Advertisement
E-Paper

তিন ‘কন্যা’ ছাড়া পাশে নেই কেউ, ট্রেনে অসুস্থ বৃদ্ধার মৃত্যু

সোমবার হাবড়া স্টেশনে শিয়ালদহ–বনগাঁ লোকালের মহিলা কামরা থেকে অচৈতন্য এক বৃদ্ধাকে কার্যত পাঁজাকোলা করে প্ল্যাটফর্মে নামালেন তিন যুবতী। সাহায্য চাইলেন সহযাত্রীদের কাছে বৃদ্ধাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ছুটলেন রেল পুলিশের খোঁজে।

— প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৫ ০৭:৪৫
Share
Save

ঘড়ির কাঁটা তখন বেলা সাড়ে ১১টা ছাড়িয়েছে। সোমবার হাবড়া স্টেশনে শিয়ালদহ–বনগাঁ লোকালের মহিলা কামরা থেকে অচৈতন্য এক বৃদ্ধাকে কার্যত পাঁজাকোলা করে প্ল্যাটফর্মে নামালেন তিন যুবতী। সাহায্য চাইলেন সহযাত্রীদের কাছে বৃদ্ধাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ছুটলেন রেল পুলিশের খোঁজে। অভিযোগ, সাড়া মেলেনি রেলযাত্রী বা হকারদের কাছ থেকে। উপায় না দেখে টোটোয় করে ওই মেয়েরাই হাবড়া হাসপাতালে নিয়ে যান বৃদ্ধাকে। ডাক্তার কিছুক্ষণ পরেই জানান, মৃত্যু হয়েছে আরতি কর্মকার (৬২) নামে হাবড়ার বাসিন্দা ওই বৃদ্ধার।

ঘটনায় নাগরিক সমাজের মানবিক মুখ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বনগাঁ লোকালে অসুস্থ হওয়া আরতির পাশে থাকা পূজা কুণ্ডু, সুমনা খাতুন ও তনি সরকার। বছর পঁচিশের পূজা বিবাহিত। ব্যক্তিগত কাজে অশোকনগর থেকে হাবড়ায় আসছিলেন। অশোকনগরের গুমার বাসিন্দা বছর একুশের সুমনা চিকিৎসা করাতে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। নদিয়ার হরিণঘাটার নগরউখড়ার বাসিন্দা বছর তেইশের তনি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। অশোকনগরে ট্রেনে উঠেছিলেন আরতি। অসুস্থ বোধ করায় চোখে-মুখে জল দেওয়া হয়। তার পরেও জ্ঞান হারান।

পূজা, সুমনা, তনিদের ক্ষোভ, ‘‘হাবড়ায় আমরা তিন জন ওঁকে কোনও রকমে ট্রেন থেকে নামিয়ে করজোড়ে সবার কাছে সাহায্য চাইলাম। জটলা হল। কেউ দেখলেন, কেউ দেখলেন না। এ কেমন সমাজ!’’ যদিও হাবড়া রেল হকার সংগঠনের নেতা বিনয় দাস বলেন, ‘‘এমন পরিস্থিতিতে আমাদের ছেলেরা সব সময় মানুষকে সাহায্য করেন। এ দিনের ঘটনা আমরা জানতে পারিনি।’’

আরতির সঙ্গে থাকা ব্যাগের মধ্যে ব্যাঙ্কের পাসবই দেখে তাঁর নাম-ঠিকানা জানতে পারে পুলিশ। দুপুরে হাবড়া হাসপাতালে যান তাঁর পরিজনেরা। তাঁরা জানান, স্বামীর মৃত্যুর পরে একাই হাবড়ার মানিকতলা এলাকায় থাকতেন বৃদ্ধা। বিধবাভাতার টাকা তুলতে এ দিন বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। রেল পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ট্রেনে অসুস্থ হলে সহযাত্রীরা পরিজনের ভূমিকা নেবেন, এটা স্বাভাবিক। ওই তিনটি মেয়ে যা করেছেন, সেটাই অভিপ্রেত ছিল বাকিদের কাছে। ওঁদের ধন্যবাদ।’’

‘‘কিসের ধন্যবাদ?’’ বলছেন তিন কন্যা। জুড়ছেন, ‘‘এটা করতেই হত।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Death Local Train

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}