E-Paper

ইছামতীর চরে একাধিক অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ

টাকি রাজবাড়ি ঘাটের গায়ে গত কয়েক বছর আগে গড়ে উঠেছে পাঁচতলা হোটেল। হোটেলের নীচের অংশ জোয়ারের সময়ে নদীর জলে অনেকটা ডুবে থাকে।

নবেন্দু ঘোষ 

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৪ ০৮:০৫
এ ভাবেই ইছামতীর উপরে গড়ে উঠেছে নির্মাণ।

এ ভাবেই ইছামতীর উপরে গড়ে উঠেছে নির্মাণ। নিজস্ব চিত্র।

উত্তর ২৪ পরগনার ছোট্ট শহর টাকি। পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে ইছামতী নদী। নদী পেরোলেই বাংলাদেশ। ইছামতী ও চোখের সামনে বাংলাদেশের প্রকৃতির টানে পর্যটকেরা এখানে ভিড় করেন সারা বছর। সেই ভিড় ক্রমশ যেমন বাড়ছে, তেমনই পরিবেশ বিধির তোয়াক্কা না করে টাকিতে নদীর ধারে, কোথাও নদীর মধ্যেই গজিয়ে উঠছে রিসর্ট, হোটেল।

পুরসভায় নথিভুক্ত হোটেলের সংখ্যা এখানে ৩৫। শুধু পর্যটনের জন্য নয়, স্থায়ী বসবাসের জন্যও নদীর কাছে বা টাকি রোডের ধারে জলাশয় ভরাট করে ফ্ল্যাট তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ। টাকি পৌর নাগরিক সমিতির সদস্যদের অভিযোগ, বার বার প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। যদিও বসিরহাট মহকুমার ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক কিরীটিপ্রসাদ সিংহরায় বলেন, ‘‘অভিযোগ এলেই পদক্ষেপ করা হবে।’’ যদিও পুরসভা বা ভূমিও সংস্কার দফতর— কারও ছাড়পত্র বা নথি নেই এই নির্মাণগুলির, অভিযোগ এমনটাই।

টাকি রাজবাড়ি ঘাটের গায়ে গত কয়েক বছর আগে গড়ে উঠেছে পাঁচতলা হোটেল। হোটেলের নীচের অংশ জোয়ারের সময়ে নদীর জলে অনেকটা ডুবে থাকে। হোটেলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, নদীর চরে হোটেল তৈরি করা হলেও নদী তখন দূরে ছিল, পরবর্তীতে এগিয়ে এসেছে। পাশে থাকা আরও একটি তিনতলা হোটেলের চিত্রও এক। সেই হোটেলের মালিক তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের খাদ্য সরবরাহ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ শাহনুর মণ্ডল। তিনি এ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। শাহনুরের হোটেলের পাশেই নদীর চর বেশ খানিকটা ভরাট করে ফুল গাছ লাগানো আছে। পাঁচিল ও গ্রিল দিয়ে ঘেরা। গেটে তালা দেওয়া।

লাগোয়া আর একটি বড় হোটেল। তার মালিক তৃণমূল নেতা তথা টাকির উপ পুরপ্রধান ফারুক গাজি। ফারুক বলেন, ‘‘অন্যেরা এই নদীর চর দখল করে নিচ্ছিল। তাই আমি নদীর চর কিছুটা ভরাট করে পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফুল গাছ লাগিয়ে রেখেছি, যাতে আর কেউ না নিতে পারে।’’ ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, এটি অবৈধ নির্মাণ। তা হলে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কেন দফতর? হাসনাবাদের বিএলআরও পম্পা রায় বলেন, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’’

টাকি পুর-নাগরিক সমিতির অভিযোগের তির হাসনাবাদ বিএলআরও অফিসের কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে। সমিতির সম্পাদক প্রণব সরকার বলেন, ‘‘২০১৬ সাল থেকে বার বার টাকি পুর এলাকার জলাভূমি ভরাট নিয়ে আমরা সরব হয়েছি, কেউ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’’ পরিবেশে কর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘সুন্দরবনের গদখালিতে এ রকম হয়েছিল। আদালতের নির্দেশে তা ভাঙা হয়েছে। টাকিতে যা হয়েছে, তা-ও অবৈধ।’’ গার্ডেনরিচ কাণ্ডের পরে অবৈধ নির্মাণ নিয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছে হাই কোর্ট। টাকির ক্ষেত্রেও তেমন কোনও পদক্ষেপ করা হয় কি না, পরিবেশ সচেতন নাগরিকেরা এখন সে দিকেই তাকিয়ে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Garden Reach Ichhamati

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy