Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
গাইঘাটায় ছেলের হাতে বাবা খুন

ভুল করিনি, বলল পিন্টু

তদন্তকারী অফিসারেরা ওই যুবককে জেরা করে জানতে পেরেছেন, বাড়ির এক ভাড়াটিয়ার সঙ্গে বাবার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা জানতে পেরেছিলেন পিন্টু। এ নিয়ে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। পিন্টু বাবাকে ওই মহিলার সঙ্গে মেলামেশা করতে নিষেধ করেছিলেন।

পিন্টু বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র

পিন্টু বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৭ ০২:১৬
Share: Save:

ইট দিয়ে বাবার মাথা থেঁতলে দিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছিল ছেলের বিরুদ্ধে। সাড়ে তিন মাস পরে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সেই ছেলেই বললেন, ‘‘খুন করে ঠিক করেছি।’’

গাইঘাটার শিমুলপুর হরিচাঁদপল্লি এলাকায় থাকতেন বিকাশ বিশ্বাস (৪৮)। ৫ মে রাত ১১টা নাগাদ নিজের বা়ড়িতেই খুন হন তিনি। স্ত্রী নমিতাদেবী পুলিশকে জানান, ‘অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী’রা এসে হামলা চালিয়েছে। খুনির কঠোর শাস্তিও চেয়েছিলেন তিনি।

ঘটনার পর থেকে গায়েব ছিলেন বিকাশবাবুর ছেলে পিন্টু। যা পুলিশের সন্দেহ বাড়ায়। খোঁজ শুরু হয় ওই যুবকের। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ গাইঘাটার ঠাকুরনগর বাজার এলাকা থেকে পুলিশ বছর চব্বিশের ওই যুবককে ধরে। শুক্রবার বনগাঁ মহকুমা আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁকে ৭ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

কাপড় ফেরি করতেন বিকাশবাবু। একমাত্র ছেলে পিন্টু গোবরডাঙা হিন্দু কলেজ থেকে ইংরেজি অনার্স নিয়ে পাস করেছেন। চাকরির চেষ্টা করছিলেন। বাবাকে কেন খুন করতে গেলেন পিন্টু?

তদন্তকারী অফিসারেরা ওই যুবককে জেরা করে জানতে পেরেছেন, বাড়ির এক ভাড়াটিয়ার সঙ্গে বাবার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা জানতে পেরেছিলেন পিন্টু। এ নিয়ে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। পিন্টু বাবাকে ওই মহিলার সঙ্গে মেলামেশা করতে নিষেধ করেছিলেন। একে তো সংসারে অশান্তি বেধেছিল। তার উপরে মা-ছেলের সামাজিক সম্মানও নষ্ট করছিল বিকাশবাবুর এমন আচরণ। পিন্টুর বন্ধুবান্ধবেরা বিষয়টি জেনে ফেলায় ঠাট্টা-তামাশাও সহ্য করতে হত পিন্টুকে।

এই চাপ সহ্য করতে না পেরে এক সময়ে নেশার কবলে পড়েন পিন্টু। বাবাই তাঁকে জোর করে নেশা ছাড়ানোর কেন্দ্রে ভর্তি করে দেন। তাতেও আপত্তি ছিল ওই যুবকের।

ঘটনার দিন রাতে বাবার সঙ্গে অশান্তি বাধে ছেলের। অভিযোগ, লাঠি, ইট দিয়ে বাবার মাথা থেঁতলে দেন পিন্টু। পরে হাসপাতালে মারা যান ওই ব্যক্তি।

তদন্তে নেমে পুলিশ পরে জানতে পেরেছে, বাবার মৃত্যুর পরে বিহারে ভারত-নেপাল সীমান্তে চলে গিয়েছিলেন পিন্টু। সেখানে হাতুড়ে ডাক্তারের কাজ জুটিয়ে নেন। কিন্তু তাঁর মোবাইল টাওয়ার লোকেশনের উপরে নজরদারি ছিল পুলিশের।

তদন্তকারী এক অফিসার জানান, তার উপরে নজর রাখা হচ্ছে, সেটা টের পেয়েছিলেন পিন্টু। যে কারণে গত দিন সাতেক ধরে নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছিলেন। যা পুলিশের সন্দেহ আরও বাড়ায়।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ট্রেন থেকে নেমে বাড়ি ফিরছিলেন পিন্টু। স্থানীয় সূত্রে সে খবর পেয়ে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, পিন্টু জেরায় বলেছেন, ‘‘বাবার আচার-আচরণ দিন দিন খারাপ হচ্ছিল। মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করেছিলেন। বাইরের সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছিলেন না। দিনের পর দিন এ সব নেমে নিতে পারছিলাম না। তবে রাগের মাথায় যা করেছি, তা ভুল কিছু করিনি।’’

কিন্তু নমিতাদেবীও স্বামীর মৃত্যুর পরে পুলিশকে বিপথে চালিত করলেন কেন?

তদন্তকারী পুলিশ অফিসারেরা জানিয়েছেন, বাবার আচরণে বিরক্ত ছিলেন মা-ছেলে। স্বভাবতই বিকাশের মৃত্যুর ঘটনায় ছেলেকে আড়াল করতে চেয়েছিলেন নমিতা। তাঁকেও জেরা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE