E-Paper

নাগরিকত্বের আবেদন জমায় শিবির বিজেপির 

বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সভাপতি বিকাশ ঘোষ জানিয়েছেন, বুধবার তিনটি শিবির অনুষ্ঠিত হয়েছে।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৪২
Share
Save

ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর নিয়ে উদ্বাস্তু মতুয়া সম্প্রদায়ের একাংশের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ ও আশঙ্কা। ওপার বাংলা থেকে আসা বহু মতুয়া পরিবারের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছে, এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হলে তাঁদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে। বিশেষত, যাঁদের বা যাঁদের বাবা-মায়ের নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নেই, তাঁদের মধ্যে এই আশঙ্কা বেশি। এ দিকে, তৃণমূলের তরফে বলা হচ্ছে, এসআইআরের মাধ্যমে রাজ্যের ভোটার তালিকা থেকে উদ্বাস্তু ও মতুয়া সম্প্রদায়ের নাম বেশি করে বাদ দেওয়া হতে পারে। এই প্রচার আরও আতঙ্ক বাড়িয়েছে তাঁদের।

এই পরিস্থিতিতে, উদ্বাস্তুদের ভীতি দূর করতে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা জুড়ে সিএএ (নাগরিকত্ব সংশোধিত আইন) বিষয়ক একাধিক শিবিরের আয়োজন করেছে বিজেপি। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই শিবিরগুলিতে উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের আবেদন করতে সহায়তা করা হচ্ছে এবং তাঁদের বোঝানো হচ্ছে যে, এসআইআর ও সিএএ— দু’টি সম্পূর্ণ আলাদা প্রক্রিয়া।

বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সভাপতি বিকাশ ঘোষ জানিয়েছেন, বুধবার তিনটি শিবির অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজ্য বিজেপির প্রতিনিধিরা বনগাঁ শহরের জেলা কার্যালয়ে এসে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবে, কী ভাবে সিএএ-র আওতায় আবেদন করাতে হবে। প্রশিক্ষণ শেষে পয়লা নভেম্বর থেকে উত্তর ২৪ পরগনার ৩০টি মণ্ডলে ৬০টি শিবির একস ঙ্গে শুরু হবে এবং তা লাগাতার চলবে।

ইতিমধ্যে বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া শহরের গান্ধীপল্লি এলাকায় একটি সিএএ সহায়তা শিবিরের সূচনা করেছেন। বুধবার সেখানে বহু মতুয়া উদ্বাস্তু এসে নাগরিকত্বের আবেদন করেন।
তবে শিবিরে উপস্থিত অনেকে সংশয়ে ভুগছেন। গোপালনগরের এক ব্যক্তি ১৯৯৮ সালে খুলনা থেকে ভারতে এসেছিলেন। ২০১৫ সালে ভোটার তালিকায় নাম ওঠে। তিনি বলেন, “শুনছি ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম না থাকলে এ বার নাম কাটা যাবে। তখন পাড়ার লোকও আমাদের নিয়ে সন্দেহ করবে। তাই সিএএ-তে আবেদন করলাম। নাগরিকত্ব পেলে অন্তত সম্মানের সঙ্গে থাকতে পারব।”

একই সঙ্গে তিনি এসআইআর প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “আমাদের কী হবে জানি না, কিন্তু এসআইআর হলে বাংলাদেশের অন্য ধর্মের অনেকের নাম বাদ যাবে, যাদের অত্যাচারে আমরা এ দেশে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম।’’

বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া এ দিন স্পষ্ট করে বলেন, “এসআইআর এবং সিএএ— দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। কংগ্রেস আমলে মতুয়া উদ্বাস্তুদের বেনাগরিক করে রাখা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এসআইআর-এর সময়ে যদি কারও নাম বাদও যায়, আমরা সিএএ-র মাধ্যমে তাঁদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করব। এরপরে তাঁদের নাম স্বাভাবিক ভাবেই ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে।” কয়েক দিন আগেই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরও একই দাবি করেছিলেন, মতুয়া উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব সিএএ আইনের মাধ্যমেই নিশ্চিত হবে।

অন্য দিকে, তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “এসআইআর নিয়ে আমাদের আলাদা কোনও প্রস্তুতি নেই। যদি কোনও বৈধ ভোটারের নাম কাটা হয়, আমরা তা মেনে নেব না। বিজেপি জানে, এসআইআর হলে মতুয়া উদ্বাস্তুদের নাম বাদ যেতে পারে। তাই সিএএ শিবির করে তাঁদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে।”

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বনগাঁ ও সংলগ্ন এলাকায় মতুয়া ভোট গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এসআইআর ও সিএএ— এই দুই বিষয় ঘিরে আগামী দিনে রাজনৈতিক লড়াই আরও তীব্র হতে পারে। এক দিকে বিজেপি নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, অন্য দিকে তৃণমূল আশঙ্কা দেখিয়ে ভোটার ধরে রাখার চেষ্টা করছে। এই দুই প্রচারের মাঝে উদ্বাস্তু মতুয়া সম্প্রদায় এখন মূলত খুঁজছে নিরাপত্তা, স্থায়িত্ব ও নাগরিক মর্যাদা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bangaon

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy