Advertisement
E-Paper

মেলা সরগরম প্রার্থীদের হাজিরায়

ভোটের মুখে মতুয়া মেলা উপলক্ষে বিশাল সমাবেশ। প্রচারে বেরনোর আগে তাই নানা দলের প্রার্থীরা একবার ঢুঁ মেরে যাচ্ছেন মেলা প্রাঙ্গণে। মতুয়াদের বড়মা বীণাপানিদেবীর কাছে ভোট এলেই নানা রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের ভিড় বাড়ে।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য ও সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৩৮
ভক্তিভাবে মাতোয়ারা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

ভক্তিভাবে মাতোয়ারা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

ভোটের মুখে মতুয়া মেলা উপলক্ষে বিশাল সমাবেশ। প্রচারে বেরনোর আগে তাই নানা দলের প্রার্থীরা একবার ঢুঁ মেরে যাচ্ছেন মেলা প্রাঙ্গণে। মতুয়াদের বড়মা বীণাপানিদেবীর কাছে ভোট এলেই নানা রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের ভিড় বাড়ে। সোমবারও কখনও সিপিএম, কখনও তৃণমূল কখনও বিজেপি প্রার্থীরা এসেছেন বড়মার আশীর্বাদ নিতে।

ঠাকুরবাড়ির কেউ এ বার প্রার্থী নন, কিন্তু বনগাঁ উত্তর, দক্ষিণ, গাইঘাটা, বাগদা বিধানসভার ভোট প্রার্থীদের কাছে মতুয়া বাড়ির ‘আশিস’ ই যে শেষ কথা, তার সাক্ষী থাকল মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশীর মতুয়া মেলার স্নানের পূণ্য লগ্ন।

শনিবার থেকেই দলে দলে ডাঙ্কা, কাঁসির তালে তালে ভক্তদের ভিড় বাড়ছে ঠাকুরনগরে। কেউ এসেছেন মালদহ, কেউ জলপাইগুড়ি, কেউ বা বিহার থেকেও। বাংলাদেশ থেকেও এসেছেন মতুয়া ভক্তেরা।

সামনেই ভোট। তাই এত মানুষকে সামাল দেওয়ার জন্য বস্তুতই পর্যাপ্ত পুলিশ বা প্রশাসনিক ব্যবস্থা করা যায়নি ঠাকুরনগরে। এ দিনই আবার ছিল উত্তর ২৪ পরগনার ৩৩টি আসনে তৃণমূলের মনোনয়ন। তা নিয়েও ব্যস্ততা তুঙ্গে ছিল পুলিশ-প্রশাসনের। তার মধ্যে এমন বিশাল মেলা। যে কয়েকজন হাতেগোনা পুলিশ কর্মী বা অফিসারকে দেখা গেল মেলা প্রাঙ্গণে, তাঁদের গলদঘর্ম অবস্থা চোখ এড়ায় না। তবে নিরাপত্তার কড়াক়ড়ি ছাড়াই লক্ষ মানুষের ভিড় সামলে নিল নিজেদেরই।

‘‘সারা বছর খেতের চাল থেকে কিছুটা বাঁচিয়ে এই দিন ক’টার জন্যই তো জড়ো করে রাখি’’— বলছিলেন ঠাকুরনগরের বাসিন্দা অনুভা ওঝা। তাঁর বাড়ির উঠোনে সোমবার বিকেলের মধ্যে পাঁচশো অতিথির ভিড়। তাঁদের মধ্যে আত্মীয় যেমন আছেন, অনাত্মীয়ের সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়।

এ বার প্রথম মেলায় এলেন যোধপুর পার্কের বাসিন্দা শুভম রায়চৌধুরী। তাঁর মেয়ে সংহিতা জানালেন, তাঁরা মতুয়া নন ঠিকই, কিন্তু স্রেফ মেলার টানে ছুটে এসেছেন।

এত কিছুর মধ্যে বনগাঁর সাংসদের ব্যস্ততা দেখার মতো। এক দিকে, তাঁর সাংসদ এলাকার সাতজন বিধায়কের মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন। তার উপরে সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর তো শুধু সাংসদই নন, মতুয়া বাড়ির বড় বউ-ও বটে। সোমবার দুপুরে তাঁকে দেখা গেল, মেলা কমিটির মূল অফিসে। কত কুইন্ট্যাল চাল-ডাল ঢুকেছে, কোথায় কত কেজি কুমড়ো গেল— সে সবের খোঁজ নিচ্ছেন। ‘‘আরও জলের গাড়ি লাগবে’— উত্তেজিত ভাবে ফোন করছিলেন।

এর মধ্যেই হঠাৎ আর একটা ফোন এল। ছুটলেন এক মতুয়া ভক্তের বাড়িতে। সেখানে নাকি বেলা ২টো বাজলেও খাওয়া বাকি দেড়শো জনের। নিজেই নেমে পড়লেন আলু-কুমড়ো কাটতে। তাঁকে দেখে ছুটে এলেন আরও মহিলারা। ‘‘মা এ কি করছেন। আমারা তো আছি।’’ তাঁদের হাতে দায়িত্ব দিয়েই ফের ঠাকুরবাড়ির হেঁসেলে মমতাবালা। সেখানে বিশাল হাঁড়িতে একসঙ্গেই রান্না হচ্ছে অন্তত এক হাজার জনের খাবার। নিজেই খুন্তি টেনে নেন মমতা, সারা ভারত মতুয়া সঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি হিসাবে তাঁর দায়িত্ব কম কীসে!

ঠাকুরবাড়ির হরিচাঁদ ঠাকুর মন্দিরের সামনে চলছে উদ্দাম মাতামখোলা। কেউ কেউ সেখানে শূন্যে উড়িয়ে দিচ্ছিলেন ভোগ-বাতাসা। সেই বাতাসা সংগ্রহ করতে ভক্তদের মধ্যে সে কী আকুলতা!

নিজের ঘরের বারান্দায় বসে ছিলেন বড়মা। তাঁকে প্রণাম করে আশীর্বাদ নেওয়ার দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ল। সে দিকে অপলক তাকিয়ে ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। বললেন, মতুয়াদের সম্পর্কে গবেষণা করতেই তাঁর এখানে আসা।

মেলায় এসেছিলেন রাজ্যের বিদায়ী মন্ত্রী, এ বার বাগদা কেন্দ্রের তৃণমূলের প্রার্থী উপেন বিশ্বাস। বনগাঁ দক্ষিণের সিপিএম প্রার্থী রমেন আঢ্য সাত সকালেই এসেছিলেন বড়মার আশীর্বাদ নিতে। মেলার খোঁজখবরও নিয়েছেন। গাইঘাটার বিজেপি প্রার্থী শঙ্কর ঠাকুর এবং তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী পুলিনবিহারী রায়ও এসেছিলেন বড়মার আশীর্বাদপ্রার্থী হিসাবে।

মেলার আবেগের সঙ্গে ভোটের রাজনীতিকে সরাসরি মেলাতে চান না কেউই। পুলিনবাবুর কথায়, ‘‘ভোটের লড়াই অন্য ব্যাপার। কিন্তু মেলাটা আমাদের মতো মতুয়াদের অন্য ধরনের আবেগ।’’

candidate matua mela election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy