প্রতীকী ছবি
সাহসিকতা ও বুদ্ধির জোরে উদ্ধার পেলেন ভিনরাজ্যে পাচার হওয়া এক তরুণী। আরও পাঁচ জনকেও উদ্ধার করেছে পুলিশ। সকলেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা।
ওই তরুণী নিখোঁজ হয়েছিলেন গত ২৭ মার্চ। বাড়ির লোকজন মথুরাপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সতেরোর দিনের মাথায় এক আত্মীয়ের মোবাইলে অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে তরুণীর মায়ের কাছে। এ প্রান্ত থেকে ‘হ্যালো’ বলতেই ও পাশ থেকে মেয়েটি হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলে। বলতে থাকে, ‘‘আমি তোমার মেয়ে বলছি, আমাকে বাঁচাও।’’
পুলিশকে সে কথা তৎক্ষণাৎ জানান মেয়ের বাবা-মা। যে নম্বর থেকে ফোন এসেছিল, তার টাওয়ায় লোকেশন ট্যাপ করে জানা যায়, ফোনটি এসেছে আগ্রা থেকে। পরে উদ্ধার করা হয়েছে মেয়েটিকে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মথুরাপুরের দশম শ্রেণির পড়ুয়া ওই তরুণীর মোবাইলে মিসড কলের সূত্রে কিছু দিন আগে তাঁর আলাপ হয়েছিল এক যুবকের। ওই যুবক ঘটনার দিন ফোনে বলে, এখনই বিয়ে করতে চায়। মেয়েটি যেন বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে।
তরুণী সেই মতো হাজির হন স্থানীয় মথুরাপুর স্টেশনে। এর আগেও মেয়েটির সঙ্গে দেখা হয়েছিল ওই যুবকের। স্টেশনে এক সঙ্গীকে নিয়ে অপেক্ষা করছিল সে। ট্রেনে করে শিয়ালদহ হয়ে হাওড়ায় পৌঁছয় তারা। মেয়েটির সন্দেহ হওয়ায় সে প্রেমিকের কাছে জানতে চায়, কোথায় যাচ্ছে তারা। প্রেমিক জানায়, দিল্লিতে এক দিদির বাড়িতে গিয়ে ওঠার কথা। সেখানেই বিয়ে হবে।
দিল্লিতে পৌঁছনোর পরে অবশ্য অন্য পরিস্থিতি অপেক্ষা করেছিল তরুণীর জন্য। এক এক করে হাত বদল হতে হতে সে ওঠে আগ্রার এক যৌনপল্লিতে। পুলিশ জানিয়েছে, মেয়েদের রাখা ছিল ছোট্ট একচিলতে একটা ঘরে। বাইরে বেরোতে দেওয়া হতো না। খেতে দেওয়া হতো শুকনো রুটি, নিম্নমানের খাবার। এমনকী, অধিকাংশ দিনে পেট ভরে খেতেও পেত না। প্রতিদিন সামলাতে হতো ২৫-৩০ জন খদ্দেরকে। প্রতিবাদ করলে জুটত মারধর।
১৭ দিন পরে ওই তরুণীর কাছে এক খদ্দের আসে। তরুণী তাঁর কাছে আব্দার করে মোবাইল ফোন চেয়ে নেন। বলেন, কত দিন বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলিনি। তরুণীর কথায় মন গলে মাঝবয়সী খদ্দেরের। মোবাইল হাতে পেয়ে মেয়েটি যোগাযোগ করে মায়ের সঙ্গে।
২১ মে পুলিশের টিম রওনা হয় আগ্রায়। নেতৃত্বে ছিলেন মথুরাপুর থানার এএসআই প্রবীর বল। দিল্লি পুলিশের সহযোগিতায় পুলিশ ওই এলাকায় ঢোকে। ওই তরুণীকে উদ্ধার করার পরে ছোট্ট ঘরে থাকা বাকি মেয়েরাও কেঁদে বলে, তারাও পাচারের শিকার। তাদেরও যেন উদ্ধার করা হয়।
পরে পুলিশ জেনেছে ওই মেয়েদের বাড়ি ঢোলাহাট, জীবনতলা, কুলতলি, জয়নগর, মন্দিরবাজারের নানা এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, পাচারের ঘটনায় দিল্লি পুলিশ এক মহিলা-সহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। মথুরাপুর থানার ওসি শিবেন্দু ঘোষ বলেন, ‘‘ওই মেয়েদের বয়স আঠারো হয়েছে কিনা, তা দেখার জন্য ডান হাতের হাড় পরীক্ষা করা হয়েছে। কেউ নাবালিকা থাকলে দ্রুত আনা সম্ভব হতো না।’’
কাকদ্বীপ পুলিশ জেলার সুপার তথাগত বসু বলেন, ‘‘একজন মেয়েকে উদ্ধার করতে গিয়ে ৬ জনকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। দিল্লি পুলিশ ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আমাদের যথেষ্ট সাহায্য করেছে। ওই মেয়েরা কোনও সামাজিক বাধার শিকার হলে আমরা তাদের পাশে থাকব।’’
পুলিশের এক কর্তা জানান, এ ভাবে অপরিচিত, স্বল্প পরিচিত যুবকদের হাত ধরে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে মেয়েরা বিপদ ডেকে আনছে। বার বার এ নিয়ে সচেতন করা হচ্ছে মেয়েদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy