লাইনচ্যুত ক্যানিং লোকাল। সোমবার ঘুটিয়ারি শরিফ এবং বেতবেড়িয়া স্টেশনের মাঝে। ছবি: সামসুল হুদা
কম গতিতেই চলছিল সোমবার সকালের ভিড়ে ঠাসা শিয়ালদহগামী ক্যানিং লোকাল। হঠাৎ-ই বিকট শব্দ আর প্রবল ঝাঁকুনিতে কেঁপে ওঠেন যাত্রীরা। লাইনচ্যুত হয় কামরা। আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠেন অনেকে। প্রাণ বাঁচাতে ট্রেন থেকে লাফিয়ে নামতে গিয়ে আহত হন তিন জন। তাঁদের মধ্যে এক মহিলাকে ক্যানিং হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
এ দিন সকাল ১০টা ২০ মিনিট নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে পূর্ব রেলের শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ঘুটিয়ারি শরিফ এবং বেতবেড়িয়া স্টেশনের মাঝখানে কাঁথি রেলগেটের কাছে। তার অদূরেই লাইন সারানোর কাজ চলছিল। সেই সময়ে ট্রেনটি ওখান দিয়ে কী করে চালানো হচ্ছিল, তার কোনও ব্যাখ্যা দেননি পূর্ব রেলের কর্তারা। দুর্ঘটনায় কেউ হতাহত হননি বলে তাঁদের দাবি। তবে, ওই কর্তাদের কেউ কেউ সমন্বয়ের অভাবকে কারণ বলে মনে করছেন। দুর্ঘটনার জেরে ঘণ্টাখানেক ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। দুর্ভোগ হয় যাত্রীদের। তাঁরা অটো, বাস, ট্রেকার ধরে গন্তব্যে পৌঁছন।
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র জানান, খবর পেয়েই ‘অ্যাকসিডেন্ট রিলিফ ভ্যান’ মেডিক্যাল টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। দু’ঘণ্টার মধ্যেই লাইনচ্যুত হওয়া কামরাটি তুলে ফেলা হয়।
ওই ট্রেনের যাত্রী ছিলেন বাসন্তীর বিধায়ক, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সুভাষ নস্কর। তিনি বলেন, “ট্রেনটি কম গতিতে চলছিল। হঠাৎ বিকট শব্দ এবং ঝাঁকুনি দিয়ে ট্রেনটি থেমে যায়। আতঙ্কিত যাত্রীরা ট্রেন থেকে লাফিয়ে নামতে শুরু করেন।” প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ট্রেনের গার্ডের কামরার সামনের দ্বিতীয় বগিটির চারটি চাকা লাইন থেকে বেরিয়ে যায়। লাইনচ্যুত হওয়ার সময়ে লাইনের সঙ্গে চাকার ঘর্ষণে আগুনের ফুলকি বের হচ্ছিল।
কী করে ঘটল এই দুর্ঘটনা?
রেলের তদন্তকারী অফিসাররা জানান, ওই লাইনটিতে পিডব্লুআই (পাথওয়ে ইনস্পেক্টর)-এর গাংম্যানেরা মেরামতির কাজ করছিলেন। সেই সময়ে কোনও ভাবে দু’টি লাইনের মধ্যের দূরত্ব বেশি হয়ে গিয়েছিল। তাই ট্রেনের চাকা লাইন থেকে পড়ে যায় বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। রেলকর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলের দু’ধারের দু’টি স্টেশনের স্টেশনমাস্টার এবং পিডব্লুআই-এর মধ্যে সমন্বয় না থাকার ফলেই এই বিপত্তি হয়েছে।
তিন মাস আগে এই সমন্বয়ের অভাবেই শান্তিপুর লোকালে দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানেও পিডব্লুআই-এর কর্মীরা ট্রলি নিয়ে লাইনে স্লিপার ঠেলছিলেন। সমন্বয়ের অভাবে চালক ওই কাজের কথা জানতে পারেননি। ফলে, যাত্রী বোঝাই শান্তিপুর লোকাল হুড়মুড়িয়ে ট্রলিতে গিয়ে ধাক্কা মারে। রেলকর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন, দু’টি দুর্ঘটনাতেই যাত্রীরা রক্ষা পেয়েছেন শুধুমাত্র ট্রেনের গতি কম থাকার জন্য।
কেন বার বার এ ধরনের ঘটনা ঘটছে তার কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের কর্তারাও। তাঁরা জানিয়েছেন, তদন্ত শুরু হয়েছে। দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy