Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

বসছে ফুটবল, মদের আসরও, পুলিশের লাঠি

বুধবার সকালে দেখা গেল, এক সঙ্গে মিলে অনেকে হাঁটতে বেরিয়েছেন। কোথাও আবার যুবকেরা মাঠে দল বেধে ফুটবল খেললেন।

আইনের-শাসন ভাঙড়ে। ছবি তুলেছেন সামসুল হুদা।

আইনের-শাসন ভাঙড়ে। ছবি তুলেছেন সামসুল হুদা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২০ ০৫:১৬
Share: Save:

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসাবে দেশ জুড়ে চলছে লকডাউন। পুলিশ প্রশাসনের তরফে একাধিকবার মানুষকে বোঝানো হচ্ছে, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া তাঁরা যেন কেউ রাস্তায় না বেরোন। নিজেদের গৃহবন্দি করে রাখুন দিন কয়েক। এত কিছুর পরেও কিন্তু বনগাঁর একাংশ মানুষ সচেতন হচ্ছেন না।

বুধবার সকালে দেখা গেল, এক সঙ্গে মিলে অনেকে হাঁটতে বেরিয়েছেন। কোথাও আবার যুবকেরা মাঠে দল বেধে ফুটবল খেললেন। সব থেকে উদ্বেগের বিষয়, সন্ধ্যা হলেই পাড়ার ক্লাব ঘরে মাঠে লোকজন জড়ো হয়ে গল্প গুজব করছেন। চলছে মদ্যপান, জুয়া খেলাও।

মঙ্গলবার বিকেলে বনগাঁ শহরের মতিগঞ্জ, পল্লিশ্রী, খয়রামারি এলাকার মাঠে ফুটবল খেলতে নেমেছিল একদল যুবক। বাসিন্দারা তাঁদের বাড়ি চলে যেতে বললেও কর্ণপাত করেননি। খবর পেয়ে পুলিশ এসে অবশ্য যুবকদের ধাওয়া করে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। বাগদা থানা এলাকাতেও চলছিল ফুটবল খেলা। পুলিশ অভিযান চালিয়ে তা বন্ধ করে দিয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বনগাঁ শহরের পূর্বপাড়া এলাকার একটি ক্লাবঘরে বসে যুবকেরা মদ্যপান করছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে লাঠিপেটা করে যুবকদের তাড়িয়ে দিয়েছে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শহরের পাড়ার ক্লাবে মাঠে জমায়েত করেছেন বেশ কিছু মানুষ। বাসিন্দাদের কথায়, "মানুষের একাংশের মধ্যে কোনও সচেতনতা আসেনি। তাঁদের আচরণ দেখলে মনে হচ্ছে, আনন্দে মেতেছেন।"

নৈহাটি, বীজপুর ও কাঁকিনাড়া বাজারে প্রচুর লোক সকালবেলায় বেরিয়েছিলেন। পুলিশ ফিরে যেতে বলে। কিন্তু তারপরেও কিছু লোক থেকে যান। পরে পুলিশ বাধ্য হয়ে লাঠি চালায়।

লকডাউনে হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালির বিভিন্ন রুটের অটো-টোটো চলাচল বন্ধ ছিল। বুধবার সকাল ৯টা নাগাদ হাসনাবাদের দিক থেকে বাইলানির দিকে একটি অটো যেতে দেখা গেলেও মাত্র দু’জন যাত্রী ছিলেন। গলি রাস্তায় দু’একটা টোটো চলতে দেখা গিয়েছে। বসিরহাট মহকুমায় যেখানেই মানুষের জটলা দেখা গিয়েছে, পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে সরিয়ে দিয়েছে। হাসনাবাদ থানার আমলানি মুরারিশা, নয়াপাড়া, ভেবিয়া বাজার এলাকায় বেশ কিছু চায়ের দোকান খোলা ছিল। পুলিশ গিয়ে ওই সব দোকান বন্ধ করে দেয়। ন্যাজাট থানা এলাকার কানমারি বাজারে এ দিন সকালে কয়েকটি চায়ের দোকান খোলা ছিল। পুলিশ গিয়ে দোকান বন্ধ করে। ন্যাজাটে কালীনগর বাজার, ন্যাজাট বাজারে অবশ্য সকালের দিকে আনাজ বাজারে মানুষের ভিড় ছিল।

ক্যানিং বাজারে বুধবার সকাল থেকে থিকথিকে ভিড়। কারা আগে মালপত্র কিনবেন, তা নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে বচসা, হাতাহাতিও বেধে গেল কয়েকটি দোকানে। করোনা মোকাবিলায় সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে একে অন্যের গায়ে সেঁটে বাজার করলেন ক্যানিংয়ের বহুমনানুষ। একই ছবি বাসন্তী, গোসাবার বাজারেও।

ক্যানিংয়ের বাসিন্দা বিপ্লব সর্দার, নব মণ্ডলরা বলেন, ‘‘আগে এক সপ্তাহ লকডাউন ছিল। এখন তিন সপ্তাহ ঘোষণা হল। এই তিন সপ্তাহ কী খাব? তাই বাড়িতে কিছু খাবার মজুত রাখার জন্যই বাজারে এসেছি। কিছুটা মালপত্র বাড়িতে মজুত থাকলে আগামী কিছু দিন আর বাজারে আসতে হবে না।” এই পরিস্থিতিতে জিনিসপত্রে দাম বেড়েছে বলেও অভিযোগ শোনা গেল।

এ দিকে, রোগীকে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া জন্য গাড়ি পেতে সমস্যা হচ্ছে কোথাও কোথাও। কারও জ্বর,সর্দি-কাশি হয়েছে শুনলে গাড়ি তো দূরের কথা, দ্বিগুণ টাকার বিনিময়ে অ্যাম্বুল্যান্সও পাওয়া যাচ্ছে না। বসিরহাট জেলা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, এক রোগীর পরিবার রীতিমতো কান্নাকাটি করছেন। বাদুড়িয়ার বাসিন্দা ওই পরিবারটি জানাল, গত দু’দিন ধরে জ্বর, সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ নিয়ে কষ্ট পাচ্ছিলেন এক সদস্য। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে গেলে উপসর্গের কথা শুনে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তাঁর পক্ষে ওষুধ দেওয়া সম্ভব নয়। হাসপাতালে যেতে হবে। সেখানেও উপসর্গের কথা শুনে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। কলকাতায় আইডি হাসপাতালে দেখানো জরুরি বলে মনে করছেন চিকিৎসক। গাড়ি, অ্যাম্বুল্যান্স—কিছুই মিলছে না। বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলার আধিকারিক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘আপাতত সংক্রামক রোগীর জন্য একটি অ্যাম্বুল্যান্স রাখা হয়েছে।’’

তথ্য সহায়তা: সীমান্ত মৈত্র, নির্মল বসু, প্রসেনজিৎ সাহা, নবেন্দু ঘোষ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Lathicharge
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE