সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে জেঠার হাতে খুন হয়েছিল এগারো বছরের বালক। ২০২৪ সালের সেই ঘটনায় অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করল বারাসতের সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত (সপ্তম)। এনজার নবি নামে ওই ব্যক্তির সাজা ঘোষণা হওয়ার কথা আগামী কাল, বুধবার। এই ঘটনা ঘিরে বারাসতে এক সময়ে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছিল। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক গণপিটুনির ঘটনাও ঘটেছিল। যার পিছনে এনজারের চক্রান্ত কাজ করেছিল বলেই বারাসত পুলিশ জেলা দাবি করেছিল।
বারাসতের কাজিপাড়ার বাসিন্দা ছিল এগারো বছরের ফারদিন নবি। তার বাবা গোলাম নবির সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ ছিল জেঠা এনজারের। গোলামের চরম ক্ষতি করে দেবে বলে এক সময়ে এনজার হঁশিয়ারি দিয়েছিল। তা বলে নিজের এগারো বছরের ভাইপোকে যে সে খুন করবে, তা বুঝে উঠতে পারেননি কেউই। যে কারণে এনজারকে গ্রেফতারের পরে পুলিশ যখন তাকে নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে কাজিপাড়ায় যায়, তখন প্রতিবেশীরা ছাড়াও এনজারের আত্মীয়দেরও দেখা গিয়েছিল তাকে গালিগালাজ করতে।
২০২৪ সালের ৯ জুন রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলফারদিন। চার দিন পরে একটি পরিত্যক্ত শৌচাগার থেকে তার পচন ধরা দেহ উদ্ধার হয়েছিল। নিজেকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখতে স্থানীয় মসজিদ থেকে মাইকে এনজারঘোষণা করেছিল, ফারদিনকে ছেলেধরা ধরে নিয়ে গিয়েছে। খুন করে ফারদিনের কিডনি পাচার করে দেওয়া হয়েছে। এর পরে দাবানলের মতো এনজারের ঘোষণাউত্তর শহরতলি তো বটেই, রাজ্যেরও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। ছেলেধরার আতঙ্কে রাস্তায় নেমে পড়েন সাধারণ মানুষ। বারাসত তো বটেই, পার্শ্ববর্তী জেলাতেও ভবঘুরে, মানসিক ভারসাম্যহীন কাউকে রাস্তায় ঘুরতে দেখলেই গণপ্রহার দেওয়া হচ্ছিল। কাজিপাড়ায় নির্মম ভাবে পেটানো হয় এক মহিলাকে। ওই সময়ে রাজ্যে ১৩টিজায়গায় গণপিটুনির ঘটনায় চার জনের মৃত্যুও হয়।
শেষে তদন্ত চালিয়ে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে গত ১৯ জুন ফারদিন খুনে বারাসত থানার পুলিশ এনজার নবিকে গ্রেফতার করে। ভারতীয় দণ্ডবিধির (৩৬৩) অপহরণ, (৩০২) খুন এবং (২০১) তথ্যপ্রমাণলোপাটের ধারায় এনজারের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে বারাসত থানার পুলিশ। বারাসত আদালতের সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা কোর্টের বিচারক প্রজ্ঞাগার্গী ভট্টাচার্যের (হুসেন) এজলাসে। ২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর এনজারের বিরুদ্ধে আদালতেচার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। ২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি চার্জ গঠন হয়। ওই মামলায় ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণকরা হয়েছে। আগামী বুধবার মামলার সাজা শোনাবেন বিচারক প্রজ্ঞাগার্গী।এ দিন আদালতে এসেছিলেন ফারদিনের বাবা গোলাম ও মা রুবিনা। তাঁরা জানান, তাঁরা এনজারের ফাঁসি চান। মামলায় সরকার পক্ষের আইনজীবী সৌম্যজিৎ রাহা বলেন, ‘‘বিচারক বুধবার সাজা ঘোষণা করবেন। নৃশংস খুনের ঘটনার পরে অভিযুক্ত এনজারের ছেলেধরা ও কিডনি পাচারের অসত্য গল্পেসমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল। আমরা সর্বোচ্চ সাজার দাবি জানাব।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)