Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
crops

Flood: জমা জলে ক্ষতির আশঙ্কা আনাজ, ধান চাষে

ক্ষতি: টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে আনাজ খেত। ভাঙড়ের সাতুলিয়ায়।

ক্ষতি: টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে আনাজ খেত। ভাঙড়ের সাতুলিয়ায়। নিজস্ব চিত্র।

সামসুল হুদা
ভাঙড়  শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২১ ০৭:৩৪
Share: Save:

গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকা। চাষের জমিতে জল জমে যাওয়ায় ধান ও আনাজ চাষে বড় ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্যতম আনাজের উৎস ভাঙড়। ভাঙড়ের শানপুকুর, ভোগালি, পোলেরহাট, ভগবানপুর, চন্দনেশ্বর, শাঁকশহর, তাড়দহ, মৌসল, মরিচা-সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর আনাজ চাষ হয়। ধানেরও চাষ হয় এই সব এলাকায়। পটল, ঝিঙে, উচ্ছে, বেগুন-সহ বিভিন্ন গ্রীষ্মকালীন আনাজ এই সময়ে মাঠে রয়েছে। ভাঙড়ে উৎপন্ন এই সব আনাজ কলকাতা ও শহরতলি-সহ শিলিগুড়ি, রায়গঞ্জ, দুর্গাপুরেও যায়। দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াতেও পাড়ি দিচ্ছে ভাঙড়ের আনাজ। কিন্তু টানা বৃষ্টির জেরে জমিতে জল জমে যাওয়ায় আনাজ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যা পরিস্থিতি, তাতে এ বার আনাজ রফতানি ধাক্কা খাবে বলেই মনে করছেন চাষিরা।

চিলেতলা, ভুমরু, বানিয়াড়া, পাঁচগাছিয়া, পোলেরহাট, কালিকাপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর ফুল চাষ হয়। পুজোর আগে এই সব এলাকায় অনেক চাষি গাঁদা, রজনীগন্ধা, গোলাপ ফুলের চাষ করেছিলেন। কিন্তু কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ফুলচাষেরও দফারফা।

ব্লক কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাঙড় ২ ব্লকের দু’হাজার হেক্টর জমিতে পটল, ঝিঙে, উচ্ছে, বেগুন, লাউ, কুমড়ো-সহ বিভিন্ন আনাজ চাষ হয়। ব্লকের প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়। বৃষ্টিতে ১০ শতাংশেরও বেশি জমির আনাজ ও ধান জলের তলায় চলে গিয়েছে।

ভাঙড় ১ ব্লকের ৫৯০ হেক্টর জমির মধ্যে ২০০ হেক্টর জমির আমন ধানের বীজতলা জলের তলায় তলিয়ে গিয়েছে। দু’হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান জলমগ্ন হয়ে গিয়েছে। ৩০০ হেক্টর জমির আনাজ জলমগ্ন।

ভুমরু গ্রামের চাষি আতিয়ার মোল্লা বলেন, “আমি এক বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছিলাম। সব মিলিয়ে ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ইতিমধ্যে বাজারে বেগুন উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে জমিতে জল জমে গিয়েছে। জল না নামলে গাছ পচে যাবে, ফসলের ক্ষতি হবে। যা পরিস্থিতি, খরচের টাকা উঠবে কিনা বুঝতে পারছি না।”

পানাপুকুর গ্রামের চাষি আনোয়ার আলি বলেন, “তিরিশ হাজার টাকা খরচ করে ১০ কাঠা জমিতে পটল চাষ করেছিলাম। টানা বৃষ্টিতে মাঠে জল জমে গিয়েছে। গাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। ফসলের পচন শুরু হয়েছে।”

ভাঙড় ১ ব্লক কৃষি আধিকারিক শফিউল হাসনাত বলেন, “যদি আর বৃষ্টি না হয় এবং জমি থেকে জল দ্রুত নেমে যায়, তা হলে ক্ষতির আশঙ্কা কম। তা ছাড়া, চাষিদের জন্য বছরে দু’বার রবি ও খরিফ মরসুমে বিমা করা হয়। সে ক্ষেত্রে যদি ফসলের তেমন ক্ষতি হয়, চাষিরা আবেদন করলে সরাসরি ক্ষতিপূরণ পাবেন।”

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় প্রায় ১ লক্ষ ৪৩ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান জলের তলায় তলিয়ে গিয়েছে।

প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার হেক্টর জমির বেগুন, লাউ,
কুমড়ো, পটল, ঝিঙে, উচ্ছে-সহ অন্যান্য গ্রীষ্মকালীন আনাজ বৃষ্টির জমা জলে ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটি টাকারও বেশি।

জেলা কৃষি দফতরের মুখপাত্র গোকুল মাইতি বলেন, “টানা বৃষ্টিতে অধিকাংশ খেতে জল জমে গিয়েছে। বৃষ্টির জমা জলে ধান ও আনাজের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। আমরা বিভিন্ন ব্লক এলাকা থেকে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব চেয়ে পাঠিয়েছি। সেই মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rainfall flood crops
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE