Advertisement
E-Paper

ঘরের মেঝে থেকে দেহ তুলে কবরে

টুম্পার বাড়ি কুলপির কাটরা মনোহরপুর গ্রামে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস ছ’য়েক আগে প্রতিবেশী যুবক, টোটো চালক বাদশা শেখের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। বিয়ের সময়ে পণের দাবি না থাকলেও মাস কয়েক পর থেকে পণ চেয়ে মেয়ের উপরে অত্যাচার শুরু হয় বলে অভিযোগ। 

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৮ ০২:২৬
উদ্ধার: খোঁড়া হচ্ছে মেঝে। ছবি: দিলীপ নস্কর

উদ্ধার: খোঁড়া হচ্ছে মেঝে। ছবি: দিলীপ নস্কর

শ্বশুরবাড়ির ঘরের মেঝে খুঁড়ে সেখানে পুঁতে রাখা হয়েছিল এক তরুণীর দেহ। বাপের বাড়ির লোকের অভিযোগ ছিল, খুন করা হয়েছে সেরিনা বিবি ওরফে টুম্পা নামে ওই তরুণীকে। তাঁরাই কুলপির গ্রামে টুম্পার শ্বশুরবাড়ির ঘরের মেঝে খুঁড়ে পুঁতে দেন দেহ। শ্বশুরবাড়ির লোককে ভিটে ছাড়া করাই ছিল মেয়ের আত্মীয়-পরিজনের উদ্দেশ্য।

এ ভাবে লোকালয়ের মধ্যে দেহ পুঁতে রাখায় আপত্তি ওঠে নানা মহলে। বিষয়টি গড়ায় আদালত পর্যন্ত। কিন্তু জনরোষে ভয়ে এলাকায় ঢুকে দেহ উদ্ধারই করতে পারছিল না পুলিশ। শেষমেশ শুক্রবার ডায়মন্ড হারবার আদালতের নির্দেশে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দেহ উদ্ধার করে কবরস্থ করার ব্যবস্থা করল পুলিশ।

টুম্পার বাড়ি কুলপির কাটরা মনোহরপুর গ্রামে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস ছ’য়েক আগে প্রতিবেশী যুবক, টোটো চালক বাদশা শেখের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। বিয়ের সময়ে পণের দাবি না থাকলেও মাস কয়েক পর থেকে পণ চেয়ে মেয়ের উপরে অত্যাচার শুরু হয় বলে অভিযোগ।

১৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে টুম্পা বাপের বাড়িতে আসেন। মা মেহেরজানকে জানিয়েছিলেন, জামাই ২০ হাজার টাকা চেয়েছে। কিন্তু এত টাকা দরিদ্র পরিবারটির পক্ষে সম্ভব ছিল না। টুম্পা খালি হাতেই শ্বশুরবাড়িতে ফেরেন।

ওই রাতেই ১১টা নাগাদ টুম্পার ভাসুর সুভান শেখ ওরফে লাল্টুর কাছে থেকে বাপের বাড়ির লোকজন জানতে পারেন, মেয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে। আত্মীয়েরা গিয়ে দেখেন, বিছানায় দেহ পড়ে রয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে পাঠায়।

পর দিন, ১৮ সেপ্টেম্বর মর্গ থেকে টুম্পার দেহ গ্রামে ফিরতেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে এলাকা। ৭-৮টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়। ইটের দেওয়াল, টালির ঘরের বাড়িতে ভাঙচুর চলে। লোকজন তখনই সিদ্ধান্ত নেয়, মেয়েকে যখন বাদশারা ঘর করতে দিল না, তখন ওই বাড়িতেও তারা আর পা রাখতে পারবে না। সেই মতো শ্বশুর বাড়ির একটি ঘরের পাকা মেঝে খুঁড়ে কবর দেওয়া হয় টুম্পাকে। ঢোকার দরজা ও ইট-বালি-সিমেন্ট দিয়ে গেঁথে দেওয়া হয়। পুলিশের সামনে ওই ঘটনা ঘটলেও সে সময়ে বাধা দেওয়ার সাহস করেনি তারা।

পরে পুলিশের দ্বারস্থ হন টুম্পার আর এক ভাসুর রাজা শেখ। পুলিশের কাছে তিনি লিখিত অভিযোগে তিনি জানান, ঘরের মধ্যে দেহ পুঁতে রাখায় গন্ধে এলাকায় দূষণ ছড়াচ্ছে। জনবসতি এলাকার এ ভাবে ঘরে দেহ কবর দেওয়া যায় না।

মামলা ওঠে ডায়মন্ড হারবার আদালতে। বিচারক ক’দিন আগে রায়ে জানান, ঘর থেকে দেহ তুলে অন্যত্র কবর দেওয়া হোক। পুলিশ সেই নির্দেশ পেয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দেহ তোলার জন্য ডায়মন্ড হারবার মহকুমাশাসকের কাছে আবেদন করে। মহকুমাশাসক কুলপি ব্লকের বিডিও সঞ্জীব সেনকে এই দায়িত্ব দেন।

শুক্রবার সকালে সরকারি আধিকারিকদের উপস্থিতিতে ঘরের মেঝে খুঁড়ে দেহ তোলা হয়। বাড়ির অদূরেই নির্দিষ্ট জায়গায় দেহ কবরস্থ করা হয়। গন্ডগোলের আশঙ্কায় সকাল থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন ছিল এলাকায়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন টুম্পার বাপের বাড়ি ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। সমস্ত বিষয়টি ভিডিয়োগ্রাফি করা হয়েছে পুলিশের পক্ষে। তা আদালতে জমা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনও হাতে আসেনি। কী কারণে মৃত্যু হল টুম্পার, তা এখনও জানা যায়নি। তদন্ত চলছে।

তবে মেয়ের কাকা নাজিমুদ্দিন শেখের খুনের অভিযোগের ভিত্তিতে স্বামী বাদশা শেখ ও শাশুড়ি মাফিয়া বিবিকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা জেল হেফাজতে। টুম্পার শ্বশুর ও ভাসুরের স্ত্রী পলাতক।

Grave Dead Body Court Dowry
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy