Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাজারের ফাঁসে আইল্যান্ড, নিত্য যানজট

উড়ালপুলের নীচে দু’টি রাস্তা। একটি উড়ালপুলে ওঠার। অন্যটি, উড়ালপুল থেকে নেমে ব্যারাকপুর স্টেশন বা বীজপুরের দিকে যাওয়ার। আইল্যান্ডে চক্কর না খেয়ে উড়ালপুল থেকে নামা বা ওঠার কোনও উপায় নেই।

অনিয়ম: ব্যারাকপুর লালকুঠি উড়ালপুলের মুখে এ ভাবেই নিত্য বসে বাজার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

অনিয়ম: ব্যারাকপুর লালকুঠি উড়ালপুলের মুখে এ ভাবেই নিত্য বসে বাজার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

বিতান ভট্টাচার্য
ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৭ ০১:৪১
Share: Save:

বাসের চাকায় থেঁতো হয়ে যায় আলু, পটল। চালক আর বিক্রেতার মধ্যে তীব্র বচসা শুরু হয়। নিত্য যানজট তো লেগেই থাকে। ঝগড়া যত গড়ায় তত জট দীর্ঘ হয়। ব্যারাকপুর-বারাসত রোডে যেতে গেলে ব্যারাকপুর লালকুঠি উড়ালপুলে উঠতে হয় একটি আইল্যান্ডকে পাক খেয়ে। আইল্যান্ডের কাছেই নিত্য চলে এই গোলমাল।

উড়ালপুলের নীচে দু’টি রাস্তা। একটি উড়ালপুলে ওঠার। অন্যটি, উড়ালপুল থেকে নেমে ব্যারাকপুর স্টেশন বা বীজপুরের দিকে যাওয়ার। আইল্যান্ডে চক্কর না খেয়ে উড়ালপুল থেকে নামা বা ওঠার কোনও উপায় নেই। বড় গাড়ির ক্ষেত্রে আইল্যান্ডে চক্কর খাওয়ার মতো প্রশস্ত জায়গা নেই বলে অভিযোগ। ফলে আইল্যান্ডে পাক দিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হয় গাড়িকে। কিছু ক্ষণ আগু-পিছু করার পরে চালক গাড়িটিকে বার করতে পারেন। সকালের দিকে এমন করতে গিয়েই মাঝেমধ্যে বিপত্তি ঘটে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়েরা। কারণ আইল্যান্ডের ধারে বসা বাজার।

ব্যস্ত রাস্তা হওয়ায় গাড়ির চাপ তো আছেই। তার উপরে সকালের বাজার। গাড়ি ঘোরানোর কংক্রিটের চাতালের উপরেই আনাজ নিয়ে বিক্রেতারা বসে যান। অসংখ্য ক্রেতাও ভিড় জমান। ফলে গাড়ি ঘোরাতে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায় বলে অভিযোগ চালকদের।

উড়ালপুল থেকে নেমে একটি রাস্তা চলে গিয়েছে ব্যারাকপুর টেলিফোন এক্সচেঞ্জের গা ঘেঁষে আর্দালি বাজার হয়ে ব্যারাকপুর ক্যান্টনমেন্টের দিকে। ওই রাস্তার ধারেই বুড়ির বাজার। সস্তা বলে এই বাজারে ক্রেতারা ভিড় জমাতেন, জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। উড়ালপুলটি তৈরি হওয়ার পরে এই বাজারে ভিড় আরও বাড়তে থাকে। কারণ যাতায়াতের পথে চট করে জিনিস কিনে নেওয়া যায়।

আগে বুড়ির বাজারে সব মিলিয়ে ২২-২৫টি দোকান ছিল। এখন আইল্যান্ড মিলিয়ে সেই দোকানের সংখ্যা একশো ছাড়িয়ে গিয়েছে।

রাস্তার উপরেই প্লাস্টিক পেতে বসে পড়ছেন বিক্রেতারা। শনি-রবিবার বিক্রেতার সংখ্যা বেড়ে যায়। গাড়ি ঘোরাতে আরও হিমশিম খান চালকেরা। নিয়মিত ব্যারাকপুর-বারাসত রুটে বাস চালান পিঙ্কু দাস। তিনি বলেন, ‘‘এমনিতেই আইল্যান্ডের মুখে রাস্তা সরু। অস্থায়ী দোকানগুলির জন্য আরও সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে। আইল্যান্ডের কংক্রিটের দেওয়ালে গাড়ি ঘষা খায়। প্রশাসন অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে যে কোনও দিন বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’’

দুর্ঘটনার ভয় পান বিক্রেতারাও। মুন্নি বাঁশফোড় নামে এক আনাজ বিক্রেতা বলেন, ‘‘পেটের টানে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় বসে ব্যবসা করছি। জানি গাড়ি ঘোরাতে অসুবিধা হয়। বিপদ শিয়রে। কিন্তু অন্য কোথায় যাব?’’ ওই রাস্তা থেকে দোকান সরানো নিয়ে নিরুত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান উত্তম দাস প্রশাসনকে দেখিয়ে দায় সারলেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই জায়গায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছে, বেশ কয়েক বার এ নিয়ে প্রশাসনকে জানিয়েছি।’’

বাজার পুরো না সরিয়েও উড়ালপুলে ওঠার রাস্তায় যাতে গাড়ি ঠিকমতো ঘোরানো যায় তার নির্দেশ দিয়েছেন ব্যারাকপুরের মহকুমা শাসক পীযূষ গোস্বামী।

তিনি বলেন, ‘‘পূর্ত দফতর আইল্যান্ডটির সংস্কার করবে যাতে গাড়ি ঠিক মতো ঘোরানো যায়। গাড়ি ঘোরানোর জায়গায় যাতে বাজার না বসে তাও দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE