Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
travel

হরিণ চাই, দাবি বকখালির

বছরখানেক আগেই হরিণ ও কুমির সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। বাকি হরিণ সরিয়ে ফেলার তোড়জোড় শুরু হতেই বকখালির ডিয়ার পার্কে হরিণ ও কুমির ফিরিয়ে আনার দাবিতে সবর হয়েছেন বাসিন্দারা।

মনোরম: এই দৃশ্য উপভোগ করেন পর্যটকেরা।

মনোরম: এই দৃশ্য উপভোগ করেন পর্যটকেরা। ফাইল চিত্র।

দিলীপ নস্কর
বকখালি শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৪৩
Share: Save:

সোনার হরিণ নয়, জলজ্যান্ত হরিণ চেয়েই আকুল বকখালির মানুষ। তাঁদের বক্তব্য, একে তো আমপানের পড়ে ঝাউয়ের বন নষ্ট হয়ে এলাকার সৌন্দর্য অনেকটাই মাটি। পর্যটকদের মন ভোলাতো খানকতক হরিণ। তাদেরও সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে বন দফতর। কুমির যে ক’টা ছিল, তাদেরও সরানো হয়েছে। এই অবস্থায় বকখালি বেশ খালি খালিই লাগছে, বলছেন স্থানীয় মানুষজন। পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরাও চিন্তায়।

বছরখানেক আগেই হরিণ ও কুমির সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। বাকি হরিণ সরিয়ে ফেলার তোড়জোড় শুরু হতেই বকখালির ডিয়ার পার্কে হরিণ ও কুমির ফিরিয়ে আনার দাবিতে সবর হয়েছেন বাসিন্দারা। পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকেও বকখালি পর্যটন কেন্দ্র বাঁচাতে হরিণ ফিরিয়ে আনার দাবি তোলা হয়েছে।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বকখালি পিকনিক স্পটটি কলকাতা শহরতলি থেকে কাছাকাছি হওয়ায় প্রায় সারা বছর ধরেই পর্যটকদের আনাগোনা থাকে। তবে শীতের মরসুমে বা ছুটির দিনগুলিতে বকখালিতে মানুষের ঢল নামে। আগে গাড়ি নিয়ে বকখালি যেতে হলে নামখানায় হাতানিয়া-দোহানিয়া নদী পার হতে হত। তাতে সময় লাগত বেশি। কয়েক বছর আগে ওই নদীর উপরে সেতু তৈরি হওয়ায় এখন সরাসরি গাড়ি নিয়ে বকখালিতে পৌঁছে যাচ্ছেন পর্যটকেরা।

সমুদ্রস্নানের পাশাপাশি সৈকতে ঢোকার আগে ডান দিকে বকখালি বন দফতরের ডিয়ার পার্ক ও পাশে কয়েকটি কুমির দেখতে উৎসাহ ছিল পর্যটকদের। বছরখানেক আগে ৫৩টি হরিণের মধ্যে ৩৭টিকেই সরিয়ে ফেলে বন দফতর। আবার ৫টি বড় কুমির সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ভগবতপুর কুমির প্রকল্পে। ফলে ডিয়ার পার্কে এখন রয়েছে ১৬টির মতো হরিণ ও দু’টি ছোট কুমির ছানা। হরিণ ও কুমির সরানোর আগে পর্যটকদের মাথা পিছু ১০ টাকা দিয়ে তাদের দেখতে ঢুকতে হত। এখন আর সে ভাবে হরিণ না থাকায় পর্যটকদের টাকা দিতে হয় না।

এক দিকে ডিয়ার পার্ক প্রায় বেহাল, আবার সৈকতের সামনে দীর্ঘ এলাকা জুড়ে চর। প্রায় এক-দেড় কিলোমিটার হেঁটে তবে ছোঁয়া যায় জল। ঝাউবনও ঝড়ে বিধ্বস্ত। সব মিলিয়ে পর্যটকেরা বকখালির প্রতি আকর্ষণ হারাচ্ছেন। এই অবস্থায় বাকি হরিণগুলি নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় চলছে বুঝে বেজায় খেপেছেন স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ীরা। তাঁদেরই একজন রবিরাম জানা জানালেন, পর্যটকদের পরিষেবা দেওয়ার মতো পরিকাঠামো প্রায় কিছুই এখন নেই। সারা এলাকা জুড়ে পড়ে রয়েছে আবর্জনার স্তূপ। পানীয় জলের সঙ্কট। আবার সমুদ্রে চর পড়ে যাওয়ায় অত দুরে হেঁটে স্নান করতে যেতে চাইছেন না অনেকে। ফলে এমনিতেই আকর্ষণ হারাচ্ছে বকখালি। এখন হরিণ ক’টা নিয়ে গেলে পর্যটকেরা কী দেখতে আর আসবেন, প্রশ্ন তাঁর। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কল্পনা মালি মণ্ডল বলেন, ‘‘হরিণ ও কুমির সরিয়ে ফেলার বিষয়ে জানতে পেরে আমরা দল বেঁধে বকখালি বন দফতরে গিয়েছিলাম। তাঁরা জানান, হরিণ ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্ত সেই হরিণ তো ফিরলোই না, যে ক’টা আছে, তাদেরও সরিয়ে ফেলার তোড়জোড় চলছে। সমস্ত বিষয় বিধায়ককে জানানো হয়েছে।’’

কিন্তু কেন সরছে হরিণ?

বকখালি বন দফতরের রেঞ্জার অশোক নস্কর বলেন, ‘‘জু আইন অনুযায়ী এ ভাবে বন্যপ্রাণীদের দীর্ঘ দিন রাখা যায় না। তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশে ফেরাতে হয়। আগে হরিণ ও কুমির সরিয়ে ফেলার সময়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে সরানো হয়েছিল। এ বার বাকি হরিণ সরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’ সব মিলিয়ে মনোহরণ, চপলচরণদের আর ঠাঁই নেই বকখালিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

travel bakkhali Deer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE