ভগবানগোলার পরে এ বার বাগদা।
ফের বাংলায় কথা বলায় বাংলাদেশি সন্দেহে মহারাষ্ট্রে কাজে যাওয়া বাগদার এক শ্রমিক দম্পতিকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল সেখানকার পুলিশের বিরুদ্ধে। উদ্বেগে ওই দম্পতির পরিবারের লোকেরা। তাঁদের অভিযোগ, ভারতীয় পরিচয়পত্র দেখার পরেও মহারাষ্ট্র পুলিশ ওই কাজ করেছে। দম্পতিকে ফেরানোর জন্য সরকারি হস্তক্ষেপ দাবি করেছে পরিবার।
ফজের মণ্ডল ও তাসলিমা নামে ওই দম্পতি বাগদার রনঘাট পঞ্চায়েতের হরিহরপুর গ্রামের বাসিন্দা। শনিবার ফজেরের ফোনে তাঁর বাবা তাহাজুল বুঝতে পারেন, ছেলে-বৌমাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, বিজিবি যোগাযোগ রাখছে। রবিবারেও কথা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) জওয়ানের ফোন থেকে ওয়টস্যাপ কলে ফজের আমাদের সব জানায়। হাতে ৩০০ টাকা দিয়ে ওকে এবং বৌমাকে উত্তর দিনাজপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। ওঁরা অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। সরকারের কাছে আবেদন, ছেলে-বৌমাকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হোক।’’ তাহাজুলের অভিযোগ, তাঁর ছেলে ও বৌমার কাছে থাকা নথিপত্রও মহারাষ্ট্র পুলিশ ছিঁড়ে দিয়েছে, মোবাইল কেড়ে নিয়েছে।
তবে, গোটা ঘটনায় বিএসএফের ভূমিকা স্পষ্ট নয়। মহারাষ্ট্রে কাজে যাওয়া ভগবানগোলার শ্রমিক মেহবুব শেখকেও বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। তবে, মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁকে বাংলাদেশে পাঠানোর আগে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে বলে অভিযোগ।
ঘটনার কথা কানে গিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বের। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা ঠাকুর বলেন, ‘‘বিজেপি শাসিত গুজরাত, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্য থেকে এ ভাবে বাঙালিদের ধরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওঁদের ফেরাতে আমরা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে চিঠি পাঠাচ্ছি।’’ বাগদার তৃণমূল বিধায়ক মধুপর্ণা ঠাকুর বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের মাধ্যমে ওই দম্পতিকে ফেরানোর চেষ্টা করছি।’’ বনগাঁর এক পুলিশকর্তা জানান, বিষয়টি কানে এসেছে। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
তবে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর বলেন, ‘‘যারা অনুপ্রবেশকারী, তাদের ফেরত পাঠানো হবে। এ দেশের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড থাকলেও পাঠানো হবে।’’
পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে ফজের প্রথমে কর্নাটকে কাজ করতেন। মাস পাঁচেক আগে স্ত্রীকে নিয়ে মহারাষ্ট্রে কাজ শুরু করেন। কয়েক দিন আগে এক রাতে মহারাষ্ট্রের পুলিশ ফজের এবং তাঁর স্ত্রীকে ধরে নিয়ে যায়। তাহাজুল বলেন, ‘‘১০ জুন মহারাষ্ট্রের পুলিশ আমাদের ফোন করে ছেলে ও বৌমার নথি পাঠাতে বলে। জানায়, বাংলাদেশি সন্দেহে ধরা হয়েছে। আমরা যাবতীয় নথি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। তারপর আর ওঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। এরপরই শনিবার বাংলাদেশ থেকে ছেলে ফোন করে। বিজিবি ছেলে-বৌমার নথিপত্র চেয়েছিল। পাঠিয়ে দিয়েছি।’’
সাংসদ মমতার অভিযোগ, সরকারি ভাবে কাউকে অন্য দেশে পাঠাতে হলে তার বিধি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)