Advertisement
২১ মে ২০২৪

আত্মঘাতী কিশোরী, সৎ বাবা অভিযুক্ত প্ররোচনায়

একাদশ শ্রেণির ছাত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উঠল সৎ বাবার বিরুদ্ধে। মেয়েটি সুইসাইড নোটে লিখে গিয়েছে সে কথা। মেয়ের মা-ও ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে দেহ আটকে বিক্ষোভও দেখায় জনতা।

রিশা চক্রবর্তী।—নিজস্ব চিত্র।

রিশা চক্রবর্তী।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৬ ০২:২০
Share: Save:

একাদশ শ্রেণির ছাত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উঠল সৎ বাবার বিরুদ্ধে। মেয়েটি সুইসাইড নোটে লিখে গিয়েছে সে কথা। মেয়ের মা-ও ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে দেহ আটকে বিক্ষোভও দেখায় জনতা।

ঘটনাটি বসিরহাটের দালালপাড়ার। মৃত কিশোরীর নাম রিশা চক্রবর্তী (১৭)। তার বাবা রাজা চক্রবর্তী সৎ বাবা সপ্তর্ষি সিংহের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার খোঁজ চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) আনন্দ রায় বলেন, ‘‘মৃতের কাছ থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। তাতে ওই ছাত্রী মৃত্যুর জন্য সপ্তর্ষি সিংহকে দায়ী করেছে। একটি মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর বাইশ আগে রাজা চক্রবর্তীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল পম্পার। ওই দম্পতির তিন ছেলেমেয়ে। বছর দেড়েক আগে তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদও হয়ে যায়। তারপর থেকে রাজা বসিরহাটের বাড়ি বিক্রি করে চলে যান গোবরডাঙায়। তাঁদের বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। রিশা আর তার ভাই থাকত দালালপাড়ায় মা পম্পার সঙ্গে। সে আবার বিয়ে করেছিল সপ্তর্ষিকে। সপ্তর্ষির এটা তৃতীয় বিয়ে।

অভিযোগ, সৎ বাবা ভাল ভাবে খেতে-পরতে দিত না ছেলেমেয়েদের। প্রতিবাদ করতে দেখা যেত না মা পম্পাকে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, অত্যাচার এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, বাইরের লোকজনের সামনেও মারধর চলত। মেয়েকে বার বার আত্মহত্যা করতে বলত সপ্তর্ষি, এমনটা একাধিক বার শুনেছেন এলাকার লোকজন। এমনকী, স্থানীয় ক্লাবের ছেলেরা সপ্তর্ষিকে এ ভাবে অত্যাচার করতে নিষেধ করেছিল। তারপর থেকে ঘরে জোরে গান চালিয়ে ছেলেমেয়েকে পেটাত ওই ব্যক্তি। মারধরের কথা জানিয়েছে রিশার ভাই রীতেশও।

পুলিশ জানায়, বুধবার দুপুরে বাড়ির পিছনের দিকের একটি ঘরে রিশাকে গলায় ওড়নার ফাঁসে ঝুলতে দেখা যায়। তাকে উদ্ধার করে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এই খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে ফেটে পড়ে এলাকার মানুষ। বৃহস্পতিবার ময়না-তদন্তের পরে সপ্তর্ষি দেহ শ্মশানে নিয়ে যাচ্ছে জানতে পেরে এলাকার মানুষ বাধা দেয়। দেহ বাড়িতে ফিরিয়ে এনে সপ্তর্ষি-পম্পার শাস্তির দাবিতে শুরু হয় বিক্ষোভ। রাতের দিকে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। তবে তার আগেই হাওয়া গরম বুঝে এলাকা ছেড়ে পালায় সপ্তর্ষি।

স্থানীয় ক্লাবের সভাপতি অভীক মল্লিক বলেন, ‘‘অত্যন্ত মেধাবী এবং মিষ্টি স্বভাবের মেয়ে ছিল রিশা। পাড়ার সকলেই স্নেহ করত। সপ্তর্ষির জন্যই রিশার বাবা স্ত্রীকে ছেড়ে, বাড়ি বিক্রি করে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন।

তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে পম্পা বলে, ‘‘ছেলেমেয়েকে সব বাবা-মা একটু-আধটু বকাবকি-মারধর করে। আমরাও পড়াশোনা নিয়ে বকতাম।’’ তার দাবি, একটা ছেলের সঙ্গে মেয়ের প্রেমের সম্পর্কের কথা জানাজানি হওয়ায় মেয়েকে মেরেছিলাম ঠিকই, কিন্তু তা বলে এত বড় সিদ্ধান্ত নেবে, ভাবিনি।’’

কী বলছেন পম্পার প্রাক্তন স্বামী রাজা?

তাঁর কথায়, ‘‘সপ্তর্ষির জন্যই আমার সংসার ভেঙেছে। ওদের অকথ্য অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ছেলেমেয়ে আমার কাছে চলে আসতে চেয়েছিল। ওরাই আসতেই দেয়নি। শেষমেশ মেয়েকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suicide Student Father
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE