Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Health

মিনাখাঁয় সিলিকোসিসে ফের মৃত্যু এক জনের

এই গ্রামেই মাস তিনেক আগে নাসিরউদ্দিন মোল্লা নামে বছর আঠাশের এক সিলিকোসিস আক্রান্ত যুবকের মৃত্যু হয়েছিল।

শোকার্ত: নাসিরউদ্দিনের পরিবার। ইনসেটে, তখনও চিকিৎসাধীন নাসির।

শোকার্ত: নাসিরউদ্দিনের পরিবার। ইনসেটে, তখনও চিকিৎসাধীন নাসির। ছবি: নবেন্দু ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
মিনাখাঁ শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২২ ১১:৩৩
Share: Save:

ফের মৃত্যু হল এক সিলিকোসিস আক্রান্তের। বৃহস্পতিবার রাতে মিনাখাঁ হাসপাতালে মৃত্যু হয় ধুতুরদহ পঞ্চায়েতের গোয়ালদহ গ্রামের বাসিন্দা রহমান মোল্লার (৪০)। এই গ্রামেই মাস তিনেক আগে নাসিরউদ্দিন মোল্লা নামে বছর আঠাশের এক সিলিকোসিস আক্রান্ত যুবকের মৃত্যু হয়েছিল। স্থানীয় সূত্রের খবর, এখনও প্রায় ৩২ জন সিলিকোসিস আক্রান্ত রয়েছেন গ্রামে।

মিনাখাঁর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুমন দাস বলেন, “আগেও কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন রহমান। কিছুটা সুস্থ হয়ে ফিরে যান। এ বার আর সম্ভব হল না। এলাকার অন্যান্য সিলিকোসিস আক্রান্তদের অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল। তবে কখন কার অবস্থার অবনতি হবে, তা বলা মুশকিল।”

রহমানের বাড়িতে স্ত্রী রহিমা বিবি ও ছোট তিন ছেলেমেয়ে রয়েছে। এক মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী। রহিমা বলেন, “এত দিন চিকিৎসা করে আর্থিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছি। সরকার পাশে না দাঁড়ালে সন্তানদের নিয়ে ভেসে যেতে হবে।”

মারণ রোগ

  • ২০১৩ সালের পর থেকে এখনও পর্যন্ত সন্দেশখালির ২টি ব্লক ও মিনাখাঁয় প্রায় ৫৫ জন সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন।
  • শুধু মিনাখাঁ ব্লকেই গত কয়েক বছরে মৃত্যু হয়েছে ৩২ জনের। এখনও অসুস্থ অনেক গ্রামবাসী।

তথ্য: সংগ্রামী শ্রমিক কমিটি

স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০০৮ সাল নাগাদ আসানসোলে একটি পাথর ভাঙার কারখানায় কাজে যান রহমান। ২০১২ সাল নাগাদ বাড়ি ফিরে আসেন। তখন শারীরিক সমস্যা ছিল না। তবে ২০১৫ সাল নাগাদ রহমান অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসা শুরু হয়। ২০১৮ তে অবস্থার বেশ অবনতি হয়। বিজ্ঞান মঞ্চ এবং স্থানীয় সিলিকোসিস আক্রান্ত সংগ্রামী শ্রমিক কমিটির তরফে বাড়িতে অক্সিজেন ও অন্যান্য সামগ্রীর ব্যবস্থা করা হয়।

কমিটির সম্পাদক, স্থানীয় বাসিন্দা সইদুল পাইক জানান, ২০১৩ সালের পর থেকে এখনও পর্যন্ত সন্দেশখালির দু’টি ব্লক ও মিনাখাঁ মিলিয়ে প্রায় ৫৫ জন সিলিকোসিস আক্রান্তের মৃত্যু হল। এর মধ্যে শুধু মিনাখাঁ ব্লকেই গত কয়েক বছরে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৩২ জনের। মিনাখাঁর ধুতুরদহ পঞ্চায়েতের গোয়ালদহ, দেবিতলা, খড়িবাড়ি, ধুতুরদহ— এই চারটি গ্রামে এখনও অনেক সিলিকোসিস আক্রান্ত রয়েছেন। কারও কারও অবস্থা বেশ খারাপ বলে তাঁর দাবি। শুক্রবার রহমানের বাড়িতে যান পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রদীপ্ত সরকার ও চন্দনা মল্লিক। প্রদীপ্ত বলেন, “আমরা সিলিকোসিস আক্রান্তদের বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করছি। রহমানের একটি হুইল চেয়ারের প্রয়োজন ছিল। তা-ও কিনে দেওয়া হয়েছিল কিছুদিন আগে। চেষ্টা করেও তাঁকে বাঁচানো গেল না।” সিলিকোসিস আক্রান্তদের নিয়ে আইনি লড়াইয়ে পাশে আছেন বলে জানান তিনি। মিনাখাঁর বিডিও শেখ কামরুল ইসলাম বলেন, “সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলে পরিবার সরকারি সাহায্য পায়। এই পরিবারটি যাতে তা দ্রুত পায়, তা দেখা হচ্ছে। মৃতের স্ত্রীর বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া, অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা যাতে এই পরিবারটি পায়, সে ব্যবস্থা করা হবে।” সইদুল বলেন, “কয়েক বছর আগে সিলিকোসিস নির্ণয়ের আগেই প্রায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়। তখন এ রোগ সম্পর্কে ধারণাই ছিল না আক্রান্তদের। সেই সমস্ত পরিবারও যাতে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পায়, সে জন্য আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Minakha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE