Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চালু হল বহির্বিভাগ, স্বস্তি রোগীর

শুক্রবার সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসকেরা পথে নেমে বনগাঁ শহরে মিছিল করেছিলেন। মহকুমার দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা অসুবিধায় পড়েন। এই হাসপাতালের উপরে কয়েক লক্ষ মানুষ নির্ভরশীল।  

প্রতীকী: মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে কাজে চিকিৎসক। নিজস্ব চিত্র

প্রতীকী: মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে কাজে চিকিৎসক। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৯ ০৩:২৮
Share: Save:

এনআরএস কাণ্ডের জেরে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের বহির্বিভাগ বন্ধ রাখা হয়েছিল। শনিবার তা খোলা হয়।

শুক্রবার সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসকেরা পথে নেমে বনগাঁ শহরে মিছিল করেছিলেন। মহকুমার দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা অসুবিধায় পড়েন। এই হাসপাতালের উপরে কয়েক লক্ষ মানুষ নির্ভরশীল।

হাসপাতালের চিকিৎসক গোপাল পোদ্দার বলেন, ‘‘আমাদের প্রতিবাদ জারি থাকবে। তবে আমরা চাই না, কোনও রোগী হাসপাতালে এসে চিকিৎসা পরিষেবা না পেয়ে হয়রান হোন। রোগীদের কথা মাথায় রেখে এ দিন থেকে ফের বহির্বিভাগ চালু করা হয়েছে।’’

হাসপাতালের সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘শুক্রবার বহির্বিভাগ ছাড়া অন্য সব বিভাগে পরিষেবা ছিল। শনিবার থেকে চিকিৎসা পরিষেবা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।’’

দেড় বছরের শিশুকন্যা রোশনীকে নিয়ে বনগাঁ হাসপাতালে এসেছিলেন নাজিরা মণ্ডল। রোশনীর জ্বর ও চর্ম রোগ হয়েছে। কিন্তু বহির্বিভাগ বন্ধ থাকায় ফিরে যেতে হয়েছিল তাঁকে। চিন্তায় ছিলেন তরুণী। শনিবার সকালে ফের মেয়েকে নিয়ে তিনি হাসপাতালে আসেন। বনগাঁর পাইকপাড়া এলাকার বাসিন্দা নাজিরা। দু’দিন পর পর আসতে কষ্ট হয়েছে তাঁর। কিন্তু নিরুপায়। নাজিরা বলেন, ‘‘মেয়ের শরীর আরও খারাপ হচ্ছিল। চিন্তায় ছিলাম। এ দিন ডাক্তারবাবু দেখায় স্বস্তি পেয়েছি।’’ নাজিরার মতোই এ দিন দেবগড় এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধা কানন মণ্ডল হাসপাতালে এসেছিলেন চোখ দেখাতে। তিনিও চিকিৎসা পেয়ে নিশ্চিন্ত।

হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে শুক্রবার বহির্বিভাগ বন্ধ ছিল। বহু রোগী এসে ফিরে গিয়েছিলেন। শনিবার বহির্বিভাগে জেনারেল মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসকেরা রোগী দেখেছেন।

এ দিনই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে ভাঙড়ের একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। শনিবার সকালে ভাঙড় ২ ব্লকের টোনা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওই শিবিরের আয়োজন করা হয়। চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কালো ব্যাজ পরে উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ৫২ জন পুরুষ-মহিলা শিবিরে রক্তদান করেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার নবান্না তরাই বলেন, ‘‘যে ভাবে চারিদিকে চিকিৎসকদের উপরে হামলা হচ্ছে, সে জন্য মন ভারাক্রান্ত। তারপরেও আমরা মানুষকে পরিষেবা দিতে পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। এই সময়ে চারিদিকে রক্তের আকাল দেখা দেয়। সেই ঘাটতি পূরণ করতে এই উদ্যোগ।’’

এনআরএস-কাণ্ডের জেরে মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে প্রতিবাদ জানালেন ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক অভিষেক দাস। শনিবার সকাল থেকে তিনি মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধেই জরুরি বিভাগে চিকিৎসা করেন। অভিষেক বলেন, “চিকিৎসকদের উপরে হামলার প্রতিবাদে মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধেছি।”

চিকিৎসকদের আন্দোলনে তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি বসিরহাট জেলা এবং সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। শনিবার হাসপাতাল দু’টিতে কাজকর্মে স্বাভাবিকই ছিল। তবে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে অচলবস্থার কারণে জরুরি প্রয়োজনে ‘রেফার’ করা যাচ্ছে না কাউকে। এই পরিস্থিতিতে শয্যা ভরে যাচ্ছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। বসিরহাট জেলা হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির সভাপতি আবদুল্লা রনি চিকিৎসকদের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, ‘‘চিকিৎসক-নিগ্রহ সব সময়েই নিন্দনীয়। তাই বলে হাসপাতালের পরিষেবা অচল করে রাখাটাও অমানবিক। সে দিক থেকে বসিরহাট সুপার স্পেশালিটি এবং জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা পরিষেবা সচল রেখে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা রোগীদের যে পরিষেবা দিয়েছেন, তার প্রশংসা করতেই হয়।’’ জেলা হাসপাতালের সুপার শ্যামল হালদার বলেন, ‘‘সুন্দরবন-সহ সীমান্ত দূর দূর থেকে আসা রোগীদের কথা ভেবে পরিষেবা সচল রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bongaon Sub divisional Hospital OPD NRS Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE