Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূলের ভোজে ঢুকে বোমায় জখম ৫

মধ্যমগ্রামে আহতদের পরিজনেরা। শনিবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

মধ্যমগ্রামে আহতদের পরিজনেরা। শনিবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মধ্যমগ্রাম শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৪
Share: Save:

নিতান্তই হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান তারা। বাগানবাড়িতে মাংস-ভাত খাওয়ার ডাক পেয়ে তাই আর লোভ সামলাতে পারেনি বছর পনেরোর বালকেরা। পেটপুরে খাওয়ার পরে একটি বস্তায় কোনও ভাবে হাত পড়ে গিয়েছিল এক জনের। তার পরেই প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেল ছোট্ট শরীরগুলি।

ঘটনাটি শনিবার দুপুরের। ঘটনাস্থল, মধ্যমগ্রামের ১ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বাগানবাড়ি। জখম চারটি বালককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করানো হয়েছে আর জি কর ও বারাসত হাসপাতালে। তাদের সঙ্গে গুরুতর জখম হয়েছেন বছর তিরিশের এক যুবকও। বিস্ফোরণে কারও উড়ে গিয়েছে হাত, কারও বা শরীর ঝলসে মাংস খসে গিয়েছে। জখম পাঁচ জনের কারও সঙ্গেই রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। তা সত্ত্বেও এ দিন ভোটের রক্তপাতের তালিকায় যুক্ত হয়ে গেল এই চার বালক সরিফুল আলম, আসাদুল রহমান, ইয়াসমিন আরাফত আলি, শেখ শাজাহান এবং যুবক রফিকুল আলির নাম। কেন?

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, পুরভোটে শাসক দলের শিবির, তৃণমূলের পতাকা, মুখ্যমন্ত্রীর ছবি, প্রার্থী ফরিদা বিবির পোস্টারে কার্যত ঢাকা বাড়িটিতে সকাল থেকেই চলছিল খাওয়াদাওয়া। ভোজ সেরে অনেকেই ভোটের ‘কাজ’ করতে বেরিয়ে যায়। এত খাবার পড়ে থাকতে দেখে এলাকার ওই বালকদের খাওয়ার জন্য ডেকেছিল আয়োজকরা। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ডাক পেয়ে যুবক রফিকুলের সঙ্গে ঢুকে পড়ে ওই ৪ বালক। খাওয়াদাওয়া সেরে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে বাগানের ভিতরের পাকা ছাউনির নীচে আশ্রয় নিয়েছিল ওরা। সেখানেই বস্তাভর্তি বোমা রাখা ছিল বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তখনই কোনও ভাবে বোমা ফেটে জখম হয় ওই পাঁচ জন। বিস্ফোরণের শব্দে এলাকার মানুষ ছুটে এলে পালায় আয়োজকরা।

বাদু এলাকায় পাঁচিলঘেরা বিরাট সুসজ্জিত বাগানবাড়ির কাছেই তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের বাড়ি। তিনি অভিযোগে করেছেন, এ সবের পিছনে সিপিএম। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সিপিএম-ই পাঁচিলের বাইরে থেকে বোমা ছুড়েছে।’’ তাঁর এই কথা শুনে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নেপালদেব ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘তৃণমূলের লোকেরা ওখানে মোচ্ছব করল আর ১২ ফুট উঁচু পাঁচিলের বাইরে থেকে সিপিএম বোমা ছুড়ল!’’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘এ সব মিথ্যাচার মমতা, কাকলিদের মুখেই মানায়। আমরা এ নিয়ে বড় আন্দোলনে যাব।’’ এলাকার বাসিন্দারাও বলেছেন, ওই ওয়ার্ডে তো সিপিএম-বিজেপির কোনও প্রার্থীও নেই। এখানে লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের। তা হলে কেন সিপিএম এখানে বোমা রাখতে যাবে? বাগানবাড়ি ছেয়ে ফেলা তৃণমূলের পোস্টার-ব্যানারের মধ্যে কী করে সিপিএম এল— তার ব্যাখ্যা মেলেনি কাকলিদেবীর কাছ থেকে।

শাসক দলের যে কর্মী-সমর্থকেরা সকাল থেকে ওই বাগানবাড়িতে ছিলেন, তাঁদেরও দেখা মেলেনি। এমনকী, বাগানবাড়িটি দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন যিনি, তৃণমূলের সেই নেতা আজিদ আলিরও এলাকায় খোঁজ মেলেনি। জেলার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। তবে দোষীরা কবে ধরা পড়বে তা নিয়ে সদুত্তর নেই পুলিশের।

বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, মূল ফটক দিয়ে ঢুকে বাঁ দিকের ঢালু লনে তখনও লাল টেবিল-চেয়ার পাতা রয়েছে। পাশে বিশাল লোহার কড়াই, ঝুড়ি, বস্তা। একটু এগিয়ে পুকুর, পাশে ফোয়ারা। সেখান থেকেই খানিক নীচে নেমে গিয়েছে জমি। সেখানে বৃষ্টিভেজা ঘাসে চাপ চাপ রক্ত দাগ। আশপাশে পড়ে রয়েছে ছিন্নভিন্ন মাংস। বিস্ফোরণে আহত রফিকুল আলির বাবা শের আলি বলেন, ‘‘ছেলেটার এ কী হল! যে তৃণমূল সাধারণ মানুষের পাশে থাকার কথা বলে, তারা যে এ ভাবে বোমা রেখে মানুষ মারার কল করে রাখবে, ভাবতেই পারছি না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE