকারিকের সাহায্যে ভিআইপি রোডের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে গোপালকে ভর্তি করানো হয়। গোপালের এক বন্ধু রাজু বলেন, ‘‘সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট দেখে কোনও আশা দেখাতে পারেননি চিকিৎসকেরা। তবুও শেষ চেষ্টা করা হয়েছিল। অস্ত্রোপচার করেও লাভহল না।’’
ফতুল্লাপুরে গোপালের বাড়িতে তাঁর বাবা, মা, স্ত্রী ও এক সন্তান রয়েছেন। তিনিই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। এ দিন তাঁর মৃত্যুর খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েছে তাঁর পরিবার। প্রতিবেশীদের কথায়, ‘‘পরিবারটা ভেসে গেল। অভিযুক্তের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)