Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Basirhat

দুষ্কৃতীরা ঘোরে বুক ফুলিয়ে, ভয়ে মেয়েরা

অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রে পুলিশ ঠিকমতো ধারা প্রযোগ করে না। ফলে অভিযুক্ত গ্রেফতার হয় না। আবার গ্রেফতার হলেও আদালতে অভিযোগ প্রমাণ করা যায় না।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:৫২
Share: Save:

পাচার। উদ্ধার। কটূক্তি।

নাবালিকা হোক বা সাবালিকা। শৃঙ্খলটা মোটের উপর এক। কখনও অভিযুক্ত বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়। হুমকি দেয়। ভয়ে, লজ্জায় পথ চলা হয় দায়। কখনও অভিযুক্ত গ্রেফতার হয় বটে। ৯০ দিন জেলও খাটে। তারপর জামিন পায়। ফের শুরু হয় চোখ রাঙানো, মামলা তোলার হুমকি। কিছুতেই কিছু না হলে হাওয়ায় ‘বাছাই করা’ শব্দ ছুড়ে দেওয়া তো রয়েছেই। পড়শির বাঁকা চাহুনিতে ফের ঘরে দোর দেয় কিশোরী, তরুণী, যুবতী।

বসিরহাটের বাঁশঝাড়ি এলাকার এক নাবালিকাকে বছর খানেক আগে দিল্লিতে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ নাবালিকাকে উদ্ধার করে গ্রেফতার করেছিল অভিযুক্তকে। ৯০ দিন পরে জেল থেকে ছাড়া পায় সে। ফিরে এসেই স্বমূর্তি নেয় অভিযুক্ত। পরিস্থিতি এখন এমন যে, ওই নাবালিকার ঘরে সামনে মোতায়েন করতে হয়েছে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে।

স্কুলের পথে অপহরণকারীদের হাতে পড়ে মুম্বইয়ে পাচার হয়ে গিয়েছিল এক নাবালিকা। ঠাঁই হয়েছিল সেখানকার একটি যৌনপল্লিতে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং পুলিশের চেষ্টায় শেষপর্যন্ত বাড়ি ফেরে সে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বর্তমানে তার পুরনো স্কুলে দশম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় রাস্তায় বার হলে হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে ওই নাবালিকাকে।

হাসনাবাদের এক যুবতীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সুরাত নিয়ে গিয়েছিল এক যুবক। প্রথমে হোটেলে কাজে লাগানো হয়। পরে যৌন পেশায়। বহু চেষ্টা করে পালিয়ে আসেন ওই যুবতী। অভিযোগ করেন। অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়নি। ফলে চলছে কটূক্তি। ওই যুবতীর কথায়, ‘‘সঠিক ভাবে আইনি সাহায্য না পেলে আমাদের মত বহু মেয়েকে এ ভাবে অন্ধকার জগতে হারিয়ে যেতে হবে।’’

উদাহরণ রয়েছে ভুরিভুরি। কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন এমন হচ্ছে? অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রে পুলিশ ঠিকমতো ধারা প্রযোগ করে না। ফলে অভিযুক্ত গ্রেফতার হয় না। আবার গ্রেফতার হলেও আদালতে অভিযোগ প্রমাণ করা যায় না। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির অভিযোগ, পাচার যে হয় তাকে প্রমাণ করতে হয় সে পাচার হয়ে গিয়েছিল। অথচ যে পাচার করে তাকে প্রমাণ করতে হয় না যে সে পাচারকারী। সঠিক ধারা প্রয়োগ না করার অভিযোগ মানতে নারাজ পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অভিযোগের ধরনের উপর নির্ভর করে ধারা প্রয়োগ। ভুল ধারা দিলে আদালতে ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হবে পুলিশকে। তবে এটা ঠিক, অভিযোগকারীকে ভুল বোঝানো হয়। তাই ধারার সঠিক প্রয়োগ হয় না।’’

সমস্যা আরও রয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির অভিযোগ, অনেক সময় সঠিক ধারা প্রয়োগ না হলে উদ্ধার হওয়ায় পর মহিলারা সরকারি অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।

সমাজ মানে না। অভিযুক্ত গ্রেফতার হয় না। মেলে না সরকারি সাহায্য। পাচার শৃঙ্খলের দুষ্টচক্র চলতেই থাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Basirhat Criminals
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE