Advertisement
০২ মে ২০২৪
Jewellery Mortgage at Anganwadi Center

অঙ্গনওয়াড়ির বাজার করতে গয়না বন্ধক!

অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে এলাকার পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের প্রাথমিক পাঠ, নিয়মিক শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং তাঁদের খাবার বিলি করা হয়।

কুলতলি ব্লক অঙ্গনওয়াড়ি আধিকারিকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ কর্মীদের।

কুলতলি ব্লক অঙ্গনওয়াড়ি আধিকারিকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ কর্মীদের। —নিজস্ব চিত্র।

সমীরণ দাস , দিলীপ নস্কর
মগরাহাট শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:১৭
Share: Save:

ধার-দেনা করেই চলছেন অনেকে। এ বার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের খাবার জোগান দিতে নিজেদের গয়নাও বন্ধক রাখতে হচ্ছে বলে জানালেন মগরাহাট ২ ব্লকের বেশ কিছু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরা।

অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পরিকাঠামো ও পরিষেবা নিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যেই প্রায় তিন মাস ধরে কেন্দ্রগুলিতে খাবারের জন্য বরাদ্দ সরকারি টাকা আসছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের দাবি, টাকা না আসায় তাঁরা বিপাকে পড়েছেন। ধার-দেনা করে কোনও রকমে রান্নার কাজ চালাতে হচ্ছে। মগরাহাট ২ ব্লকের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকাদের দাবি, কানের সোনার দুল, গলায় হার বন্ধক দিয়ে, এমনকি, সুদে টাকা নিয়েও শিশুদের খাবারের জোগান দিতে হচ্ছে। সেখানকার এক সহায়িকার কথায়, “প্রথম দিকে কোনও ভাবে চালাতে পারলেও এখন শিরে সংক্রান্তি অবস্থা। এখন আর দোকানিরা বাকিতে কিছু দিতে চাইছেন না। সুদের টাকা মেটাতে না পারায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে এসে তাগাদা দিচ্ছেন।”

মগরাহাট ২ ব্লকের শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিক (সিডিপিও) তন্ময় বিশ্বাস বলেন, “সরকার অর্থ বরাদ্দ করলেই কেন্দ্রগুলি টাকা পেয়ে যাবে।”

অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে এলাকার পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের প্রাথমিক পাঠ, নিয়মিক শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং তাঁদের খাবার বিলি করা হয়। প্রসূতিরাও খাবার পান। সাধারণত প্রতি সংসদেই একটি করে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থাকে। অভিযোগ, জেলা জুড়ে বহু কেন্দ্রেই নিজস্ব ভবন নেই। ভাড়া বাড়িতে চলে কিছু কেন্দ্র। কিছু কেন্দ্র আবার পাড়ার ক্লাব বা কারও বাড়ির বারান্দায় কোনও রকমে চলছে। তার উপর দীর্ঘদিন নিয়োগ হয়নি অঙ্গনওয়াড়িতে। বহু কেন্দ্রেই প্রয়োজনের তুলনায় কম কর্মী রয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে কর্মী সঙ্কটের জেরে একজন সহায়িকা একাধিক কেন্দ্রেরও দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। খাবারের মান নিয়েও প্রায়ই নানা অভিযোগ সামনে আসে। এ সবের মধ্যেই এ বার সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে বরাদ্দ বন্ধের জন্য।

প্রশাসন সূত্রের খবর, অঙ্গনওয়াড়িতে প্রসূতি ও শিশুদের খাবার তৈরির জন্য প্রতি মাসে টাকা বরাদ্দ হয়। সেই টাকাতেই চাল, ডাল, আনাজ, ডিম কিনে রান্না করেন কর্মী-সহায়িকারা। ব্লকপিছু মাসে বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। কিন্তু অভিযোগ, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে সেই টাকাই আসছে না।

বরাদ্দের দাবিতে গত বুধবার কুলতলিতে সিডিপিও দফতরে বিক্ষোভ দেখান অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। সিডিপিও না থাকায় দফতরে তালা ঝুলিয়ে দেন তাঁরা। খবর পেয়ে সিডিপিও শুভাশিস মণ্ডল ঘটনাস্থলে এসে কর্মীদের বুঝিয়ে আশ্বস্তকরেন। পরে শুভাশিস বলেন, “কয়েক মাসের টাকা আটকে রয়েছে। জেলা থেকে টাকা এলেই বরাদ্দ দিয়েদেওয়া হবে। আশা করি দ্রুত টাকাচলে আসবে।”

কুলতলির গুড়গুড়িয়া পঞ্চায়েত এলাকার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী উমা মোড়ল বলেন, “তিন মাস ধরে টাকা আটকে আছে। আনাজ, ডিম, জ্বালানি— সব কিছুর দাম বেড়েছে। ধার-দেনা করে কতদিন চালানো সম্ভব?” কুন্দখালি পঞ্চায়েত এলাকার কর্মী জয়ন্তী তরফদারেরও একই ক্ষোভ। তাঁর কথায়, ‘‘ঠিক মতো খাবার না পেলে অভিভাবকেরা প্রশ্ন তুলছেন। আমরা আর চালাতে পারছি না।”

মগরাহাট ২ ব্লকেও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকা কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে সদস্যেরা প্রকল্পের আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করেন। সমিতির জেলা সভাপতি সুতপা রায় মণ্ডল বলেন, “প্রায় চার মাস ধরে মা ও শিশুদের খাবারের টাকা বন্ধ। আমরা ধার করে খাবার কিনে জোগান দিচ্ছি। আমরা সঙ্কটে।” তাঁর অভিযোগ, বিভিন্ন কেন্দ্রে অস্থায়ী সহায়িকা দিয়ে রান্নার কাজ করাতে হচ্ছে। তাঁদের বেতনও দিতে হচ্ছে কোনও আলাদা বরাদ্দ ছাড়াই। সুতপা বলেন, “ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বকেয়া টাকা না এলে নতুন বছর থেকে সমস্ত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে খাবার দেওয়ার কাজ বন্ধ থাকবে।” নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Magrahat Anganwadi center
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE