Advertisement
E-Paper

ম্যানগ্রোভ সাফ করে দোকান তৈরির অভিযোগ নামখানায়

বন্যা ঠেকাতে বাঁধ বরাবর দেওয়া হয়েছিল ইট ও কংক্রিটের ব্লক। লাগানো হয়েছিল ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ। কিন্তু নামখানার হরিপুর পঞ্চায়েতের হরিপুর বাজারে সে সব এখন অতীতের খাতায় চলে যেতে বসেছে।

শান্তশ্রী মজুমদার

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৬ ০৬:৫৩
এ ভাবেই তৃণমূলের পতাকা লাগিয়ে দখল হচ্ছে বাঁধের জায়গা। —নিজস্ব চিত্র।

এ ভাবেই তৃণমূলের পতাকা লাগিয়ে দখল হচ্ছে বাঁধের জায়গা। —নিজস্ব চিত্র।

বন্যা ঠেকাতে বাঁধ বরাবর দেওয়া হয়েছিল ইট ও কংক্রিটের ব্লক। লাগানো হয়েছিল ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ। কিন্তু নামখানার হরিপুর পঞ্চায়েতের হরিপুর বাজারে সে সব এখন অতীতের খাতায় চলে যেতে বসেছে।

পরিবেশ বাঁচানো দূরের কথা, এই এলাকায় ম্যানগ্রোভ এবং বাঁধের ক্ষতি করে অবৈধ ভাবে দোকানঘর তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের মদতে। গত সপ্তাহে স্থানীয় বাসিন্দারা বন দফতর এবং ব্লক প্রশাসনে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানালেও থানা কিংবা ব্লক প্রশাসন কেউই ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যেই দোকান তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।

এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, মিস্ত্রি লাগিয়ে বাঁধের গায়ে লাগানো কংক্রিটের ব্লক খুঁড়ে তোলার কাজ চলছে। ম্যানগ্রোভের জঙ্গলের অনেকটাই ফাঁকা। সেখানে বাঁশ কাঠ দিয়ে দোকান তৈরির কাঠামো তৈরি হয়েছে। সেখানে লাগানো তৃণমূলের পতাকা।

এলাকায় গেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘‘দোকান তৈরির কাজ চলছে। কিন্তু তার বেশি কিছু জানি না।’’ যদিও অনেকের অভিযোগ, হরিপুর খেয়াঘাট থেকে হরিপুর বাজার পর্যন্ত সুন্দরিকা নদীর পাড় বরাবর প্রায় ৫০০ মিটার এলাকায় ভাঙন রুখতে ২০০৯ সালে সেচ দফতর ও স্থানীয় পঞ্চায়েতের চেষ্টায় ম্যানগ্রোভ লাগানো হয়েছিল। তাতে কাজও হয়েছিল। কিন্তু এখন নজরদারি অভাবে সেগুলি নষ্ট হতে বসেছে।

হরিপুর পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা ভরত সাঁতরার অভিযোগ, বিষয়টি বন দফতর এবং বিডিওকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কেউই ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বন দফতরের এক কর্তার দাবি, ম্যানগ্রোভ কাটা হচ্ছে এমন কোনও খবর তাঁদের কাছে নেই। গ্রামবাসীদের দাবি, গোড়া থেকে ম্যানগ্রোভ কেটে নেওয়ার পরে উপরে পলি পড়ে গেলে সেখানে আগে কী ছিল সেটা বোঝা সম্ভব নয়।

স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান বন্যিবন্যা কর বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এ রকম গাছ কাটা, কংক্রিটের ব্লক তোলা বা দোকান তৈরির কোনও খবর নেই।’’ কিন্তু বাঁধ থেকে ব্লক তোলা হচ্ছে— এ রকম ছবি রয়েছে বলার পরে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ছবি তো কম্পিউটারেও তৈরি করা যায়।’’ যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতা নিমাই মণ্ডল দোকান তৈরির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘হ্যাঁ, দোকান হচ্ছে। তবে এক ধারে।’’ নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূল শ্রীমন্ত মালি বলেন, ‘‘এরকম ঘটনা ঘটলে নিশ্চয় আমি জানতে পারতাম। বাঁধের ব্লক খুলবে এত কার সাহস? তবু বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’’

নামখানার বিডিও অমৃতা রায় বর্মনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। কাকদ্বীপের এসডিও রাহুল নাথ বিষয়টি শুনে বলেন, ‘‘খতিয়ে দেখব।’’

কয়েক দিন আগে কাকদ্বীপ মহকুমার বন্যাপ্রবণ এলাকা ঘুরে বাঁধের অবস্থার দিকে সেচ কর্তাদের নজরদারি চালাতে বলেছিলেন সেচ দফতরের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। কোথায় কোথায় বাঁধের অবস্থা খারাপ, কোথায় ব্লক সরে গিয়েছে, সে সম্পর্কে তথ্য রাখতে বলেছিলেন তিনি। কিন্তু সে সব যে আদপে কিছুই হয়নি, তার প্রমাণ হরিপুরের ঘটনা।

এই গাফিলতির রাস্তা ধরেই কোটালের জল ঢুকে গোটা গ্রাম ভাসাতে পারে। তখন কী টনক নড়বে প্রশাসন এবং নেতাদের? প্রশ্ন করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

mangrove shops
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy