Advertisement
E-Paper

প্রশাসনের আপত্তিতে বন্ধ অতিরিক্ত খাবার

গত দু’বছর ধরে বাসন্তীর নফরগঞ্জের নীলকণ্ঠপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জয়গোপালাপুর আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের মিড ডে মিলের সঙ্গে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া ব্যবস্থা করে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। দু’টি স্কুলের প্রায় ২৫০ জন ছাত্রছাত্রীকে মিড ডে মিলের সঙ্গে ডিম, মাছ, মাংস, দুধ, ফল, হরলিক্স দেওয়া হয়।

সামসুল হুদা

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৭ ০৬:৪০
অধ্যয়ন: নীলকণ্ঠপুর স্কুলে এ ভাবেই চলছিল কম্পিউটার ক্লাস। নিজস্ব চিত্র

অধ্যয়ন: নীলকণ্ঠপুর স্কুলে এ ভাবেই চলছিল কম্পিউটার ক্লাস। নিজস্ব চিত্র

স্কুলের বেশির ভাগ শিশু অপুষ্টিতে ভোগে। তাই ২৫০ স্কুলপড়ুয়াকে মিড ডে মিলের সঙ্গে অতিরিক্ত পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল এক সংস্থা। কিন্তু ব্লক প্রশাসনের আপত্তিতে সেই ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেল বলে অভিযোগ উঠল। প্রশাসনের পাল্টা বক্তব্য, সরকারি স্কুলে অনুমতি ছাড়া এমন কাজ করা যায় না।

গত দু’বছর ধরে বাসন্তীর নফরগঞ্জের নীলকণ্ঠপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জয়গোপালাপুর আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের মিড ডে মিলের সঙ্গে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া ব্যবস্থা করে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। দু’টি স্কুলের প্রায় ২৫০ জন ছাত্রছাত্রীকে মিড ডে মিলের সঙ্গে ডিম, মাছ, মাংস, দুধ, ফল, হরলিক্স দেওয়া হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়েরা জানান, এই এলাকায় ৪০ শতাংশেরও বেশি শিশু অপুষ্টিজনিত অসুখে ভোগে। ২০১৫ সালে স্থানীয় বাসিন্দা সত্যরঞ্জন দাসের সঙ্গে নীলকণ্ঠপুর প্রাথমিক স্কুলের এক অনুষ্ঠানে আসেন সংস্থার সদস্য ভূপাল লাহিড়ি। সেখানেই এই সমস্যার কথা জানতে পারেন ভূপালবাবু। তখন থেকেই চালু হয় এই ব্যবস্থা। পাশাপাশি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, কলকাতা থেকে টেলি কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে নানা বিষয়ে পড়ানোর ব্যবস্থাও হয়। পড়াশোনার চাপ কমাতে শিশুদের জন্য বড় স্ক্রিনে বিভিন্ন কমিক্স ও শিক্ষামূলক ছবি দেখানো হয়।

অভিভাবকদের অভিযোগ, অতিরিক্ত পুষ্টিকর খাবার দেওয়া নিয়ে ব্লক প্রশাসনের আপত্তিতেই তা দেওয়া বন্ধ রেখেছে স্কুল। অভিভাবক তপতী জানা, প্রতিমা মণ্ডলরা জানান, আগে প্রায়ই পেটের অসুখ, জ্বর, দুর্বলতায় ভুগত শিশুরা। এখন তারা অনেক সুস্থ। যে বাচ্চারা স্কুলে আসতেই চাইত না, তারা স্কুলমুখী হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা অসিত দেশাই, মানস প্রামাণিক, সমীর মণ্ডলরাও এই অভিনব উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, যে ভাবে এলাকার শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাবার থেকে শুরু করে আধুনিক প্রযুক্তিতে শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তাতে উপকৃত হচ্ছিল শিশুরা। প্রশাসন যদি এমন কাজ করে তবে তা ঠিক নয় বলেও অভিমত তাঁদের। নফরগঞ্জ পঞ্চায়েত প্রধান ঝর্ণা সিংহ বলেন, “স্কুলে অতিরিক্ত খাবার দেওয়া নিয়ে বিডিও ও স্কুল পরিদর্শক আপত্তি জানিয়েছেন বলে শুনেছি। খাবার দেওয়ার ফলে এলাকার বাচ্চারা উপকৃত হচ্ছে। এই উদ্যোগ যাতে বন্ধ না হয়, সে জন্য আমি তাদের সঙ্গে কথা বলব।” তবে ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে ছাত্রছাত্রীদের জন্য কিছু করতেই পারেন, তবে সরকারি মিড ডে মিলের সঙ্গে খাবারের ব্যবস্থা না করে আলাদা করে ব্যবস্থা করা উচিত। তা ছাড়া, সরকারি অনুমতি ছাড়া স্কুলের কোনও বাচ্চাকে কিছু খাওয়ানোর পর তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে তার দায় কে নেবে, প্রশ্ন প্রশাসনের। তাদের দাবি, সরকারি অনুমতি ছাড়া নিজেদের মতো করেই কাজ করছে সংস্থাটি। বাসন্তীর বিডিও কল্লোল বিশ্বাসের অবশ্য বক্তব্য, “আমি অতিরিক্ত খাবার দেওয়ার ব্যাপারে স্কুলের কাছে আপত্তি করিনি। তা বন্ধ করে দিতেও বলা হয়নি। এমন একটি জিনিস হচ্ছে জেনে স্কুল পরিদর্শককে খোঁজ নিয়ে জানাতে বলেছিলাম।” তা ছাড়া বিষয়টি স্কুল শিক্ষা দফতরের অধীন বলেও জানান কল্লোলবাবু। বাসন্তীর স্কুল পরিদর্শক সন্দীপ চক্রবর্তীর দাবি, “স্কুলকে অতিরিক্ত খাবার দেওয়া বন্ধ করে দিতে বলা হয়নি। বিডিও কথামতো খোঁজ নেওয়া হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিবেক পাল বলেন, “আমি চাই পড়ুয়ারা সুস্থ থাকুক। সে জন্য ওই সংস্থার কাজে আপত্তি করা হয়নি। তবে এ নিয়ে সমস্যা হলে তো কাজ বন্ধ রাখতে হবেই।”

যাদের নিয়ে বিতর্ক সেই সংস্থার পক্ষ থেকে কী জানানো হয়েছে? ভূপালবাবুর কথায়,“এটি অত্যন্ত অমানবিক সিদ্ধান্ত। শিশুরা যাতে অপুষ্টিতে না ভোগে সে জন্য কিছু পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেখানা প্রশাসন আমাদের পাশে না দাঁড়িয়ে উল্টে তা বন্ধ করে দিতে বলছে।”

Basanti বাসন্তী মিড ডে মিল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy