প্রতীকী ছবি
গণপিটুনিতে মৃত্যুর তদন্তে নেমে ভাঙড় ২ এলাকায় সিন্ডিকেট, বেআইনি জমি-বাড়ির কারবার নিয়ে নানা তথ্য উঠে আসছে।
পুলিশ জানতে পেরেছে, একটি নির্মীয়মাণ প্রকল্পের জন্য সিন্ডিকেটের মাল ফেলা, জমির দালালি রমরমিয়ে চলছিল। গণপিটুনিতে নিহত বাকিবুল্লা মোল্লা ওরফে বাকি কিছু টাকা পেত তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত মনিরুল ইসলাম বিশ্বাসের কাছ থেকে। মনিরুলও জমির দালালি, সিন্ডিকেটের কারবারে যুক্ত বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। সে ওই একটি নির্মীয়মাণ প্রকল্পে ইমারতি দ্রব্য সরবরাহ করত।
পুলিশ জানতে পেরেছে, ২০১৬ সালে একটি জমির দালালির ৩৫ হাজার টাকা মনিরুলের কাছ থেকে পেত বাকি। সেই টাকা নিয়ে মনিরুল তাকে দীর্ঘ দিন ধরে ঘোরাচ্ছিল বলে বাকির পরিবারের অভিযোগ। এ দিকে, কিছু দিন আগে প্রশাসনের চাপে ওই প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। হাতে কাজ না থাকায় বকেয়া টাকা ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে বাকি। মঙ্গলবার রাতে মদ্যপ অবস্থায় সে হাঁসুয়া নিয়ে মনিরুলের উপরে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। এলাকার লোকজন বাকিকে তাড়া করে ধরে মাঠের মধ্যে পিটিয়ে মারে। গণপিটুনির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ৬ জনকে গ্রেফতার করে।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ পাকাপোল থেকে ভোজেরহাট যাওয়ার রাস্তার হাতিশালার কাছে দীর্ঘ দিনের পুরানো নিকাশি খাল মাটি ফেলে বুজিয়ে তৈরি হচ্ছে দোকান ঘর। এ ভাবে খালের উপরে ঘর তৈরি করায় নিকাশি ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়বে বলে মনে করছেন এলাকার মানুষ। বেশ কয়েক মাস ধরে ভাঙড় ২ ব্লকের বেঁওতা ২ পঞ্চায়েতের হাতিশালা সেতুর কাছে খাল দখল করে তৈরি হচ্ছে ঘর। ভগবানপুর পঞ্চায়েতের সাতুলিয়া, বেঁওতা ২ পঞ্চায়েতের কুলবেড়িয়া, হাতিশালা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা এবং বেঁওতা ১ পঞ্চায়েতের কাঁটাতলা, ঘাসখালি, বড়আবাদ-সহ বিভিন্ন এলাকায় জলাভূমি ভরাট করে বিক্রির অভিযোগও আছে। ব্লক এলাকার নিউটাউন-লাগোয়া হাতিশালা, সাতুলিয়া-সহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষিজমির উপরে আবাসন প্রকল্প, সিমেন্ট কারখানা বা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার নানা প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। একদিকে জলাভূমি ভরাট হচ্ছে বেআইনি ভাবে। অন্য দিকে, এই সমস্ত প্রকল্পকে ঘিরে এলাকায় সিন্ডিকেট ব্যবসা এবং জমির দালালির রমরমা কারবার চলছে বলে স্থানীয় মানুষজনের অভিযোগ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যার পিছনে রাজনৈতিক নেতাদের মদত রয়েছে বলেও জানাচ্ছেন তাঁরা।
এ সব নিয়ে আগে এলাকায় মারপিট বেধেছে। তবে বছর তিনেক হল গোলমাল তেমন ঘটেনি। গণপিটুনিতে মৃত্যুর পরে ফের ইমারতি দ্রব্যের সিন্ডিকেট, বেআইনি জমির দালালি নিয়ে অভিযোগ সামনে আসছে।
সম্প্রতি ওই এলাকার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য মোস্তাক আহমেদ হাতিশালায় বেআইনি ভাবে খাল ভরাট নিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ জানান। তিনি বলেন, ‘‘এলাকার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেআইনি ভাবে খাল জবরদখল করে ঘর তৈরি করছে। এ ভাবে খাল ভরাট করা হলে এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি।’’
ভাঙড় ২ বিডিও কৌশিককুমার মাইতি বলেন, ‘‘আমরা যখনই জলাভূমি ভরাট বা অন্য কোনও অভিযোগ পাই— তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’
স্থানীয় মানুষের অবশ্য অভিজ্ঞতা অন্য কথাই বলছে।
জমির দালালি বা সিন্ডিকেটের কারবারে সে জড়িত নয় বলে দাবি মনিরুলের। অন্য দিকে, ভাঙড়ের ওই এলাকার তৃণমূল নেতা তথা তৃণমূলের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জুলফিকার মোল্লা বলেন, ‘‘সিন্ডিকেট বা জমির দালালির ব্যাপারে আমাদের দলের কেউ জড়িত নয়। জলাভূমি ভরাটের ঘটনাতেও তৃণমূলের কেউ যুক্ত নন।’’ তাঁর দাবি, কেউ লুকিয়ে-চুরিয়ে কিছু করে থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy