E-Paper

ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করেছিলেন ডাকু, তোপ সিপিএম নেতাদের

সত্যসেবীর প্রশ্ন, বর্তমান পুরবোর্ডও বা এ নিয়ে কী পদক্ষেপ করছে? বতর্মান পুরপ্রধান গোপাল শেঠ এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:১৩
ইডির হাতে গ্রেফতার শঙ্কর।

ইডির হাতে গ্রেফতার শঙ্কর। —নিজস্ব চিত্র।

রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা তৃণমূল নেতা শঙ্কর আঢ্য (ডাকু)। তাঁর ‘উপযুক্ত শাস্তি’র দাবিতে এ বার পথে নামল সিপিএম। বুধবার বিকেলে বনগাঁ শহরে হীরালাল মূর্তি এলাকায় দলের কার্যালয় থেকে মিছিল শুরু হয়। মিছিল বনগাঁ শহর প্রদক্ষিণ করে। ছিলেন দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সত্যসেবী কর, বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক পঙ্কজ ঘোষ, সিপিএমের বনগাঁ শহর এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুমিত কর প্রমুখ।

মিছিলের আগে সিপিএম কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, শঙ্কর পুরপ্রধান থাকাকালীন বনগাঁ শহরে ত্রাসের রাজত্ব, আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছিলেন। মানুষ ভয়ে মুখ খুলতে পারতেন না। তোলাবাজি, খুনখারাপি— কিছুই বাদ যায়নি। সত্যসেবী শঙ্করের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কয়েকটি অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘বনগাঁ থানার সামনে শঙ্কর একটি জলাজমি বুজিয়ে ভরাট করে বিল্ডিং করেছিলেন। সেখানে এখন হোটেল তৈরি হয়েছে। পুরসভার টাকায় তৈরি ওই বিল্ডিং কাউকে ৯৯৯ বছরের জন্য লিজ়ে দেওয়া হয়েছে। এটা করা যায় না, সম্পূর্ণ বেআইনি।’’ সত্যসেবীর প্রশ্ন, বর্তমান পুরবোর্ডও বা এ নিয়ে কী পদক্ষেপ করছে? বতর্মান পুরপ্রধান গোপাল শেঠ এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। পুর প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৯৯৯ বছরের লিজ়ে দেওয়ার সংস্থান পুরআইনে নেই। লিজ়ের পাশাপাশি বছরে পুরসভাকে ৫ হাজার টাকা ভাড়া দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। তবে বর্তমান পুরবোর্ড ওই টাকা নেয় না। পুরপ্রশাসন বিষয়টি অনেক দিন আগেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে।

সত্যসেবীর আরও অভিযোগ, শঙ্কর পুরপ্রধান থাকাকালীন বাংলাদেশে পণ্য বাণিজ্যের জন্য যত ট্রাক বনগাঁ শহরের মিলনপল্লির পার্কিংয়ে আসত, সেই সব ট্রাকের মধ্যে কোন ট্রাক আগে পেট্রাপোলে যাবে, তার ভিত্তিতে ট্রাক প্রতি হাজার হাজার টাকা তুলতেন শঙ্কর। শঙ্করকে ‘ডন’, ‘মাফিয়া’ বলেও মন্তব্য করেন সত্যসেবী। বলেন, ‘‘শঙ্কর যা টাকা
লুট করেছেন, তা দিয়ে রাজ্য সরকারের বাজেট তৈরি হয়ে যেতে পারে!’’
শঙ্কর লুটের টাকা দুবাইয়ে পাঠিয়েছেন বলে তাঁর অভিযোগ। সিপিএম
নেতা পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ‘‘শঙ্করকে নিয়ে তদন্ত আরও গভীরে গিয়ে
করতে হবে।’’

সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূলের ‘উপর মহলের’ প্রশয় ছাড়া শঙ্করের পক্ষে এই দুর্নীতি করা সম্ভব ছিল না। সিপিএমের বনগাঁ শহর এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুমিত করের বক্তব্য, ২০২১ সালে শঙ্কর বিধানসভায় প্রার্থী হতে না পেরে অনুগামীদের দিয়ে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়েছিলেন। তারপরেও তৃণমূল গত পুরভোটে তাঁর স্ত্রীকে টিকিট দেয়। ভাইস চেয়ারম্যান করে। সম্প্রতি তৃণমূলের যে জেলা কমিটি তৈরি হয়েছে সেখানে শঙ্করকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। সুমিতের কথায়, ‘‘তৃণমূলের পক্ষে শঙ্করকে অস্বীকার করা অসম্ভব। শঙ্করের মাথা কালীঘাট পর্যন্ত। তাই মাথা পর্যন্ত গ্রেফতার করতে হবে।’’

সিপিএমের বক্তব্যের বিষয়ে তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস পরে বলেন, ‘‘২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত শঙ্কর যখন পুরপ্রধান ছিলেন, তখন কেন সিপিএম প্রতিবাদ করেনি। তখন তাঁরাও যোগসাজশে ছিলেন।
যা ব্যবস্থা নেওয়ার (শঙ্করের বিরুদ্ধে) তা তৃণমূলই নিয়েছিল। তার অনেক প্রমাণ আছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Shankar Adhya Bangaon

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy