Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ইয়াবায় বুঁদ হচ্ছে কলেজ পড়ুয়ারাও

দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন দেশে কড়া মাদক হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই ইয়াবা ট্যাবলেট। ইতিমধ্যে অধিকাংশই দেশই এই ট্যাবলেটকে নিযিদ্ধ ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে ২০ গ্রামের বেশি ইয়াবা রাখার সাজা মৃত্যুদণ্ড। প্রশ্ন উঠছে, যা ও পারে নিষিদ্ধ , তা এ পারে কেমন করে ঢুকছে? তা হলে সীমান্ত নজরদারির গাফিলতির ফাঁক গলে বনগাঁ, বাগদা-সহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়াচ্ছে এই মাদক ট্যাবলেট?   

সীমান্ত মৈত্র 
বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৯ ০৫:২২
Share: Save:

ছোট নামের ছোট্ট ট্যাবলেটটি এখন বাংলাদেশে সীমান্তবর্তী এলাকায় পুলিশের ঘুম কেড়েছে। সীমানা পেরিয়ে অবাধে ঢুকে পড়ছে ‘ইয়াবা’ নামের এই মাদক ট্যাবলেট। ছড়িয়ে পড়ছে এ পারের যুব সমাজের মধ্যে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মায়ানমার থেকে বাংলাদেশ হয়ে ইয়াবা এ পারে আসছে।

দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন দেশে কড়া মাদক হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই ইয়াবা ট্যাবলেট। ইতিমধ্যে অধিকাংশই দেশই এই ট্যাবলেটকে নিযিদ্ধ ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে ২০ গ্রামের বেশি ইয়াবা রাখার সাজা মৃত্যুদণ্ড। প্রশ্ন উঠছে, যা ও পারে নিষিদ্ধ , তা এ পারে কেমন করে ঢুকছে? তা হলে সীমান্ত নজরদারির গাফিলতির ফাঁক গলে বনগাঁ, বাগদা-সহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়াচ্ছে এই মাদক ট্যাবলেট?

সীমান্তে এমনিতেই হেরোইন, এবং কাশির সিরাপ ফেনসিডিলের দাপট দীর্ঘদিনের। পুলিশ জানাচ্ছে, সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত এলাকায় রমরমা বেড়েছে ‘ইয়াবা’ নামের মাদক ট্যাবলেটের।

ইয়াবা কী?

ইয়াবা একটি লাল রঙের ছোট ট্যাবলেট। তবে অন্য দেশে অন্য রঙেও পাওয়া যায়। সাধারণত ট্যাবলেটের উপরে ইংরেজিতে ‘ডব্লিউ ওয়াই’ কিংবা ‘আর’ হরফ থাকে।

কেন জনপ্রিয় হচ্ছে ইয়াবার নেশা? ট্যাবলেট চেখে দেখা এক যুবক জানান, ইয়াবা খেতে সুস্বাদু। একটা মিষ্টি গন্ধ বের হয়। শৌখিন নেশা হিসাবেও তাই ইয়াবার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। কারবারিরা কলেজ পড়ুয়াদেরও টার্গেট করেছে। গিলে বা চিবিয়ে খাওয়া ছাড়াও ইয়াবা গুঁড়ো করে নাকে টেনেও নেশা করে অনেকে।

১৯৭০ সালে তাইল্যান্ড ইয়াবা নিষিদ্ধ করে। ২০০০ সালের পর থেকে বাংলাদেশের যুব সমাজে প্রচুর পরিমাণে ইয়াবার ব্যবহার শুরু হয়। ২০১০ সালে বাংলাদেশ একে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। বাংলাদেশের সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, কারও কাছে ২০ গ্রাম বা তার বেশি ইয়াবা পাওয়া গেলে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

সম্প্রতি বনগাঁ থানার পুলিশ স্থানীয় জয়পুল, ফুলতলা এলাকা থেকে এক ব্যক্তিকে আগ্নেয়াস্ত্র পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করছে। পুলিশের দাবি, ধৃতকে জেরা জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট চোরাপথে এ দেশে নিয়ে আসে। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, ‘‘ওই ব্যক্তিকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হচ্ছে।’’ সম্প্রতি পেট্রাপোল থানার পুলিশও ইয়াবা ট্যাবলেটের খোঁজে ওই ব্যক্তির বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিল। কিন্তু কোনও ভাবে সে ট্যাবলেট সরিয়ে ফেলে বলে পুলি‌শের দাবি।

পুলিশ জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে আসা ‘ইয়াবা’ নানা মাপের হয়। খুব ছোট মাপের ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। একটু বড় মাপের ইয়াবার দাম ৩০০ টাকা। বাংলাদেশে, ইয়াবা পরিচিত ‘বাবা’ নামে।

মূলত মেথাঅ্যাম্ফিটামিন ও ক্যাফেইন মিশ্রিত ইয়াবা সাময়িক ভাবে যৌন উত্তেজনা বাড়ায়। শরীর মন তরতাজা করে। কিন্তু ইয়াবা নিয়মিত খেলে যৌন উত্তেজনা হ্রাস পায়। এই নেশা করে না ঘুমিয়ে দীর্ঘ সময় জেগে থাকা যায়।

সূত্রের খবর, মায়ানমার, তাইল্যান্ড-সহ বিভিন্ন দেশে শান্ত ঘোড়াকে ক্ষিপ্ত করে তুলতে ইয়াবা খাওয়ানো হয়। সেই জন্য এই ট্যাবলেটকে এই সব দেশে ‘হর্স পিল’ বলা হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, নিয়মিত এই মাদকের ব্যবহার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটায়, ঘুম কমে যায়, ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। নেশার ফলে এক সময়ে হতাশা বোধ তৈরি হয়। আত্মহত্যার প্রবণতাও বাড়তে পারে।

বর্তমানে এ দেশে এই ট্যাবলেট মাদকের রমরমা বাড়লেও, ইয়াবার ইতিহাস কিন্তু বহু পুরনো। মেথাঅ্যাম্ফিটামিন ও ক্যাফেইন ট্যাবলেটের প্রচলন প্রথম শুরু হয় মালয়েশিয়ায়। তবে এই নেশার ট্যাবলেটের সব থেকে বেশি ব্যবহার হত তাইল্যান্ডে। এক সময় তাইল্যান্ডের শিশুরাও এর শিকার হয়। মার্কিন মুলুকেও এক সময়ে রমরমা বেড়েছিল এই মাদকের। তবে সেখানেও বর্তমানে নিষিদ্ধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ইউরোপের দেশগুলিও সেনাদের দীর্ঘ সময় জাগিয়ে রাখার জন্য ইয়াবা ট্যাবলেট সরবরাহ করত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drug Addiction Ya Ba Tablets
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE