Advertisement
E-Paper

বিমলার দেহ সৎকারে এগিয়ে এলেন মহিদুলরা

বিমলাদেবীর দেহ সমাধি দেওয়ার জন্য মাটি কাটার কাজেও হাত লাগান জয়নালরা।

নির্মল বসু 

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২১ ০৫:০৭
মানবিক: বৃদ্ধার দেহ সৎকারের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন মহিদুলরা।

মানবিক: বৃদ্ধার দেহ সৎকারের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন মহিদুলরা। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়।

জ্বরে আক্রান্ত বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছিল দেগঙ্গার বিমলা দাসের। করোনার আতঙ্কে দাসবাড়ির কাছে ঘেঁষতে চাননি পরিজনেরা। বৃদ্ধার দেহ কাঁধে নিয়ে রীতি মেনে তা সমাধিস্থ করলেন মহিদুল ইসলাম, সিদ্দিক আলি, আবু সাহিদ, জসিমুদ্দিন, আশিফুল ও জয়নালের মতো পড়শিরা।

চাকলা পঞ্চায়েতের উত্তর সুবর্ণপুর গ্রামের দাসপাড়ার বাসিন্দা বছর ষাটের বিমলাদেবী জ্বরে ভুগছিলেন দু’সপ্তাহ ধরে। বুধবার তাঁর করোনা-পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। এ দিন ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়। বিমলাদেবীর পরিবারের আরও পাঁচ সদস্য জ্বরে ভুগছেন।

মৃতার ছেলে দেগঙ্গা থানার সিভিক ভলান্টিয়ার রামচন্দ্র বলেন, ‘‘মায়ের মৃত্যুর খবর জানাজানি হতে প্রতিবেশীদের অধিকাংশই আমাদের বাড়ি আসতে চাননি। তাঁদের আশঙ্কা, বাড়িতে এলে করোনা হতে পারে। মায়ের দেহ পড়ে থাকে বাড়িতেই।’’

মৃত ব্যক্তির দেহ সমাধিস্থ করাই রীতি দাস পরিবারের। রামচন্দ্রের কথায়, ‘‘কী ভাবে মায়ের দেহ সমাধিস্থ করব, তা ভেবে পাচ্ছিলাম না। এই দুঃসময়ে এগিয়ে আসেন প্রতিবেশী মুসলিম যুবকেরা। তাঁরাই মায়ের দেহ কাঁধে তুলে নেন।’’ করোনা-বিধি মেনে দেহ বার করা হয়। পিপিই কিট পরে এসেছিলেন মহিদুলেরা। শববাহী খাটে তোলা হয় বিমলাদেবীর দেহ। কাঁধ দেন সাহিদ-সিদ্দিকরা। তখন রামচন্দন্দ্রের চোখ উপচে জল গড়াচ্ছে।

বিমলাদেবীর দেহ সমাধি দেওয়ার জন্য মাটি কাটার কাজেও হাত লাগান জয়নালরা। তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন নিতাই দাস, কানাই দাস, সঞ্জয় দাস, নিশি দাসের মতো স্থানীয় কয়েকজন। নিতাইদের কথায়, ‘‘করোনায় যে ভাবে প্রত্যেক দিন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, তাতে, ইচ্ছা থাকলেও আক্রান্তের বাড়ি কিংবা দেহ মৃতের দেহ সৎকারের স্থানে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না অনেকের। তবে জসিমুদ্দিনদের মাটি খুঁড়তে দেখে ঘর বসে থাকতে পারেনি। আমরা সকলে এক পরিবারের নই। কিন্তু মেলবন্ধন কোনও দিন নষ্ট হবে না।’’

স্থানীয় কুমারপুর হাইস্কুলের শিক্ষক মিরাজুল হোসেন বলেন, ‘‘লোকের অভাবে পাড়ার এক বাসিন্দার দেহ সমাধিস্থ করা হবে না, তা কখনও হতে পারে না। তাই, বৃদ্ধার ছেলের মুখে সব শুনে মহিদুল, সিদ্দিক, আবু সাহিদ, জসিমুদ্দিনদের নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম।’’

২০১৭ সালে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল রামচন্দ্রের স্ত্রী রত্নাদেবীর। তিনি তখন অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় সে দিনও প্রতিবেশীদের অনেকে দাসবাড়িতে আসেননি। সে কথা আজও ভুলতে পারেননি রামচন্দ্র। এ দিনও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় তাঁর মনের ভার কিছুটা বেড়েছিল। রামচন্দ্রের পিঠে হাত রেখে সাহিদ-জসিমুদ্দিনকে বলতে শোনা যায়, ‘‘সে দিনও কেউ না কেউ এসেছিল। আজ আমরা এসেছি। মন খারাপ করতে নেই।’’

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, আগে হাসপাতালে নিয়ে গেলে হয়তো বিমলাদেবীর মৃত্যু হত না। দাস পরিবারের অন্যদের দ্রুত করোনা-পরীক্ষা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে জানানো হয়েছে।

COVID19 cremation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy